মুক্তকথা নিবন্ধ।। জীবনে কখনও যদি ভারত বা বাংলাদেশের কোন রেঁস্তোরায় খেতে যান তা’হলে কিছু কিছু বিষয় নজরে রাখতে হবে। ঐসব দেশের রেঁস্তোরা ব্যবসায়ীগনের প্রধান ও প্রথম লক্ষ্য থাকে লাভের দিকে। একেবারে উপর দরজার রেঁস্তোরা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সকল রেঁস্তোরা, সে দেশী মালিকানার হোক বা বিদেশী মালিকানার হোক, কোন ব্যক্তিমালিকানার হোক বা কোম্পানী মালিকানার হোক সকলেরই প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা। সেবা, কারো কারো কাছে দ্বিতীয় আবার কারো কারো কাছে একেবারে সর্বনিম্ন মানের লক্ষ্য।
একটি বিষয় খেয়ালে রাখতে হবে তা’হলো এসকল রেঁস্তোরার সবচেয়ে নিম্নমানের কাজ হলো বিক্রির পর থেকে যাওয়া খানা-খাদ্য পরের দিন বিক্রি করা। বিশেষ কোন কারণ না হলে পুরনো খাদ্য অর্থাৎ ১দিন আগের তৈরী খাদ্য তারা গরম করে বিক্রি করে। এমন চল বড় বড় নামী-দামী রেঁস্তোরায় পর্যন্ত রয়েছে। অবশ্য বড় বড় নামী-দামী রেঁস্তোরাগুলো খুবই গোপনে সতর্কতার সাথে এ কাজ করে থাকে।
এ ব্যবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার একমাত্র রাস্তা সপ্তাহ শেষের দু’একদিন এসব দেশের কোন রেঁস্তোরায় খেতে না যাওয়াই ভাল। গ্রাহকের আনাগোনা কম এমন রেঁস্তোরায় না যাওয়া খুবই উত্তম। কারণ ওই একটাই। সপ্তাহ শেষের থেকে যাওয়া পুরনো খানা-খাদ্য খাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। একমাত্র এক্ষুনি তৈরীকরে রাখা ‘বুফে’ খাবারের উপর আস্তা রাখা যায়। তাও শতকরা ৮০ভাগ। তবে দাম দিতে হবে অনেক।
খাদ্যের বিষয়ে স্বাস্থ্য সবসময়ই প্রধান ও মূখ্য বিষয়। অবশ্য বড় বড় ৫তারা বা ৬-৭তারা হোটেলের রেঁস্তোরাগুলোতে স্বাস্থ্য বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। তাদের একটি সাধারণ মানদন্ড রয়েছে। তার পরও এসব বড় বড় রুই-কাতলাদেরও মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালতের কাছে অতীতে ধরা পড়তে দেখা গেছে। ১দিন আগের তৈরী খাবারকে এসব দেশের মানুষ কখনই নষ্ট খাবার হিসেবে দেখে না। বরং কিছু কিছু রসনা তৃপ্তিকারী সুস্বাধু খাবার একদিনের পুরানো হলে তার স্বাদ আরো বেড়ে যায় বলেই তাদের অভিমত এবং সে ধারণা থেকে একদিনের পুরানো খাবার কখনই বর্জনীয় নয় তাদের কাছে।
মাছ শুটকি বানিয়ে খাওয়ার প্রচলন দুনিয়ার বহু দেশেই আছে। একইভাবে মাংসকে পুরনোকরে খাওয়ার প্রচলনও বহু দেশের বহু মানব সমাজেই আছে। সে বিষয়ে এ লিখা নয়। মাছ শুকিয়ে শুটকি বানানো হয়। সে শুটকি রান্না করার পর একদিন রাখলে শুটকি খুবই মজাদার হয়, এটিই এসব দেশে সর্বসাধারনের গ্রহনযোগ্য খাদ্যধারা। মাংসের বেলায়ও এমন ধারা প্রচলিত আছে।
খাদ্য প্রশ্নে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে কোন ধরনের উদারতার স্থান থাকা কোন ভাবেই উচিৎ নয়। বরং আত্মহত্যার শামিল।
সকল রেঁস্তোরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই প্রয়োজন এবং এ কাজে অগ্রাধিকার থাকা অতীব জরুরী। এমন কাজ ব্যয়সাধ্যতো অবশ্যই। এসকল রেঁস্তোরার পাকশী বা রাধুনী রান্না কাজের এক ফাঁকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলেন। ফিরে এসে তিনি আবার রান্নাকাজে মনোযোগী হলেন। তিনি তার হস্ত স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার করে এসেছেন কি-না তা দেখার কোন বিধিসম্মত ব্যবস্থা ওইসব রেঁস্তোরায় থাকে না। রাঁধুনি তার মাথায় টুপি দিয়েছেন কি-না তা তদারকি করার কোন বিধিসম্মত ব্যবস্থা এসব রেঁস্তোরায় থাকে না। এমনও অনেক রেঁস্তোরা আছে যেখানে প্রবেশ করেই দেখবেন কোন একজন কাজের লোক রেঁস্তোরার খোলা মেঝেতে বসে বিভিন্ন জাতের সব্জি কুঁচি করছেন। সেকাজে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি বিষয়ে তার কোন ধারণাই নেই। তিনি সারাদিনই বসে বসে, শত মানুষের আসা-যাওয়ার মাঝে সব্জি কুঁচি করে যাচ্ছেন অবিরাম। একটু উন্নতমানের হলে, দেখবেন হয়তো কেউ টেবিলে বসে সব্জিকুঁচি করছেন। অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় বানানো সে সব্জি দিয়ে তরকারী রান্না হচ্ছে; সালাদ তৈরী হয়ে গ্রাহকের পাতে যাচ্ছে। তদারকির কেউ নেই। এভাবে অস্বাস্থ্যকর সালাদ খাওয়ার অর্থই হলো অসুখ ডেকে আনা।
রেঁস্তোরার সামনে পথের পাশে বসে বা দাঁড়িয়ে ধূলা-বালির মাঝে রুটি-পরোটা বানানো সেসব দেশে প্রচলিত প্রথার মত। রাজধানী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোট-বড় শহরের অগণিত রেঁস্তোরায় এমন রুটি-পরোটা বানানো অবাধে চলে আসছে সেই কতকাল আদি থেকে তার হিসেব বের করা আদৌ সম্ভব নয়। এমন খোলা যায়গায় খাদ্য-সামগ্রী তৈরীর মূলনীতি হলো- গ্রাহকের সামনে টাটকা খাদ্য বানিয়ে বিক্রি করা। গ্রাহকমন জয় করে ব্যবসা বাড়ানোর তাগিদে এমন সুসভ্য কাজ করতে গিয়ে গ্রাহকের জীবনের যে বারোটা বাজিয়ে দেয়া হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখার জ্ঞানই নেই এসব রেঁস্তোরা মালিকের। এসব দেশে সরকারও খুব একটা ঘাটাতে চান না, নতুন-পুরাতন-নির্বাচন জাতীয় নানা কারণে।
এসব দেশের মেকডোনাল্ড, কেএফসি বা ডমিনো থেকেও মাংসজাতীয় কোন খাবার না খাওয়া খুবই ভাল। এরাও মাংসের পুরানো অবস্থা বা জরাজীর্ণতা লুকিয়ে রাখতে বহু কিছু ব্যবহার করে থাকে যা মানব শরীরের জন্য ভয়ঙ্কর, ক্ষতিকারকতো বটেই। এসব বহুজাতিক খাদ্য ব্যবসায়ী, গ্রাহক স্বাস্থ্যের বিষয়ে যত্ন নেয়ার কাজে খুব কমই নজর দেয়। তাদের হীমাগারে পাওয়া যাবে বহু পুরানো অসুন্দর নমুনার মাংস পিন্ড। কত যে পুরানো, চেহারা থেকে অনুমান করা যায়। সাদামাটা চোখে ধরা পড়েনা। মাংসের অভক্ষন অবস্থা লুকিয়ে রাখতে বিশেষ বিশেষ কিছু মিশ্রন ব্যবহার করা হয়। বহু দূরের পথ আমেরিকা থেকে গোপন এসব মিশ্রন পাঠানো হয় যা ব্যবহারে নষ্ট মাংস সাদামাটা চোখে ধরা পড়েনা।
লন্ডনের ভারতীয় রেঁস্তোরায় কাজ করেন এমন বহুকর্মীকে আমি চিনি যাদের কাছে থেকে শুনেছি, এখানেও গ্রাহকের ফেলে যাওয়া অনেক খাদ্য দ্বিতীয়বার বিক্রিকরা হয়। অবশ্য সে বেশ অনেক দিন আগের কথা। তথ্যসূত্র: কৌড়া ও নিজ থেকে সংগৃহীত