(৩)
মুক্তকথা সংবাদ কক্ষ।। চরম উগ্রতা, উন্মত্ততা বা হিংস্রতাকে যখন উত্তেজিত বা উদ্দীপ্ত করে এবং একই সাথে শত শত মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয় তখন কি হয়(?)। এ অবস্থায় যদি কোন বিষয় কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার সুযোগ থাকে তা’হলে সেক্ষেত্রে অবস্থা কি হতে পারে(?)। এ ধরনের ঘটনায় দায়ীত্ব কার হবে?
একবার ভাবুনতো, যাদের কাছে খবরটি পৌঁছানো হচ্ছে তাদের কারিগরী বুঝার যোগ্যতা যদি সীমিত হয় বিশেষ করে যে কারিগরী তারা ব্যবহার করছে এবং বৃহত্তর ইন্টারনেট বিষয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা যেখানে খুব কম, সেক্ষেত্রে অবস্থা কি হতে পারে(?)
কোন বিচার ছাড়াই পিটিয়ে মানুষকে হত্যা ভারতে নতুন কিছু নয়। কোন এক তথ্য বিবরণে দেখা গেছে ২০০০ এবং ২০১২সালে ‘ওয়াট্স এপ’ চালু হবার বহু আগে ভারতে বিচারহীনভাবে ২০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ‘ওয়াট্স এপ’-এর কোন কর্মচারী বা কর্মকর্তা আজ পর্যন্ত ওই গ্রামে গিয়ে নিহত মানুষদের কোন খোঁজখবর নিয়েছেন এমন কিছু আজো জানা যায়নি। ফলে বিষয়টি আরো বেড়েছে।
ভারতের একজন কারিগরী ব্যবসায়ী রসমী সিন্হা মনে করেন মানুষকে পিটিয়ে হত্যার বেড়ে যাওয়া প্রবণতার সাথে ‘ওয়াট্স এপ’ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়া ও দ্রুত সংবাদ এবং গুজব ছড়িয়ে দেয়ার মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। “যদিও যা ঘটেছে তার জন্য আপনি মোটেই দায়ী নন। কিন্তু শেষে দেখা যাবে সবকিছুর জন্য দায়ী ওই ‘জনতা’। ‘ওয়াট্স এপ’ নয়।
বিশ্বব্যাপী ‘ইন্টারনেট’ ব্যবহারকারীদের নানাবিদ সমস্যা ও নিরাপত্তা দেখবাল করার সংস্থা “Woog”, “বাজফিড নিউজ”কে বলেছে, বছরের শুরুতে ভারতে যা ঘটেছে, আমরা আতঙ্কিত হয়েছি জনতার এমন ধরনের হিংস্রতা খুনাখুনী দেখে। আমরা আস্তা রেখে বলতে পারি এ খুনোখুনী থামাতে হবে সরকারকেই। আর এ জন্য সরকারকে, সুশীল সমাজকে এবং কারিগরী কোম্পানীগুলোকে কার্য্যকরী ব্যবস্থা নিতেই হবে।
রেডিও বিজ্ঞাপন এবং যেখানে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেখানের কম্যুনিটি লিডারদের মিথ্যা তথ্য সরবরাহের ঝুঁকি, প্রডাক্ট বদল থেকে ‘কার্ব এবিউজ’ নিয়ে ব্যবহারকারীদের ভুল তথ্য প্রচারের ঝুঁকি যে কি হতে পারে তা বুঝাতে হবে।
এসব করেও ‘ওয়াট্স এপ’ ও ভারত সরকার যদি কোন সমাধান খুঁজে পায়, তাও এখন মৃত ও আটক ব্যক্তিগনের বিবেচনায় অনেক দেরীতে হওয়ার একটি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। রাইনপদো গ্রামটি এখন জনশূণ্য। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে কেবলমাত্র পুলিশী জাজ্ঞাসাবাদের ভয়ে। গ্রামে এখন যা আছে তা হলো, গ্রাম কাউন্সিলের পাটাতনে লেগে থাকা মেরে ফেলা মানুষগুলোর ফিকে হয়ে যাওয়া রক্তের দাগ।
কি করে এই রাইনপদো গ্রামে ‘ওয়াট্স এপ’ গেল
স্থানীয় কেউ রাস্তা না দেখালে রাইনপদো গ্রামে পৌঁছা খুবই শক্ত। ওখানে যেতে রাস্তায় কোন চিহ্ন বা ‘মাইল’ ফলক নেই। পৌঁছাতে হলে, ২৩হাজার মানুষের জনবসতি ‘পিমপলনার’ নামের একটি শহরকে পেছনে রেখে, যা ১৬মাইল পূর্বে পড়বে, পশ্চিমুখী আঁকা-বাঁকা রাস্তাকে অনুসরণ করে যেতে হবে। কয়েক মিনিট পরেই বাড়ীঘর কমে যাবে এবং রাস্তাটি ছোট হয়ে কাদামাটির উপর দাগের মত সরু হয়ে আসবে। রাস্তার উভয় পাশেই নাগালি ভুট্টার ক্ষেত ও মাঝে মাঝে ছোট্ট ভাঙ্গাচোরা মাটির ঘর চোখে পড়বে।
ধুল জেলার এক প্রান্তে অবস্থিত পাখীর বাসার মত ঘর বানিয়ে বছরের পর বছর মানুষের জীবন চলছে এখানে এই রাইনপদো গ্রামে। গ্রামটি ভারত সরকারের সবচেয়ে অনুন্নত তালিকার একটি গ্রাম। এখানে গরীব সাধারণ মানুষ পাশের ছোট্ট একটি শহরের বাজারে তাদের একমাত্র ফসল ভুট্টা বিক্রি করে জীবন ধারণ করেই আছে।
তবে ইদানিং সুরাট শহরে গিয়ে এ গ্রামের যুবকরা তাদের রুটি রোজকারের একটা মোটামুটি ব্যবস্থা করতে পেরেছে। সে বিশাল কিছু নয় দিন মজুরের কাজ। সুরাট, রাইনপদো গ্রাম থেকে কমপক্ষে ১০০মাইল দূরের শহর। রাইনপদো গ্রাম যে জেলায় অবস্থিত সেই ‘ধুল’ জেলার এক অফিসিয়েল ওয়েব সাইটের অর্থনৈতিক পর্যালোচনার তথ্যমতে ধুল জেলার মানুষ গড়ে মাসে ১০০ ডলার রোজগার করে। এই পরিমান ভারতের গড় জাতীয় আয়ের (ডলার-১৩৩) অনেক নিচে। অনেক মানুষই বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ করতে পারেনা এ আয় দিয়ে। অনেকেই বেআইনীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বড় লাইন থেকে সরাসরি তার টেনে ঘরে নিয়ে আসে। শতকরা মাত্র ৬৩ভাগ মানুষ লিখতে পড়তে পারে। এর পরেও রাইনপদো গ্রামের যুবকরা একটি ‘এনরয়েড’ স্মার্ট ফোন আর ‘ওয়াট্স এপ’ এর জন্য তীর্থের কাকে মতো হা-হুতাশ করে। রাইনপদের প্রতিবেশী গ্রামের ২১ বছর বয়সের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র সুনিল পপাত ভাইরাম ‘বাজফিড.নিউজ’কে বলেন, “আমার গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষই পড়তে জানে না। ‘ডাটা’, ’www’ কিংবা ‘ইন্টারনেট’ কি তারা জানে না। তারা কেবল জানে ‘ওয়াট্স এপ’ দেখতে এবং ভিডিও শেয়ার করতে।” ‘ওয়াট্স এপ’ ভারতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত একটি ‘এপ’। ‘জিমেইল’ কিংবা ‘ইউটিউব’ থেকেও বেশী। তথ্য থেকে জানা যায় ২০১৭ থেকে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তথ্য সূত্র:বাজফিড.নিউজ