মুক্তকথা প্রতিবেদন॥ ৫২ বছর বয়সের ডন। বিয়ে করেছেন ২২ বছর হলো। কিন্তু সন্তান সন্ততি নেই। এতে তার কোন অনুতাপও নেই। তিনি ভালই আছেন। তার নিজের ভাষায়- “আমরা স্বামী-স্ত্রী ভালই আছি। এই করোণা’র মাঝেও আমি আমার এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি”, মোটামুটি আমি ভালই আছি।”
দু-হাজার বিশ’এর ১৫ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। বরফও নয়, তুষারপাতও নয়। সারা এলাকা জুড়ে গভীর কুয়াশা। হাত সামনে দিলে দেখা যায় না। আগের রাতে সামান্য কিছু বৃষ্টি হয়েছিল। তাই রাস্তা একটু ভিজে ভিজে। নিত্যদিনের ন্যায় প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে ‘ডন’এর সাথে দেখা। গসপেল ওক নামের রেলষ্টেশন লগ্ন একটি ছোট্ট কামরার মত ঘরে তার ব্যবসা। ষ্টেশন থেকে পার্লামেন্ট পাহাড়ের দিকে কয়েক পা অগ্রসর হলেই হাতের বাঁদিকে তার ছোট্ট সেলুন। নাম ‘দি মট হাট’। তার সেলুনে সুন্দর করে চুল কাটা হয়। তবে মানুষের নয়, চুল কাটা হয় কুকুরের।
নিজের কৌতুহল থেকে তাকে কিছু বলার উদ্দেশ্যে কাঁচ লাগানো ছোট্ট জানলা পথে তাকে ইশারায় কথা বলার ভাব প্রকাশ করলাম। তিনি হাসিমুখে মূল দরজার দিকে আসতে আমাকেও ভেতর থেকে ইশারা দিলেন। একটুখানি ঘুরে কয়েক পা গিয়ে মূল দওরজায় দাঁড়ালাম। দেখলাম ভিন্ন একজন কুকুর মালিকের সাথে তিনি আলাপ করছেন। যৌবন পেড়িয়ে যাওয়া ওই লোকটির সাথে তার ছোট্ট কুকুরটি রয়েছে। লোকটি আলাপ করছে ঠিকই কিন্তু চোখ তার ‘ডন’এর সুঠাম দেহবল্লরীর ঢেউ লাগানো শরীরের দিকে। তাদের আলাপের ধরণ-ধারণে মনেহল তারা পূর্ব পরিচিত। |
দূরত্ব বজায় রেখে আমি তার পেছনে দাঁড়ালাম। তাদের কথাবার্তায় বুঝলাম ভদ্রলোক তার কুকুরের সারা গায়ের চুল কাটার আলাপ করছেন। ডন তাকে একটি তারিখ দিলেন। কারণ আজ তিনি খুবই ব্যস্ত। হাতে সময় নেই।
এর পর আমার পালা। দু’কদমে কাছে গিয়ে দাড়াতেই আমারও চোখ চলে গেলো তার অপূর্ব সুন্দর গঠনের চেহারার দিকে। অনেকটা বলা যায় আদুরে নাদুস নুদুস চেহারার মানুষ। তবে মজবুদ গড়নের শরীর। চেহারায় কেমন একটা মায়া মায়া ভাব। স্মিত হাসি হেসে বললেন আসুন। বাইরে দাড়িয়েই আমি বললাম- আমি একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের নজরদারি করি। আমার খুব ইচ্ছা তোমার সেলুন নিয়ে কিছু লিখবো। আমাকে কি সে সুযোগ দেবেন? খুবই সহজিয়া মনে মুখভরা হাসি দিয়ে আমাকে আবারো বললেন ভেতরে আসুন।
আমি ভেতরে প্রবেশ করতেই ‘ডন’ বললেন- “তোমার অনলাইনের ঠিকানা দাও।” বললাম, আমাদের অনলাইন বাংলা ভাষায় তুমি তো বুঝবে না। উত্তরে বললেন, অনুবাদ করিয়ে দেখবেন। আর ছবিতো দেখেই চিনবেন। ছবি পড়তে তো কোন ভাষা লাগবে না। আমরা দু’জনেই কিছুটা হাসলাম।
‘দি মট হাট’এর ভেতরে ঢুকে দেখলাম খুব না হলেও ছোট্ট একটি কামরাকে কাঁচ ও কাঠের বিভক্তি দাড় করিয়ে দু’ভাগ করা হয়েছে। ভেতরের ভাগ চুলকাটার জন্য সাজিয়ে রাখা আছে। সেখানে একটি কুকুরকেও দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। এমন ভদ্রভাব নিয়ে কুকুরটি দাড়িয়ে আছে দেখে আমার একটু চিন্তা হলো। কুকুরতো এতো নিরীহ প্রানীর মত দাড়িয়ে থাকার জীব নয়। নড়াচড়া করবে, দু-একটি শব্দ করবে, এটাইতো কুকুরের স্বভাব। নিবিষ্ট চোখে কুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম খুব কোমল একজোড়া কোমড়বন্দের মত রশি দিয়ে হালকাভাবে কুকুরকে উপরের দিক থেকে পেটে-পিঠে বেঁধে রাখা হয়েছে চুল কাটার জন্য। বলা যায় অনেকটা ঝুলিয়ে রাখা। তবে কুকুরের পা চারখানা মোটামুটি টেবিল স্পর্শ করে আছে। অবস্থায় বুঝলাম কুকুরের কোনই কষ্টবোধ হচ্ছে না। কষ্টবোধ এলে কুকুর, কুকরে কুকরে ডাকতো।
সময়টি তার কাজের তাই বেশী কোন কথা না বাড়ায়ে শুধু একটি ছবি ও দু’চারটে কথা বলে বেরিয়ে আসলাম। দু’এক কথা আলাপ করতে গিয়ে জানলাম ৭বছর হয় তিনি এ ব্যবসা করছেন। আর এ জন্য তাকে ২০ সপ্তাহের “ডগ গ্রুমিং” নামের একটি প্রশিক্ষন সম্পন্ন করতে হয়েছে। ব্যবসা নিয়ে তিনি ভালই আছেন, শেষ কথায় জানালেন ডন।
হারুনূর রশীদ, লণ্ডন বৃহস্পতিবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ |