আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার।। কুশিয়ারা নদীতে অব্যাহত ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রাজনগর উপজেলার শত বছরের পুরানো কালারবাজারের প্রায় ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ১শ টি দোকান-পাট নদীতে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের ফলে কালারবাজারে ব্যবসায় ধস নেমেছে। একসময় বাজারের নদী পাড়ে বিভিন্ন জাতের ধান পাইকারী কেনা-বেচা হতো। এই বাজারে পাশ্ববর্তী বালাগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে বিক্রেতারা নৌকাযোগে এসব ধান এনে পাইকারী দামে বিক্রি করতেন। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে পাইকাররা এসে প্রতি বাজারে প্রায় ৩ লাখ টাকার ধান কিনে নিতো। কালারবাজারে প্রতি শুক্র ও সোমবার বসত ধানের হাটসহ বিশাল বাজার। শুধু ধানের বাজারে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটতো। কালের বিবর্তে এই ধানের বাজার ধীরে ধীরে নদী গর্ভে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাওয়ায় ওই ধানের বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। মুলত ধান আর বাঁশ বেচা-কেনায় প্রসিদ্ধ ছিল এই শতবছরের প্রাচীন বাজারটি। এখনো বাঁশ বিক্রি হলেও আগের মত বাজারের সেই জৌলুস নেই, নেই তেমন ক্রেতা বিক্রেতা। স্থানীয়রা বলছেন, কালারবাজার কে নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করা না হলে আরো শতাধিক দোকান হারিয়ে যাবে নদীতে। বাজারের ব্যবসায়ী মজনুর রহমান বলেন, কালারজারে তিন উপজেলার মানুষের আগমন ঘটে। নদী ভাঙ্গন বন্ধ করা না হলে ব্যবসা শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে।
এদিকে কালারবাজার সংলগ্ন আমনপুর গ্রাম ও ফতেপুর ইউপি’র সোনাপুর এলাকায় নদীতে ভাঙ্গনে অর্ধ্ব শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন। সরেজেমিনে আমনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,১৫টি হিন্দু পরিবার ঝুঁকি নিয়ে ভাঙ্গনের পাশে বসবাস করছেন। গ্রামের জগমন বিশ্বাস, বিরেন্দ্র বিশ্বাস ও মনোরঞ্জন বিশ্বাসসহ ১৫টি পরিবার বাস করেন কুশিয়ারার পাড়ে। তারা বলেন, এভাবে নদী ভাঙ্গন আরো বৃদ্ধি হলে আমাদের মাথা গুজার ঠাই হবেনা। এখনই সরকারিভাবে এই ভাঙ্গন বন্ধ করা না হলে আমাদের ঘর নদীতে তলিয়ে যাবে। এদিকে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে প্রায় দুশ’ ফুট বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ওই গ্রামের অন্তত ১৫টি বসতঘর ও ফসলি জমি। মাথাগুজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগীরা। আবার কেউবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন বেড়িবাঁধের উপর। এভাবেই পূর্বপুরুষের ভিটে মাটি চোখের সামনে কেড়ে নিয়েছে এই কুশিয়ারা নদী। স্থানীয়দের দাবী যতদ্রুত সম্ভব সরকারি উদ্যোগে নদী ভাঙ্গন বন্ধ করা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, কুশিয়ারা আসলে একটি খরশ্রোতা নদী। এখানে স্বাভাবিকভাবে নদী ভাঙ্গন বন্ধে কাজ করে টিকানো মুশকিল। নদী ভাঙ্গন রক্ষা করতে হলে কালারবাজারসহ সবখানে ব্লকের কাজ করতে হবে। এই ব্লকের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আবেদন করেছি। অনুমোদন হলেই প্রকল্পের কাজ শুরু পারবো।