অকার্যকর ৭৪২টি সমিতিমৎস্যজীবি সমিতি ব্যবহার করে প্রভাবশালীদের রমরমা ব্যবসামৌলভীবাজার থেকে সৈয়দ বয়তুল আলী |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৌলভীবাজার জেলা সমবায় অফিস থেকে নামে বেনামে সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে চড়া সুদে জেলাব্যাপি চলছে রমরমা সুদি ব্যবসা। আবার প্রভাবশালী একটি মহল জেলেদের নাম ব্যবহার করে মৎসজীবি সমিতি নিবন্ধন নিয়ে হাওরে বিল লুট করছে। এমনও অনেক মৎসজীবি সমিতি আছে যার সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই জানেন না তারা ওই সমিতির দায়িত্বে আছেন। প্রভাবশালীরা নিজেরাই জেলেদের স্বাক্ষর ও সীল ব্যবহার করেন। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিতে হলেও অফিসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিতে হয় বড় অংকের টাকা। সমিতির অডিটে গেলে কর্মকর্তারা পকেটভারী করে নিয়ে আসেন। জেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় ১ হাজার ৬’শ ৮টি সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে কার্যকর ৮৬৬ টি এবং অকার্যকর ৭৪২টি। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা সমবায় কার্যালয় সমবায় নীতিমালাকে উপেক্ষা করে তাদের খেয়াল খুশি মতো তদন্ত না করেই সমবায় সমিতির নিবন্ধন দিয়েছেন। অনেকে সমবায় সমিতির আড়ালে গড়ে তুলেছেন চড়া সুদের ব্যবসা। সর্বশান্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি’র নাম ব্যবহার করে সদস্যের বাহিরেও অনটেষ্ট সিএনজি চালকদের কাছে প্রতি মাসে ১হাজার টাকা দামের স্টিকার বিক্রি করে। প্রতি মাসে কয়েক শত স্টিকার বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এশিয়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি, জনবন্ধু বহুমুখী সমবায় সমিতি, বরাক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি এবং সাধুহাটি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি তাদের সদস্যদের বাহিরে চড়া সুদে ঋণ দিচ্ছে। দৈনিক কিস্তিতে আদায় করছে টাকা। জেলার অধিকাংশ ঋণদান ও সঞ্চয় সমিতির একই অবস্থা। আবার কেউ কেউ সদস্যদের টাকা নিয়ে উদাও হয়েছেন। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে চড়া সুদে জেলাব্যাপি চলছে রমরমা সুদি ব্যবসা। অফিসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিতে হয় বড় অংকের টাকা। |
প্রভাবশালীরা নিজেরাই জেলেদের স্বাক্ষর ও সীল ব্যবহার করেন। |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাপক জলজ বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়। থানায় মামলা করলেও প্রভাবশালীদের তদবির সব কিছুকে ওলট-পালট করে দেয়। |
প্রায় ৪০ বছর ধরে হাকালুকির ওয়াটার লর্ড খ্যাত নুরুল ইসলামের (বর্তমানে তিনি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে হাকালুকির বড় বড় বিলগুলো। ঘাটুয়া, কুকুরডুবি, পিংলা ও ফরতি বিলগুলো পকেট মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ইজারা নিয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জের ওই ওয়াটার লর্ড |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এদিকে বড়লেখা উপজেলায়, শাসক দলের ছত্রছায়ায় হাকালুকি হাওরের জলমহালগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে প্রভাবশালীরা। এক্ষেত্রে সোপান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। প্রায় ৪০ বছর ধরে হাকালুকির ওয়াটার লর্ড খ্যাত নুরুল ইসলামের (বর্তমানে তিনি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে হাকালুকির বড় বড় বিলগুলো। ভোলারকান্দি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে সামনে রেখে দখলে রেখেছেন হাকালুকির সবচেয়ে বড় জলমহাল হাওরখাল। নামেই এ সমিতির সভাপতি মান উল্লা উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ছায়াদ আহমদ। মাধবকু- মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ইজারাদার করে ইতিপূর্বে নুরুল চেয়ারম্যান প্রায় ৩ কোটি টাকায় ইজারা নেন হাওরখাল বিল। মাছ আহরণের অনুমতি পাওয়ার আগেই কয়েক কোটি টাকার মাছ লুট করেন। এ সমিতির ছালাম উদ্দিন সভাপতি ও শিপার উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক হলেও মুলত তারা নুরুল চেয়ারম্যানের দৈনিক চুক্তিভিত্তিক জেলে। হাকালুকির ঘাটুয়া, কুকুরডুবি, পিংলা ও ফরতি বিলগুলো পকেট মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ইজারা নিয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জের নুরুল চেয়ারম্যান। মালাম বিল মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে ইজারা দেওয়া হলেও মুলত বিলে বিনিয়োগ করছেন বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, নারীশিক্ষা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একেএম হেলাল উদ্দিন প্রমুখ প্রভাবশালীরা। নামেই এ সমিতির সভাপতি আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইন উদ্দিন। গত মে মাসে এসব বিনিয়োগকারীরা বিলের এরিয়া বাড়াতে তাদেরকে দিয়ে মালাম বিলের পারের ব্যাপক জলজ বৃক্ষ কেটে ফেলেন। এব্যপারে পরিবেশ অধিদপ্তর থানায় মামলা করলেও প্রভাবশালীরা তদবির করে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মামলা থেকে বাচিয়েছে। এসব প্রভাবশালীরা পুতুল সমিতির মাধ্যমে হাকালুকির বেশ কয়েকটি বিলের খাস কালেকশন নিয়েছে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেও দিনে রাতে লাখ লাখ টাকার মাছ লুট চলছে। এবিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, কোনো খাতে মূলধনের অতিরিক্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ নেই। অনেকের বিরুদ্ধে নীতিমালা লঙ্গন করার অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মৎসজীবিদের ব্যবহার করে অনেকে বিল ইজারা নেন এটা সম্পূর্ণ বেআইনী। এনিয়েও আমি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। |