-রাশেদ খান মেনন
ভিন্নমতের জন্য পিটিয়ে হত্যা যেমন গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর, একইভাবে মৌলবাদীরা যখন একই কাজ করে সেটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আরও বেশি ভয়ংকর –মেনন
|
মুক্তকথা সংবাদ।। গত ১১ই অক্টোবর চট্টগ্রামের জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি রাশেদ খান মেনন উপরের কথাগুলো বলেন। এসময়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার পক্ষে তিনি নিজের মত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন অন্যতায় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে মৌলবাদীরা সুযোগ নেবে।
গেল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে
মেনন আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমি নিজে ছাত্ররাজনীতি থেকে গড়ে উঠেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছাত্ররাজনীতি করেছেন। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে, এটা কোনো সমাধান নয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে মৌলবাদীরা সুযোগ নেবে। অতীতেও এটাই হয়েছে।
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মেনন বলেন, আমরা ভাবতেই পারিনা, স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যাপীঠে সহপাঠীরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে। এ রকম ঘটনা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটছে। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের হাতে বুয়েটসহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি। এরা শুধু আবরারকে পিটিয়ে মারেইনি, এরপর তারা খেলা দেখেছে, খাবার খেয়েছে। কী অমানবিক! ভিন্নমতের জন্য পিটিয়ে হত্যা যেমন গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর, একইভাবে মৌলবাদীরা যখন একই কাজ করে সেটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আরও বেশি ভয়ংকর।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ক্যাসিনোতে চালানো অভিযানের বিষয়ে মেনন বলেন, দেশে দুর্নীতি কি কেবল জুয়া আর ক্যাসিনোতে? প্রশাসনের নাকের ডগায় মতিঝিল থানার কয়েক শ গজের মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্যাসিনো কী করে এত দিন চলেছে? সেই ক্যাসিনো তুলতে গিয়ে আমাদের গায়েও কালি ছিটানোর চেষ্টা হয়েছে। অথচ বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। এদের বিশ্বের অন্য দেশে দ্বিতীয় বাড়ীঘর রয়েছে। তাদের নামগুলো মানুষের সামনে নিয়ে আসতে হবে।
ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি আবু হানিফ। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক।
এর পরের দিন শনিবার, ১২ই অক্টোবর, সন্ধ্যায়, ঢাকা ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে ওয়ার্কার্স পার্টির মতিঝিল থানা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত ভারতবিরোধিতা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে নতুনভাবে মাঠে নামার চেষ্টা করেছে। মেনন আরও বলেন- জামায়াতের প্রচার মাধ্যম ইতোমধ্যে আবরার ফাহাদকে আগ্রাসন বিরোধী প্রথম শহীদ হিসেবে বর্ণনা করছে। একই উক্তি করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতেই বোঝা যায় ফাহাদের নিষ্ঠুর হত্যার বিচার চাওয়া থেকে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এটা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা।
তিনি বলেন, ভারতের ত্রিপুরাকে ফেনী নদীর পানি দেওয়া নিয়ে তারা আপত্তি তুলেছে। এতে বুঝতে হবে ত্রিপুরা রাজ্য আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। এমনকি সে সময় ত্রিপুরা রাজ্যের জনসংখ্যার চেয়ে আমাদের আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। তারা আমাদের জন্য তাদের ঘরবাড়ি সব ছেড়ে দিয়েছিল। সেই ত্রিপুরার একটি শহরে খাবার পানি আমরা দেবো না, এটা হতে পারে না।
তিস্তার পানি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মেনন বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা এখনো তিস্তার পানি বণ্টনের চুক্তিতে আসতে পারিনি। তবে আমি মনে করি যদি বামফ্রন্ট অথবা জ্যোতি বসু ক্ষমতায় থাকতেন এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির বিজয়ের পর যারা সেদিন লাফালাফি করেছিল, তারাতো তার কাছ থেকে কিছু আনতে পারেনি। বিএনপি তার দীর্ঘ শাসনামলে তিস্তা কেন গঙ্গার পানিও আনতে পারেনি।
ভারতের সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ঠিক ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা অনেক বেশি সংবেদনশীলতা দেখাচ্ছি। ভারত সেই সংবেদনশীলতা এখন পর্যন্ত দেখাতে পারছে না। ভারতকে অবশ্যই বুঝতে হবে কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হবে। ভারত যদি সেটা না বুঝে তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছে সেই সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা আশা করবো উভয় দেশের জনগণের পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে একই সঙ্গে চরম বৈষম্য দুর্নীতি দলবাজি দখলদারিত্ব এ উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনা ঘটেছে তা মোটেই সরকারের জন্য সুখকর নয়। আমরা আশা করবো সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শক্তির দাসত্বের রাজনীতি বাদ দিয়ে ছাত্রদের স্বাধীন রাজনীতি করতে উৎসাহিত করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচন দিয়ে প্রকৃত ছাত্র নেতৃত্বকে বের করে আনতে হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সদস্য মুর্শিদা আখতার নাহারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল খালেক, জাকির হোসেন রাজু, মোস্তফা আলমগীর রতন, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক কিশোর রায় প্রমুখ।
|