লিখছেন মৌলভীবাজার থেকে আব্দুল ওয়াদুদ।। প্রবল বর্ষন ও উজান থেকে আসা ভারতের ঢলে কুশিয়ারা নদীতে তৃতীয় দফার মত আবারো পানি বাড়লো। লাগাতার দীর্ঘস্থায়ী ছয় মাসের এই বন্যায় নদী ও কউয়াদিঘি হাওর পাড়ের মানুষ একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কাউয়াদিঘী হাওরে বানের পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় দীর্ঘ ৫ মাস ধরে মৌলভীবাজারের সাথে রাজনগর ও পার্শ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কাউয়াদিঘি হাওর ঘেঁষে যাওয়া মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের ৫টি পয়েন্টে কোমর পরিমান পানি জমা হয়ে আছে। ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধসহ শেষ ভরসা অটোরিক্সা চলাচলও বন্ধ হয়ে আছে পাঁচ মাস ধরে। ওই সড়ক দিয়ে কুশিয়ারা নদী পাড়ের বালাগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, রাজনগরের উত্তরভাগ, ফতেপুর, পাঁচগাও, রাজনগর সদর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শহরমুখী ছাত্র-ছাত্রী ও অফিস আদালতগামী মানুষ পড়েছেন মহাবিপাকে। অনেকে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে নৌকা নিয়ে যাতায়াতসহ মোকামবাজার-মুন্সিবাজার রুটে রাজনগর সদর ও মৌলভীবাজারে যেতে দেখা যায়।
ফতেপুর ইউনিয়নের মুনিয়ারপাড় গ্রামের হিয়ারুন বেগম মোকামবাজার-রাজনগর রুটে যাবেন বাগের বাড়ি নামক গ্রামে। ওই রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি ভুরভুরি পুলের উত্তরপাশে সড়কে দাড়িয়ে আছেন নৌকার অপেক্ষায়। মাঝি নৌকা নিয়ে আসলে তবেই গন্থব্যস্থলে যাবেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বাগের বাড়ি যেতে হলে দুটি নৌকা পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। মধ্যখানে আবার সড়ক দিয়ে হেটে যেতে হয়।
কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের ফতেপুর এলাকার হুমাইয়ুন রশীদ বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় আমরা অতিষ্ট। তার বাড়ি থেকে মোকামবাজার সড়কে পায়ে হেঠে যেতে ১০ মিনিট সময় লাগে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা নিয়ে মোকামবাজার যেতে দেড় ঘন্টা সময় চলে যায়। এদিকে কুশিয়ারা নদীতে তৃতীয় দফার বন্যায় পানি থৈথৈ করে বেড়েই চলেছে। পনেরো দিন আগে নদী পাড়ের গ্রামগুলোর রাস্থা-ঘাট, উঠান থেকে বানের জল নামতে দেখা গেলেও বৃষ্টি ও উজানের ভারত থেকে আসা পানিতে আবার যেই সেই। এই অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের বকশিপুর, ছিক্কাগাঁও, কামালপুর, আমনপুর, সুরীখাল, যুগিকোনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, রামপুর, গালিমপুর, সুপ্রাখান্দি, সাফাতপুর, রুস্তুমপুর ও ফতেপুর ইউনিয়নের সাদাপুর, বিলবাড়ি, বেড়কুড়ি, শাহাপুর, জাহিদপুর, আব্দুল্লাহপুর, রশীদপুর, ইসলামপুর, সাবাজপুর, অন্তেহরি ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমূখ, নাজিরাবাদ ও আখাইলকুড়া ইউনিয়নের আরো ২৫টি গ্রামের বন্যা কবলিত মানুষ নিজের খাদ্য সংঙ্কটসহ গৃহ পালিত পশু নিয়ে পড়েছেন মহা বিপাকে। এসব গ্রামের গরীব-অসহায় মানুষ ত্রানের আসায় রাজনীতিবিধ ও প্রশাসনের হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।
নদী পাড়ের মানুষ আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন কখন ত্রান নিয়ে আসবেন রাজনীতিবীদ, সমাজসেবী অথবা সরকারি কর্মকর্তারা। মোকামবাজারের ব্যবসায়ী শাহজান মিয়া বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মানুষ একদম নাজেহাল হয়েগেছে। আমাদের ব্যবসায়ও ভাটা পড়েছে। বন্যা আরো দীর্ঘস্থায়ী হলে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাবে। পিয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যে হারে বাড়ছে চালের দাম আরও বাড়তে থাকলে মানুষ মহাবিপাকে পড়বে।
এদিকে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা ঢল ও কুশিয়ারা নদীর বৃদ্ধি পাওয়া পানিতে দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি দেখা দিয়েছে। গত পনেরোদিন থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুনকরে বাড়িঘর রাস্তাঘাট ডুবতে শুরু করেছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী এর সাথে রোববার ২০ আগষ্ট আলাপ হয় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি জানান, আসাম থেকে নেমে আসা ঢলের কারনেই মুলত আমাদের পানি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর সেকশনে বিপদসীমার ৪০ সে:মি ও শেওলাতে ৪৪ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।