লন্ডন: সৌদি আরবসহ চার আরব দেশ কাতার থেকে সম্প্রচারিত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বন্ধ করতে দোহার ওপর শর্তারোপ করেছে। কাতারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের বিদ্যমান উত্তেজনা নিরসনে ১৩ দফা শর্তের কথা শুক্রবারই কাতার’কে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। দোহা’র উপর চাপিয়ে দেয়া ওই শর্তগুলোর একটি হলো আল জাজিরা বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু আল জাজিরা নয় কাতারের অনুদান প্রাপ্তসহ অন্যান্য সংবাদপত্র আল আরাবি আল-জাদেদ, রাসদ, আরাবি২১ ও মিডলইস্ট আই বন্ধেরও শর্ত আরোপ করা হয়েছে। শর্তদানকারীদের মাঝে সৌদি আরব বাদে বাকী দেশগুলো হলো- মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। কাতারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে সংবাদমাধ্যমটি বন্ধ করে দেয়ার এ শর্ত দেয়া হলো।
আল জাজিরা বন্ধ করে দেয়া ছাড়াও ১০ দিনের মধ্যে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাস ও তুরস্কের একটি সামরিক ঘাটি বন্ধ করতেও বলা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবরটি দিয়েছে।
গত ৫ জুন জঙ্গিবাদে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় প্রথমে সৌদি আরব ও বাহরাইন এবং পরে তাদের সাথে সুর মিলিয়ে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়া এবং ইয়েমেনসহ আরও কয়েকটি দেশ কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়। ইয়েমেনে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের আরব জোট থেকেও বাদ দেওয়া হয় কাতারকে।
সম্পর্ক ছিন্নকারী চার আরব দেশের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাতারের কাছে ওই ১৩ দফা শর্ত পাঠিয়েছে ইরাক-মার্কিন যুদ্ধের ছুঁতা তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্র কুয়েত। একই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে, কাতার যদি আরব দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চায় তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ ১৩টি শর্ত পূরণ করতে হবে।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় দেশের অভিযোগ, আল জাজিরা পক্ষপাতপূর্ণ সংবাদ উপস্থাপন করে এবং আঞ্চলিকভাবে সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া এ সংবাদমাধ্যমটি আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়েও নাক গলায়। অবশ্য, বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আল জাজিরা।
কাতারের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি ‘কার্যকর ও যুক্তিসঙ্গত’ দাবি-দাওয়া পেশ করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের আহ্বান জানানোর পর এ শর্তনামা পাঠান হলো।
শুক্রবার সকালেই এই শর্তের বিষয় সংবাদ মাধ্যমে আসার সাথে সাথে সাংবাদিকদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন কঠোর ভাষায় এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।
১৩দফা শর্তের বাকীগুলো হলো- অন্য আরব দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে, চার দেশের মানুষকে নাগরিকত্ব না দেওয়া এবং বর্তমানে তাদের ভূখণ্ডে বসবাসরতদের বহিষ্কার করা। কেননা, এ পদক্ষেপকে চার দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কাতারের হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে, চার দেশ যাদেরকে সন্ত্রাসী বলে মনে করে তাদেরকে হস্তান্তর করা, সৌদি আরব ও অন্য দেশগুলোর যেসকল বিরোধী ব্যক্তিকে কাতার তহবিল সরবরাহ করে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জিসিসির সঙ্গে এক কাতারে থাকা, আল জাজিরার পাশাপাশি আরাবি ২১ এবং মিডল ইস্ট আইসহ অন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তহবিল বন্ধ করা, অনির্দিষ্ট পরিমাণের ক্ষতিপূরণ সরবরাহ করা। অপর একটি শর্ত যা বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদপত্রে এসেছে আর তা’হলো- কাতারকে আইএস, আল-কায়েদা এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
বিবিসি থেকে পাওয়া, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি একসময় বলেছিলেন, শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা আলোচনায় যাবেন না।
আরব জোটের এ পদক্ষেপের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে,’রিপোর্টাস উইথআউট বর্ডার আল জাজিরা’। তারা বলেছে, যে কোন ধরনের সেন্সরশীপের বিরুদ্ধে তারা।
ইউকে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টের সভাপতি টিম ডওসন বিষয়টি নিয়ে তার চরম উদ্বিগ্নের কথা জানিয়ে দ্রুত এই শর্ত প্রত্যাহার করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি দাবি জানান। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা ও ইত্তেফাক।
আল জাজিরা
২০১১ সালে ‘আরব-বসন্ত’ নামে আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে যুগান্তকারী বৈপ্লবিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ঘটনাপ্রবাহের অসাধারণ কাভারেজ দেয়ায় আলজাজিরা চ্যানেলটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এরই পাশাপাশি চ্যানেলটি লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের উপরও সবার আগে সবচেয়ে বেশি বস্তুনিষ্ঠ তথ্যউপাত্তে সমৃদ্ধ সংবাদ সরবরাহের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি ধরা পড়া ও নিহত হওয়ার খবর ও ছবি সবার আগে বিশ্ববাসীকে আল জাজিরাই দিয়েছিল।
বিশ্বসেরা সংবাদ টেলিভিশনের মর্যাদা পেলো কাতারভিত্তিক ২৪ ঘণ্টা সংবাদ পরিবেশনকারী আল জাজিরা ইংলিশ। রয়েল টেলিভিশন সোসাইটি আল জাজিরাকে ২০১১ সালের বিশ্বসেরা সংবাদ চ্যানেল নির্বাচন করেছে।