আলাউদ্দিন কবির।। কুলাউড়া উপজেলায় টর্ণেডোতে লন্ডভন্ড হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে আকস্মিকভাবে আঘাত হানে টর্নেডো। এতে বসতঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা, গোয়ালঘর, পোল্ট্রি ফার্মের শেডঘরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া দুটি চা-বাগানের শতাধিক ছায়াবৃক্ষসহ অসংখ্য গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। টর্নেডোর আঘাতে আহত হন বৃদ্ধ মহিলাসহ ৩জন। এছাড়াও ৩টি গবাদিপশুর প্রাণহানি হয়।
কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মো. রফি উল্লাহ জানান, আকস্মিক টর্ণেডোর আঘাতে লক্ষীপুর গ্রামের আরফান মিয়ার বসত ঘর পুরোটাই ধুমড়ে-মুচড়ে যায়। এসময় ঘরে থাকা আরফান মিয়ার বৃদ্ধা মা আবজান বিবি (৬০), বোন মনোয়ারা বেগম (৪৫) গুরুতর আহত হন এবং তাঁর গৃহপালিত ৩টি ছাগলের প্রাণহানি ঘটে। একই এলাকার তাহির আলী, আছির আলী, ইরফান মিয়া ও রিয়াজ উদ্দিনের বসত ঘর এবং কটু মিয়ার পোল্ট্রি ফার্মের সেড ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লক্ষীপুর জামে মসজিদের মক্তবঘরের উপর বিশাল গাছ পড়ে একবারে মুচড়ে যায়। বনগাঁও-২ গ্রামের শিপু মিয়া ও মখলিছ মিয়ার বসতঘর একই গ্রামের রুশন মিয়া ও গুতগুতি গ্রামের শেফুল মিয়ার টিনের ছালা উড়িয়ে নেয়।
৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আজাদ মিয়া জানান, পশ্চিম প্রতাবী গ্রামের হতদরিদ্র মরম আলীর পুরো ঘরটাই ধ্বসে যায়। ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আবু তালিবের দোকানঘর ধুমড়ে-মুচড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। রাউৎগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল জানান, টর্ণেডোর আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয় রাউৎগাঁও ইউনিয়নে। ইউনিয়নের নর্তন ডাকঘর, মনরাজের হাজী ইরফান আলী ইসলামিক একাডেমি পুরোটাই বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ওই গ্রামের ওয়ারিছ আলী, জাটাই মিয়া, ডা. অনন্ত, রহমান মিয়া, হেলাল মিয়া, সোহরাব মিয়ার বসতঘর বিধ্বস্ত হয়।
৮ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেল জানান, আসামপুরের মুকিম আলী, আমির আলী, কালিজুরি গ্রামের আরমান আলী, ইরফান আলী, জমসেদ আলী, দুরুদ আলীর বসতঘর টর্ণেডোয় উড়িয়ে নেয়। আবদা গ্রামের প্রতিবন্ধি জবা রানীর বসতঘর পড়ে যায়। লালপুর গ্রামের জমশেদ আলীর ঘর পড়ে তার স্ত্রী আহত হন। এ গ্রামের আকবর আলী, বলাই মিয়ার ঘর পড়ে যায়।
৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মুক্তাদির মনু জানান, ভবানিপুর গ্রামের রিনা বেগম, সুলেমান মিয়া, ভাটুৎ গ্রামের শেকল মিয়া, তারা মিয়া, মানিক মল্লিকের বসতঘর পড়ে যায়। ৬ নং ওয়ার্ডের তিলাশীজুরা গ্রামের কুদ্দুস মিয়া, নর্তন গ্রামের কালা মিয়া, তছিরুন বেগমের বসতঘর পড়ে যায়।
৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বেলাল জানান, রাউৎগাঁও গ্রামের মো. শাহিন আলী, তবারক আলী, সৈয়দ নঈম আলী, সৈয়দ রেমান আলী, মাসুক মিয়া, রুবিনা বেগম, শ্রী কটলা রবি দাস, বাবলু রবি দাস, শ্রীদানী রবি দাস, আব্দুস সালাম, আইয়ুব আলী, লাল মতি, সিতার মিয়া (কালা) ও ভীমবসু গ্রামের নজমুল মিয়ার বসতঘর বিধ্বস্ত হয়।
৪ নং ওয়ার্ড সদস্য ইসমাঈল হোসেন জানান, কৌলা গ্রামের বাদল মালাকার, অনিমার মালাকার, বিনয় দেব, অকিল দেব, উস্তার মিয়া, ফারুক মিয়া, জরিনা বেগম, জানু মিয়া, কাদির মিয়ার বসতঘর পড়ে যায়। কবিরাজি গ্রামের আব্দুল মন্নানের বসতঘর, উছমান মিয়ার দোকান ঘর এবং মুকুন্দপুর গ্রামের রুশন মিয়ার বসতঘর ও তারেক হাসানের প্লোট্রি সেডঘর বিধ্বস্ত হয়। কর্মধা ইউনিয়নের রাঙ্গিছড়া বাজারে ব্যবসায়ী নুর মিয়ার ফার্নিচারের দোকান পড়ে যায় এবং লাল মিয়া ও সৈয়দ তালিম হোসেনের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে যায়।
কালিটি চা বাগানের ব্যবস্থাপক রবিউল হাসান ও রাঙ্গিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, তাদের বাগানের শতাধিক ছায়াবৃক্ষ পড়ে চা গাছের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
৯ নং ওয়ার্ড সদস্য লছমি নারায়ন অলমিক জানান, মনছড়া গ্রামের হাছন মিয়া, আব্দুল মালিক, মানিক মিয়া, সুহেল মিয়া, মাসুক মিয়া, কালিটি বাজার টিলার কার্তিক নাইড়–, জংলি লাইনের বেহুলার ঘর পড়ে যায়।
সদর ইউপির চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলি জানান, এই ইউনিয়নে অনেক ঘর পড়ে গেছে, সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্তের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রেরণ করেছি।
টর্ণেডোর ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি এর নির্দেশে লক্ষীপুরসহ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শিমুল আলী।