লন্ডন: মহাভারতের খান্ডবপ্রস্ত এবার গ্রেটবৃটেনে আসন পাতলো! বাংলাদেশের রাণা প্লাজা দূর্ঘটনা আর লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকান্ড চরিত্রগত দিক থেকে একই ধরনের। কেবলমাত্র একটি ফারাক আর সেটি হলো রাণাপ্লাজার মর্মন্তুদ কারবালার জন্ম দালান ধ্বসে গিয়ে আর গ্রেনফেল টাওয়ার বিয়োগান্তক কান্ডের জন্ম অগ্নিদেব থেকে। ঢাকায় মারা পরেছিল হাজার হাজার আর লন্ডনে চিতাগ্নিতে দাহ হয়েছেন যাদের আসল পরিমাণ এখনও নিরুপন করা যায়নি। তবে শতের উপরেতো হবেই। রাণাপ্লাজার দায়ীত্বহীনতার পেছনের কারণ যেমন মুনাফা, গ্রেনফেল টাওয়ার মূহুর্তের মধ্যে মহাভারতীয় খান্ডবপ্রস্তে রূপ নেয়ার পেছনেও ওই মুনাফা আর লুঠপাটই কারণ। রাণাপ্লাজার আত্মাহুতিদানকারীরা যেমন সমাজের নিম্নআয়ের মানুষ ছিল একইভাবে গ্রেনফেল টাওয়ার চিতাগ্নিতে আত্মাহুতিদানকারীরাও ছিলেন সমাজের নিম্ন আয়ের নিরীহ মানুষ। উভয় কান্ডের দায়ীত্বহীনতার রূপ বলতে গেলে একই ধরনের।
রাণাপ্লাজা কান্ডে তবুও যারা প্রানে মারা পড়েছিলেন তারা সাথে সাথেই মারা যান। খুব একটি ছটফটানির সময় পাননি। কিন্তু গ্রেনফেলের অগ্নিদাহ ভাবতে মন আতংকিত হয়ে উঠে। চোখে জল না এসে যায় না। চারিদিকে আগুন বাঁচার কোন পথ নেই। তার পর চিতাভষ্ম হয়ে যাওয়া। কি মর্মন্তুদ!
গ্রেনফেল খান্ডবপ্রস্তের সূচনা বিষয়ে এখনও কিছুই ঠিক ঠিক জানা যায়নি। তবে পত্রিকা থেকে এবং অকুস্থলে মানুষের কানা-ঘুষায় যা জানা গেছে চার তলার ১৬ নম্বরের বাসিন্ধা টেক্সি ড্রাইভার বেহাইলু কেবেডে নামের একজন বাসিন্ধার একটা ফ্রিজ ফেটে গিয়ে এ অগ্নিকান্ডের সূচনা।
দ্বাত্রিংশতি বয়সের যুবতি প্রখ্যাত বৃটিশ গায়িকা লিলি এলেন, যিনি ওই এলাকায়ই বাস করেন, চ্যানেল ফোরে সাক্ষাৎ দিতে গিয়ে বলেন ‘সারা দিন ধরে আপনারা ১২ জন আর ১৭জন মানুষ মারা গেছেন বলে সংবাদ প্রচার করছেন! এটা ঠিক নয়। মানুষকে আসল সত্য জানতে দিন। অযথা বেদনাহত মানুষকে আশায় রাখছেন কেনো। জ্বলে যাওয়া এই দালান দেখে কি মনে হয় মাত্র ১৭জন মানুষ মারা গেছে!
মানুষের মারাত্মক অভিযোগ ‘গ্রেনফেল টাওয়ার’ ব্যবস্থাপনা পর্ষদের উপর। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষজন সকলেরই অভিযোগ গ্রেনফেল টাওয়ারে কোন ‘ফায়ার এলার্ম’ এর ব্যবস্থা ছিল না! ‘ফ্লোরে ফ্লোরে ফায়ার এ্যসটিনগুইসার’ ছিল না! ৮.৬ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে সংস্কার করতে গিয়ে যে বহিরাবরণ ব্যবহার করা হয়েছে তা এতই নিম্নমানের যে রাতারাতি আগুনকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে! বিষ্ময়কর অল্প সময়ের মধ্যে ২৪ তলা ভবনের ৪ তলা থেকে উপর পর্যন্ত ধাউ ধাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
সহায়তা কেন্দ্রে উপস্থিত বহু মানুষের অভিযোগ, আগুন লেগে যাবার পর টাওয়ারের মানুষজন যখন গভীর ধোয়ার মাঝেও বেরিয়ে আসতে চাইছিলো তখন কে বা কারা তাদের বের হয়ে না আসতে বলে। বলে যে উদ্ধার কার্য চলছে! এতে করে যে দু’দশজন ধোয়া মাড়িয়ে বের হয়ে আসতে পারতো তাদেরও আর বাঁচা হয়নি। একটি টিভি চ্যানেলের সাথে আলাপ করতে গিয়ে মিশরীয় একজন অভিবাসী মহিলা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেছিলেন- ‘উদ্ধার করা হবে’ কথায় ওইসব মানুষ খুব বিশ্বাস করেছিল, এদের সাথে কেনো এমন করা হলো? এরা আশ্রয়প্রার্থী, গরীব আর মুসলমান বলে! আরো অভিযোগ ’ফায়ার সার্ভিস’ প্রথম যখন আসে তখন তাদের সাথে মানুষ উদ্ধারের হাতিয়ার যথেষ্ট ছিল না।
মিশরীয় ওই অভিবাসী মহিলার আরো অভিযোগ, এরা গরীব নিরীহ এবং মুসলমান বলে কোন তরপ থেকেই দায়ীত্ব নিয়ে কাজ করা হয়নি। যার জন্য এতো মানুষকে নিদারুণ অসহায়ভাবে জ্যান্ত চিতার আগুনে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে।
প্রধান মন্ত্রী তেরেশা মে, বিরুধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন ও লন্ডনের মেয়র সাদেক খান ঘটনাস্থল গিয়ে দেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্ধার পাওয়াদের দেখতে যাননি। মানুষ এতে খুবই ক্রোধান্বিত হয়েছে। ভয় হোক আর ভালবাসা যাই হোক না কেনো, প্রধানমন্ত্রী গণতদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে আশা করা যায় আসল বেড়াল বেরিয়ে আসবে।