হাওর হাকালুকি
হাওর অর্থাৎ বিশাল এলাকা জুড়ে জলাভূমি। সে জলের কোথায়ও গভীরতা আছে আবার বেশীর ভাগ অঙ্গেই তার অগভীর জল। সে অগভীর জলের উপর দিয়ে বড় জাহাজ চলতে পারে না তবে বিশাল আকারের সওদাগরী নৌকা চলতে পারে নির্বিগ্নে। হাওর সাধারণতঃ প্রাকৃতিক জলাধার। এ বিশ্ব ভূখণ্ড সৃষ্টির সময় থেকেই এসকল হাওরের সৃষ্টি বলে জ্ঞানী-গুণীদের ধারনা। আবার বহু হাওর, ভূকম্পনের কারণে সৃষ্ট বলেও অনেকেই মনে করেন। বইপুস্তক ঘেঁটেঘুটে যতদূর জানা যায় হাকালুকি হাওর সে নমুনায় এক ভূকম্পনের কারণে সৃষ্ট বলে প্রাচীন মত পাওয়া যায়।
অচ্যুত চরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি কর্তৃক ১৯১০ ইংরেজী সনে প্রকাশিত তার পুস্তক ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রাকৃতিক বিবরণে হাকালুকি হাওর নিয়ে জনশ্রুতির উল্লেখ করে লিখেছেন- “অতি প্রাচীনকালে ঐ স্থান সমভূমি ছিল…”। এর পর ধর্মকে জড়িয়ে জনশ্রুতির নামে তিনি যা লিখেছেন তা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়নি বরং মনে হয়েছে গবেষণায় না গিয়ে তিনি ধর্মাশ্রয়ী জনশ্রুতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে তার শেষের দিকের কথাগুলি আমার কাছে গ্রহনযোগ্য বলেই মনে হয়েছে। আর তা হলো- “…হঠাৎ দৈব উৎপাত উপস্থিত হইল, এক সঙ্গে ঝড় ও ভূকম্প ভীমবেগে প্রলয়কাণ্ড উপস্থিত করিল, দেখিতে দেখিতে সেই স্থান অদৃশ্য হইয়া গেল। প্রবাদানুসারে সেই স্থানেই হাকালুকি হাওর হইয়াছে।” পরে তিনি তার পাদটিকায় লিখেছেন- “হাকালুকি খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীর বৈদিক তাম্রফলকোক্ত “হাঙ্কলা কৌকিকাং পুরীং” দ্বারা নির্দেশিত ভূভাগ।” কিন্তু ৭ম শতাব্দীর সেই বৈদিক তাম্রফলকে উক্ত “হাঙ্কলা কৌকিকাং পুরীং” যে হাওর হাকালুকি তার যুক্তিযোগ্য কোন তথ্য তিনি দেননি।
|