বন, ২৫ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে জার্মানির বন নগরীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন হাতের লেখা কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন ভাষাভাষী শতাধিক অভিবাসী ও তাদের ছেলে-মেয়েরা এবং জার্মান অতিথিরা বন নগরীর ডুইসডর্ফ এলাকায় অবস্থিত হাউস অফ ইন্টেগ্রেশন এ উপস্থিত হন।প্রথমে তিনটি বিভাগে শিশুদের কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শিশুরা নিজেদের মাতৃভাষায় সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এরপর উপস্থিত অভিবাসী ও জার্মান অতিথিবৃন্দ এবং শিশু-কিশোররা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার জন্য আঁকা মনোরম ছবির প্রদর্শণী ছিল মন কাড়া। এছাড়া চিত্র প্রদর্শণীতে ছিল বাংলাদেশী-জার্মান কবি ও আঁকিয়ে মীর জাবেদা ইয়াসমিন ইমির আঁকা বাইশটি আকর্ষণীয় ছবি যেগুলো দেশী-বিদেশী অতিথিদের কাছে ছিল অত্যন্ত অর্থবহ এবং দৃষ্টি নন্দিত।
হাউস অফ ইন্টেগ্রেশনের ওপেন ডোর ডে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশি-জার্মান বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং জার্মান আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম বসিরুল আলম চৌধুরী সাবু এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি কারিম উল্লাহ। ইন্টেগ্রেশন হাউস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী যুবরাজ তালুকদার এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্টেগ্রেশন হাউজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজসেবী নুরুল ইসলাম। ইন্টেগ্রেশন হাউজের শিক্ষা সমন্বয়কারী হোসাইন আব্দুল হাই এর উপস্থাপনায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন ইন্টেগ্রেশনের হাউজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক তামান্না তালুকদার এবং রেশমা ইসলাম। বাহান্নর একুশের প্রেক্ষাপট, ইতিহাস এবং সেখান থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারির বৈশ্বিক স্বীকৃতির উপরে আলোকপাত করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও আইন বিশারদ মারিনা জোয়ারদার।
অনুষ্ঠানে বক্তাগণ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি জাতির আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গল্প তুলে ধরেন জার্মানিতে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশ ও ভাষার অভিবাসীদের সামনে। তাঁরা বাঙালি জাতির এই গৌরবময় ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও ভাষার মানুষদেরকে এবং বিশেষভাবে অভিবাসী নতুন প্রজন্মের মাঝে নিজ নিজ মাতৃভাষার অধিকতর চর্চা ও বিকাশে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালানো এবং উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
এছাড়া বাঙ্গালির ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ভূমিকা তুলে ধরে বক্তাগণ ১৯৭৫ সালে সপরিবারে তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এ ধরণের ঘটনার যেন কখনও পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সকলকে সতর্ক ও সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।
ইন্টেগ্রেশন হাউস এর ওপেন ডোর ডে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর সকল কর্মসূচির মিডিয়া পার্টনার ছিল অনলাইন মিডিয়া সংগঠন আওয়ার ভয়েস
এদিকে বিকেলে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এর উদ্যোগে বাড গোডেসব্যার্গ এর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ডয়েচে ভেলের সাবেক সাংবাদিক মারিনা জোয়ারদার এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বদরুন্নেসা হোসনে সুলতানা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক ডঃ তিয়াসা হোসনে আইয়ুব এর নেতৃত্বে একুশের এবং দেশের গান ও নাচ পরিবেশন করে কেন্দ্রের এক ঝাঁক ক্ষুদে শিল্পী সোনামণিরা। গান ও স্বরচিত কবিতা পরিবেশন করেন যথাক্রমে কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ আল মারুফ এবং পরিকল্পনাবিদ মোঃ খুরশীদ হাসান সজিব।