কমলগঞ্জ সংবাদদাতা।। সরকারের প্রজ্ঞাপনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মৌলভীবাজার কিংবা সিলেটে শ্রম আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়নি। বিভিন্ন সমস্যাজনিত মামলার জন্য সিলেট বিভাগের শ্রমিকদের দ্বারস্থ হতে হয় চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে। গত বছরের ২৪ জুন সরকার এক প্রজ্ঞাপন জারী করে নতুন তিনটি শ্রম আদালত স্থাপনের ঘোষণা দেন। ফলে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দেয়। সিলেট বিভাগের শ্রমিক সংগঠন সমুহেরও দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এতদ এলাকায় শ্রম আদালত চালুর। তবে দীর্ঘদিনেও শ্রম আদালত চালু না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লাখো শ্রমিক।
শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান, গত বছরের ২৪ জুন প্রজ্ঞাপন জারীর পর থেকে চট্টগ্রামস্থ ২য় শ্রম আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় সিলেট বিভাগের কোন মামলা গ্রহণ করা হযনি। পরবর্তীতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে চট্টগ্রাম শ্রম আদালত অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সিলেট শ্রম আদালতের মামলা গ্রহণ করছেন। ফলে সিলেট বিভাগের কয়েক লক্ষ শ্রমিকের দূর্ভোগ পূর্বের মতোই থাকছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, ঢাকা বিভাগের তিনটি, চট্টগ্রাম বিভাগের দুইটি, খুলনা ও রাজশহী বিভাগের একটি করে মোট সাতটি শ্রম আদালতের পাশাপাশি সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের জন্য একটি করে নতুন তিনটি শ্রম আদালত স্থাপনের প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। শ্রম আদালত হচ্ছে শ্রমিকদের আইনগত অধিকার বাস্তবায়নের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। তবে ২৪ জুন শ্রম আদালত, সিলেট ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারী হলেও দীর্ঘ ৭ মাসেও আদালতের কার্যক্রম চালু হয়নি। চা বাগান অধ্যুষিত সিলেট বিভাগের লক্ষধিক চা-শ্রমিকসহ হোটেল শ্রমিক, স’মিল শ্রমিক, চাতাল-শ্রমিক, মুদ্রণ শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকদের চট্টগ্রামস্থ ২য় শ্রম আদালতে শ্রমিকদের আইনী প্রতিকারের জন্য মামলা করতে হতো।
চা-শ্রমিক সংঘের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী বলেন, দৈনিক ১০২ টাকা মজুরিতে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কোন কারণে চাকরীতে সমস্যা হলে শ্রম আদালতের জন্য চট্টগ্রামে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে আমরা আইনীভাবে প্রতিকার চাইতেও পারিনা। জরুরীভাবে সিলেট শ্রম আদালত চালু করা দরকার।
মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনে দাবির প্রেক্ষিতে শ্রম আদালত, সিলেটের ঘোষণা দেওয়া হলেও আদালতের কার্যক্রম চালু হয়নি। আমরা অবিলম্বে শ্রমআদালতের কার্যক্রম শুরুর দাবিতে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস বলেন, লক্ষাধিক চা-শ্রমিকসহ কয়েক লক্ষ শ্রমিকের জন্য আদালতের কার্যক্রম শুরু করা জরুরী। শ্রীমঙ্গলে শ্রম আদালত চালুর পক্ষেও তিনি বলেন, পাশ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলায় অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে এবং মৌলভীবাজারের শেরপুরে শ্রীহট্ট ইকনোমিক জোনের কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে। শ্রমঘন এলাকা হিসেবে এসব এলাকার শ্রমিকদের সুবিধাজনক স্থান হিসেবে শ্রীমঙ্গলে শ্রম আদালত চালু করা যৌক্তিক, তাছাড়া কয়েক বছর আগে শ্রীমঙ্গলে সার্কিট আদালত চালুও ছিল।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গলস্থ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের উপ-মহা পরিদর্শক মো. মাহবুবুল হাসান এ সংবাদদাতাকে বলেন, শ্রম আদালত চালু হলে শ্রমিকদের অধিকার সমুন্নত হবে। মৌলভীবাজার না হলে সিলেটে হলেও শ্রমিকদের ভোগান্তি লাঘব হবে। তিনি শ্রম আদালত দ্রুত স্থাপনের জন্য উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে যেন আসে সে প্রত্যাশা করেন।
শীতের ভর মৌসুমে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। টানা বৃষ্টিপাতে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর হালকা রোদের আলো দেখা গেলেও পুনরায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে নিম্নআয়ের লোকদের চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। তাছাড়া ঠান্ডায় শিশুদের নানা রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।
চা বাগান ও বনাঞ্চল অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলা। সারা দেশের চেয়ে এখানে ঠান্ডার প্রকোপ বেশী। ভর শীতের সময় শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত নামে। বৃষ্টিপাতের ফলে দিন আনে দিন খায় এমন লোকদের চরম দুর্ভোগে পড়েন। আকষ্মিক বৃষ্টিপাত দেখা দেয়ায় দিনমজুর ও বাসাবাড়ি থেকে লোকজন বের হতে পারেনি। শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
দিনমজুর দেওরাজ রবিদাস, অনুরোধ রবিদাস, মানিক মিয়া বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে দৈনিক ভিত্তিতে রোজগার করলেও শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত থাকায় কোথাও বের হওয়া সম্ভব হয়নি। একদিন রোজগার না করলে খাবার দাবার নিয়ে টানাপোড়েন করতে হয়। সিএনজি-অটোরিক্সা চালক মশাহিদ মিয়া, শুকুর আলী, রতন পাল বলেন, শুক্রবার গাড়ি নিয়ে বের হলেও বৃষ্টিপাতের কারণে মানুষের কোন উপস্থিতি খুবই কম ছিল। রাস্তাঘাট ও হাটবাজার সমুহ ফাঁকা দেখা যায়।
শমশেরনগরের কৃষক ইউনুস মিয়া, আলমীর হোসেন বলেন, শীতের সময়ে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে মৌসুমী শাকসবজির কিছুটা উপকৃত হবে। তবে আরও কিছু বৃষ্টিপাত হলে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা ধরণের শাকসবজি বিনষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।
শমসেরনগর চা বাগানের শ্রমিক ফুলমতি, লছমি, আলীনগরের হরিনারায়নসহ চা শ্রমিকরা বলেন, হাজরি ঠিক রাখতে বৃষ্টির মধ্যে ভিজেও কাজ করতে হয়েছে। কাজ না করলে হাজরি উঠবে না আর তাতে সপ্তাহে মজুরির টাকা কমে যাবে।
এদিকে ঠান্ডায় শিশুদের মধ্যে নানা ধরণের রোগের প্রকোপ বাড়ছে। হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বারের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, শীতে বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এসব রোগের প্রদুর্ভাব বাড়ছে। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের ফলে ঠান্ডার পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তাহলে শিশুদের মধ্যে আরও বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ছিল এক মিলিমিটার। তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।