1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ কিছু কথা - মুক্তকথা
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ কিছু কথা

লেখক তামজীদ রশীদ
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৪৩২ পড়া হয়েছে
তামজীদ রশীদ

‘কানেক্টেড বল টেকনোলজি’, একটি নতুন ধরনের ‘সেমি অফসাইড টেকনোলজি’, ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল ব্যয়বহুল ফুটবল বিশ্বকাপ নামিয়েছে কাতার, কিন্তু তারপরও কাতারের হাতে লেগে আছে কালিমাযুক্ত রক্তের লাল দাগ। শেষ পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার অনুরোধ রাখা সত্ত্বেও অনেক তারকা এটা নাকচ করে দিয়েছে, যার মধ্যে দুয়া লিপা কিংবা ২০১০ সালের ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ এর থিম সং গাওয়া শাকিরাও আছেন। বিখ্যাত পপ গায়ক রড স্টুয়ার্ড বলেছেন উনাকে কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য প্রায় ১মিলিয়ন ডলার অফার করা হয়েছিল কিন্তু পরে তিনি তা নাকচ করে দেন কারণ কাতার এমন কিছু কাজ করেছে যা মানার মতো না৷

ব্যঙ্গ করে এটাও বলা হয় কাতার বিশ্বকাপে যে ‘মাস্কোট’ আছে ‘লাইব’ ওইটা নাকি বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম বানানোর সময় যে শ্রমিকরা মারা গিয়েছিল তাদের একটা ভূত। আপনারা হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন অনেক মিম দেখেছেন যেখানে শ্রমিকদের কবরের উপরে সবুজ ঘাসের কার্পেট দিয়ে ফুটবল খেলা চলছে।
আসলে কাতার বিশ্বকাপে কি হচ্ছে, এত টাকা দিয়ে কেনো এত গালি ওরা খরিদ করছে?

চলমান এই বিশ্বকাপ কে বলা হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটবল বিশ্বকাপ। গত ২০১৮ সালের যে বিশ্বকাপ যা হয়েছিল রাশিয়াতে ওইটার তুলনায় ১৬গুণ বেশি খরচ হয়েছে এই বিশ্বকাপে। পুরো বিশ্ব কাপ এর বিভিন্ন স্টেডিয়াম বা অবকাঠামোগুলো বানানোর জন্য কাতার রিপোর্ট করেছে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হয়েছে। কাতারের অর্থমন্ত্রী বলেছেন এই অবকাঠামোগত নির্মাণ করার সময় প্রতিসাপ্তাহে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছিল। আর এটা প্রায় গত কয়েক বছর ধরে হয়ে আসছিলো৷ কিসের মধ্যে এত টাকা খরচ হয়েছিল?

কুলিং সিস্টেমঃ কাতার প্রচন্ড গরমের একটি দেশ। মাঠের মধ্যে খেলোয়ারদেরকে দর্শকদেরকে এবং মাঠকে যথেষ্ট পরিমাণ ঠান্ডা রাখার জন্য এই গরমের মধ্যেও একটা মানানসই তাপমাত্রা রাখার জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রণে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়।

ফুটবল টার্ফঃ ফুটবলের যে ‘টার্ফ’ আছে ওইখানে যে ঘাস আছে এগুলো কিছু বিশেষ নার্সারির মধ্যে উৎপাদন করা হয়েছে। ঘাসের যে বীজ আছে তা বাইরে থেকে আমদানি করা হয়েছে৷ যেটাকে কাতারের এটাতো গরম আবহাওয়ার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত ভাবে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পানি দিতে হয় একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মাঠকে রাখতে হয়, না হলে ওই ঘাস গুলো মারা যায়।

 


ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।

 

বাসস্থানঃ কাতার বিশ্বকাপ দেখার জন্য সারা বিশ্ব থেকে এত এত মানুষ আসতেছে তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা লাগবে এইজন্য কাতার ‘প্রাইভেট ভিলা আইল্যান্ড অ্যাপার্টমেন্ট’ এরকম অনেক কিছু কিনার জন্যে টাকা খরচ করেছে। এমনকি কাতারের রাজধানীর দোহাতে ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে মাত্র একটা ‘একোমোডেশন কমপ্লেক্স’ কিনতে যার নাম ‘দা র্পাল’। যেখানে দোহার মেট্রোরেল কে পুরোপুরি গুছাতে ৩৬বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে যাতে সবাই ঠিকভাবে যাতায়াত করতে পারে। কারণ এখন শুধুমাত্র কাতারের নিজস্ব জনগণের কথা চিন্তাকরলে হবে না। এইযে বাইরে থেকে বিশাল একটা জনসংখ্যা বিশ্বকাপ দেখতে আসছে ওরা কিভাবে যাতায়াত করবে এই ব্যাপারটা চিন্তা করে তারা এত টাকা খরচ করেছে৷

লুসাইল স্টেডিয়াম যেখানে ব্রাজিল আর সার্বিয়ার যে প্রথম ম্যাচটি খেলা হয়েছিল সেটার চারপাশে পুরো একটা শহর বানানো হয়েছে যেটা লুসাইল সিটি যেখানে বাইশটা হোটেল আর প্রায় ২ লক্ষ মানুষের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।এখানে একটা থিমপার্ক, দুইটা মেরিনা এবং দুইটা গলফ কোর্সও আছে৷

সবচেয়ে বেশি যে স্টেডিয়ামে খরচ করা হয়েছে তার নাম আল ব্যায়াত৷ এখানে প্রায় ৮৪৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে৷ তারপর লুসাই স্টেডিয়ামে ৭৬৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে৷ এরকম আরো অনেক স্টেডিয়াম রয়েছে এগুলোতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে কাতারের৷

এখন কাতারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে৷ যার প্রথম অভিযোগ হচ্ছে স্টেডিয়াম গুলো বানানোর সময় অনেক শ্রমিক মারা গিয়েছে।গার্ডিয়ান যেটা খুবই বিশ্বস্ত একটি সংবাদ মাধ্যম যারা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে বিভিন্ন জাতীয় এম্বাসী থেকে রেকর্ড নিয়ে বলা হয় ২০১০ সালে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্বাধিকার পাওয়ার পর থেকে ইন্ডিয়া পাকিস্তান নেপাল বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা থেকে ৬৫০০ বেশি শ্রমিক মারা গেছে কাতারে কাজ করতে গিয়ে যদিও কাতার সরকার এইটা দাবি করতেছে যে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মাত্র ৩৭ জন শ্রমিক মারা গিয়েছে৷  অনেক বিশ্বস্ত সূত্র এর সাথে একমত না৷ অনেক সূত্র এটাও বলছে ৬৫০০ না এটা আরও বেশি হতে পারে কারণ এই কয়েকটা দেশ শুধু নয় বরঞ্চ ফিলিপাইন কেনিয়ার মত দেশ থেকে শ্রমিকরা এখানে আইসা কাজ করছিল কিন্তু ওদের সংখ্যাটা এখানে যোগ করা হয় নাই৷

 

এখন এত শ্রমিক মারা যাওয়ার কারণ হলো কাতারের গরম আবহাওয়া। দেশটিতে সারাবছর অনেক গরম থাকে৷ গার্ডিয়ান সংবাদ মাধ্যমের
রিপোর্ট অনুযায়ী অনেক শ্রমিক ‘স্ট্রেস রিলেটেড ইনজুরিতে’ মারা গেছে যেমন হার্ট অ্যাটাক করেছে, স্ট্রোক করেছে৷ এমনকি একটি বড় সংখ্যক আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে কারণ সেখানে কাজ করার পরিবেশ খুবই মারাত্মক ছিল এবং এইটা অনেকেই সহ্য করতে পারে নাই৷ আর কাতার গভার্নমেন্টকে অনেক মানুষ এই কারণে ‘ট্রল’ করতেছে যে এই সবগুলা মৃত্যুকে কাতার গভর্নমেন্ট প্রাকৃতিক কারনে (ন্যাচারাল ডেট) মারা গিয়েছে বলতেছে৷

তাহলে কাতারের গভর্মেন্ট কি শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ করেনা৷ কাতারের গভার্নমেন্ট নিজেই বলছে যে তারা ত্রিশ হাজারের মতন বিদেশি শ্রমিক ভাড়া করে এনেছিল কাতারের স্টেডিয়ামগুলো বানানোর জন্য যারা মূলতঃ বাংলাদেশ,  ইন্ডিয়া, নেপাল আর ফিলিপিন এর ছিল৷ ২০১৬ সালে ‘এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ (Amnesty International) কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কাতারের কোম্পানিগুলো লিভারের উপর চাপ দিচ্ছে৷ জোর করে শ্রমিকদেরকে খাটাচ্ছে৷ শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সময় মত দেওয়া হতো না তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখা হতো কোম্পানিগুলোতে ইত্যাদি৷

মাত্র ২০১৭ সালের পরে কাতার সরকার, শ্রমিকরা যাতে খুব গরম আবহাওয়ায় কাজ না করে তাদের কর্মসময় যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যেন থাকে, তাদের যেন অতিরিক্ত পরিমাণ খাটানো না হয় এবং যে জায়গায় থাকবে সে জায়গাগুলোর অবস্থা যাতে ভালো হয় এই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়৷ ২০১৭ সালের আগে এমন অবস্থা ছিল না৷

কাতারের কোম্পানিগুলো একটি পদ্বতি অনুসরণ করতো যাকে বলা হয় ‘কাফালা’ (kafala), যেখানে ওরা বিদেশি শ্রমিকদেরকে ‘স্পন্সর’ করতো কাতারে আসার জন্য৷ কিন্তু তারপর সেই কাজ ছেড়ে যেতে তারা বাধা দিত এমনকি তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখত৷ ILO (International Labour Organisation) থেকে প্রচন্ড বাধা পাওয়ার পর কাতার কাফালা(kafala) সিস্টেমটা বাদ দেয়৷

এসবকিছু নিয়ে এমন কাজগুলোর জন্য সারা বিশ্বের অনেক বড় বড় সম্প্রদায় অনেক বড় তারকারা কাতার সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়৷ ফলে বিশ্ব দরবারে কাতারের সুশীল ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিশ্বকাপের আয় কি কাতারের সে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে?

 

 

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT