প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ।। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রামে জ্বর ও শ্বাস কষ্টে ১৩ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় শিশুটি অসুস্থ্য অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনা খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিম মৃত শিশুটির নমুনা সংগ্রহ করেছ। ঘটসাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্যোট ্আশেকুল হক ঐ পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টানে থাকতে বলেছেন। এ নিয়ে এলাকায় করোনা আতংক বিরাজ করছে।
রহিমপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মুিজবুর রহমান জানান, কালেঙ্গা গ্রামের লিটন মিয়ার শিশু সন্তান জ্বর, শ্বাসকষ্টে নিয়ে কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়িতে আসার পর বুধবার জ্বর, শ্বাসকষ্টে নিয়ে মারা যায়। মৃত্যুর খবরটি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হককে জানালে তিনি মেডিকেল টিম নিয়ে মৃত শিশুটির বাড়িতে যান। সেখানে মৃত শিশুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শিশুর পরিবারকে হোমকোয়ারেন্টানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এদিকে শিশুর মৃত্যুতে গোটা এলাকায় করোনা আতংক বিরাজ করছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এম, মাহবুবুল আলম ভূইয়া বলেন, মৃত শিশুর নমুনা সংগ্রহ করে করোনার টেস্ট করতে সিলেট পাঠিয়েছি। রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে শিশুটি করোনা আক্রান্ত ছিল কি না।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, শিশুটি করোনা আক্রান্ত কিনা তা এই মুর্হুতে বলা যাচ্ছে না। রিপোর্ট আসার পর বুঝা যাবে। সর্তকতার জন্য পরিবারকে হোমকোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববতী রাজনগর উপজেলাা আকুয়া গ্রামে করোনায় মৃত ব্যক্তির পার্শবতী গ্রাম গোপালনগর হতে এক ব্যক্তি কমলগঞ্জের পতনউষারে শশুড় বাড়িতে অবস্থান করায় ৪টি বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার (৬ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় ২নং পতনঊষার ইউনিয়নের উত্তর পতনউষার মফিজ মিয়ার বাড়িসহ ৪টি বাড়ি লকডাউন করে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশেকুল হক। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা য়ায়, কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী পতনউষার ইউনিয়ন হতে মাত্র ৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত রাজনগর উপজেলার করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির গ্রাম আকুয়া। ওই গ্রামের পাশ্বর্তী গোপালনগর গ্রাম হতে সোমবার সকালে এক ব্যক্তি তার শশুড় বাড়ি উত্তর পতনউষারে মফিজ মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আতংক সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ ও মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে মফিজ মিয়ার পরিবারসহ আশ পাশের ৪টি বাড়ি লকডাউন ঘোষনা করেন। এসময় বাড়ির সীমানায় লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় এবং আশপাশে কেউ যাতায়াত না করার নির্দেশ দেয়া হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, রাজনগরের টেংরা ইউনিয়নটি লকডাউন করা হয়েছে। মৃত ওই ব্যক্তি পাশের গ্রাম গোপালনগর হতে একটি লোক পতনউষারের শশুর বাড়ি আসায় ৪টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। যাতে করে অন্য মানুষের সংস্পর্শে বাড়ির লোকজন না যায়। ৫টি পরিবারকে স্থানীয় চেয়ারম্যান খাদ্য সামগ্রী বাড়িতে পৌছে দিবেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের প্রশাসনিকভাবে পতনউষার ইউনয়িনের উত্তর পতনউষার গ্রামের চারটি বাড়িকে লক ডাউন করে বাড়িগুলোতে লাল পতাকা লাগানোর পর উপজেলার ১২টি গ্রামের গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় গ্রামের প্রবেশ পথ বন্ধ করে লকডাউন করেছেন। গ্রামগুলো হচ্ছে শমশেরনগর ইউনয়িনের সবুজবাগ, শিংরাউলী, মাধবপুর ইউনিয়নেরের মাঝেরগাঁও, শিমুলতলা, আদমপুর ইউনয়িনের তেতইগাঁও, ঘোড়ামারা, পশ্চিম কান্দিগাঁও, আলীনগর ইউনিয়নের আলীনগর চা বাগান, উত্তর তিলকপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি ও কমলগঞ্জ পৌরসভার আলেপুর ও চন্ডীপুর গ্রাম। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও গ্রামে বগিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধের জন্য বিভিন্ন গ্রামের তরুণরা স্বেচ্ছায় নিজ নিজ এলাকা লকডাউন করতে শুরু করছেন।
শমশেরনগর ইউনিয়নের শিংরাউলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন(অব.) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, এ গ্রামেও রাস্তা ব্যবহার করে অবাধে ট্রাক ইট, বালু ও জিমর মাটি পরিবহন করছে একটি চক্র। এ গ্রাম বহিরাগতদের রয়েছে আনাগোনা। গ্রামবাসীদের সু-রক্ষার চিন্তায় গ্রামের ছাত্র, যুবক ও তরুনরা স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যোগে গ্রামের প্রবেশ পথে বাঁশ পুতে ব্যারিকেট সৃস্টি করা হয়েছে। বহিরাগতদের এ সময়ে গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে গ্রামের মানুষজন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বা জরুরী প্রয়োজনে বাহিরে গেলে হাত মুখ ধোয়ে বাহিরে যাচ্ছেন আবার হাতমুখ ধোয়ে প্রবেশ করছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে স্বেচ্ছায় লক ডাউন হওয়া অন্য গ্রামে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক পতনউষার ইউনিয়নের উত্তর পতনউষার গ্রামের চারটি বাড়ির ৫টি পরিবারকে লকডাউনে রাখার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এই পরিবারগুলো করোনাভাইরাস আক্রান্ত নন। তবে তারা রাজনগরের আকুয়া গ্রামের লকডাউন এলাকা থেকে এসেছেন বলেন, আপাতত কিছুদিন আলাদাভাবে থাকতে হবে। সে জন্য এই চারটি বাড়িতে লাল পতাকা লাগানো হয়েছে। আর কমলগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম স্বেচ্ছায় লক ডাউনে যাওয়ার সত্যতাও তিনি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রামবাসীর সু-রক্ষা তারা নিজেরা তা করেছে।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মইদাইল গ্রামে ৪টি ইউনিয়নের ১৮০টি সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় শব্দকর পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। বুধবার সকাল ১১টায় চাল বিতরণ কর্মসুচীর উদ্ভোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ, সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, আলমগীর হোসেন, শব্দকর সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রতাপ শব্দকর, সাধারণ সম্পাদক উপেন্দ্র শব্দকর প্রমুখ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধকালে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও পতনউষার ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মোটরসাইকেল আরোহী ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর ২৮টি মামলা হয়েছে। ২৮টি মামলায় নগদ ২৯ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে এ অভিযান পরিচালনা করেন কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম নাসরিন চৌধুরী।
সহকারি কমিশনারের (ভূমি)-এর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা না মেনে দকোনপাট খেলা রাখা, হেলমেট বিহিন মোটরসাইকেল চালানো ও বিনা কারণে হাট বাজারে ঘুরে বেড়ানোয় শমশেরনগর বাজার ও পতনউষার ইউনিয়নের শহীদ নগর বাজারে যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় মোট ২৮টি মামলা হয়েছে। এই মামলায় নগত ২৯ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়েছে। আবার বিনা কারণে হাট বাজারে ঘোরাফেরায় বেশ কয়েকজন লোককে আটক করে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে পুলিশ ফাঁড়িতে কয়েক ঘন্টা আটকিয়ে পরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
কমলগঞ্জের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম নাসরিন চৌধুরী যৌথ ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে নগদ ২৯ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন এ অভিযান চলবে।