লিখেছেন বশীর উদ্দীন আহমেদ।। বাংলাদেশে ভোট প্রসঙ্গে কিছু বলার আগে একটি উপলব্দির কথা এখানে বলা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি। পরিবেশ বা স্থানিক অবস্থা যেকোন বিষয়ের মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সময় ও ঘটনা কোন কোন মানুষকে উপরে তুলে আবার কোন কোন মানুষকে আলোচনার বাইরে ঠেলে দেয়। এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান দুই মেরুর মানুষ। মোকাব্বির খান প্রবাসী, ডঃ কামাল হোসেনের দলের বিলেত প্রতিনিধি। বলা যায় কামাল হোসেনের আগাগোরা শিষ্য। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি কামাল হোসেনের বিভিন্ন দায়-দায়ীত্ব পালন করে আসছেন। অবশ্য তার কন্যাকে কামাল সাহেবের চেম্বারে উকালতিতে দিয়েছেন এমন সুখবর একসময় তিনি নিজেই বলেছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার ভূমিকা অনোল্লেখ্য। শুধু সময়ের হের ফেরে জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগ দ্বন্দ্বের সুফল তিনি তার ঘরে তুলে নিতে সক্ষম হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আর মোকাব্বের খান দুই ঘরানার মানুষ। মনসুর একজন প্রিয়দর্শী রাজনীতিক। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সারা দেশের কোটি কোটি মানুষের মাঝে কেবলমাত্র কাদের সিদ্দীকী ও সুলতান মনসুর হ্ত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। মনসুর ছাত্রলীগের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার একটি রাজনৈতিক জীবনধারা রয়েছে। কিন্তু দূরন্ত সময় কখন যে কার পক্ষ নেয় একমাত্র দূরদর্শীরাই বলতে পারেন।
পোস্টমোর্টেম মৌলবীবাজার-২ কুলাউরা আসন- এ আসনে সুলতান মনসুর বিসমিল্লাহ থেকেই বলে আসছেন তিনি ঐক্যফ্রন্টের কেউ না! মুজিব কোট গায়ে দিয়ে জয় বাংলা বলে নির্বাচন করেছেন! অপরদিকে বিএনপির শাহীনকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা অন্তর থেকে মেনে নিতে পারেননি, পারার কথাও নয়। এছাড়া সুলতানের সাথে রয়েছে কুলাউড়া আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নাড়ীর সম্পর্ক। এখানেও আওয়ামীলীগই ছিল আসল ফ্যাক্টর! সুলতান বারবার বলেছেন আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। এমন বলার পরও বিএনপি তাকে ভোট দিয়েছে কারণ তাদের নেতা শাহীন ততক্ষণে নৌকায় উঠে গেছেন! এবং একারণেই কুলাউড়ায় নৌকা ডুবেছে! আর ওসমানীনগরে নৌকা তো ছিলই না। তাই এ দুই এমপি’র নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট বা গণ ফোরামের কোন একক কৃতিত্ব নেই এবং থাকার কথা নয়। থাকলে রব, মান্না, পার্থ, রণির মত বড় বড় নেতা কপোকাত হতেন না!
মোকাব্বির খান- সম্প্রতি সিলেট-২(ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনের সাংসদ জনাব মোকাব্বির খান শপথ নেয়ার পর ডঃ কামাল হোসেন ও ফখরুল মহোদয়ের প্রতিক্রিয়া দেখে খালি চোখে মনে হতে পারে উনাদের দয়ায় মোকাব্বির খান এমপি হয়েছেন! আসলে তা’ মোটেই সঠিক নয়। যদি তাই হত তাহলে আবারো বলতে হয় যে, রব, মান্না, পার্থ কিম্বা রণির মত বাঘা বাঘা নেতা ও এক্স এমপিরা ধরাশায়ী হতেন না! মূলতঃ সিলেট-২ আসনটি বারবার জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন না দিয়ে মোকাব্বির খানকে মৌন সমর্থন দেন, নীরব ভোটের মাধ্যমে। একপর্যায়ে মোকাব্বির সর্বদলীয় প্রার্থী হয়ে যান এবং জয়লাব করেন। বাস্তবে যারা এলাকায় থেকে অবস্থা দেখেছেন তারা এভাবেই বিবেচনা করেন। এতেকরে পরিস্থিতি বিবেচনায় এভাবে বলা অনুচিত হবেনা যে মোকাব্বির খানের শপথ গ্রহন সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত হয়েছে! বৈরী পরিস্থিতি এবং পরিবেশে তার এলাকার সম্মানিত ভোটারগণ তার প্রতি যে আস্থা, বিশ্বাস রেখেছেন তার সঠিক মূল্যায়ন না করে অন্য কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করলে তা’ হতো দ্বায়ীত্বে অবহেলা ও জনগণের সাথে প্রতারণার সামিল। এখানে সকল কৃতিত্ব জনগণের, ঐক্যফ্রন্টের একার নয়! বস্তুতঃ শুধুমাত্র ঐক্যফ্রন্ট বা গণফোরামের কারণে তিনি বিজয়ী হননি। মনে রাখা উচিৎ, তিনি ঐক্য ফ্রন্টের ধানের শীষ নিয়েও নির্বাচন করেননি! এই আসনে নৌকার কোন প্রার্থী না থাকায় তারা মোকাব্বির খানকেই মন্দের ভাল হিসেবে বিবেচনা করেছেন। মোকাব্বির খানের বিজয়ের মূল উপাখ্যান এখানেই নিহিত।
তাই এরা বেইমানী করেছে নাকি ইমানদার আছে এর বিচারের মালিক তাদের স্ব স্ব এলাকার জনগণ। ডঃ কামাল বা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয় বলেই বিজ্ঞজন মনে করেন। এই বিজয়ের শতভাগ কৃতিত্ব তাদের এলাকার ভোটারদের। এ দু’জনের ভোট বৈতরণী পাড় হয়ে যাবার পেছনে ঐক্যফ্রন্ট বা গণ-ফোরামের কোন একক কৃতিত্বের প্রশ্নই উঠেনা! তবে ওই একটি কথা বলা যায়- দূরন্ত সময় কখন যে কার পক্ষ নেয় আগাম বলা খুবই কঠিন।