মুক্তকথা প্রতিবেদন।। “বড় হতে চাই! অনেক বড়! তবে ডাক্তার হয়ে। এটি আমার বাবার ইচ্ছা ছিল! বাবার ইচ্ছাই আমি লালন করছি। বাবার ইচ্ছাই আমার মনোজগতে অনুশীলিত হয়ে আমারও ইচ্ছায় রূপ নিয়েছে। ধমনীতে আমার শিক্ষক মা-বাবার রক্ত রয়েছে। এ রক্ত কখনও আমার সাথে বেইমানি করতে পারে না!” এ কথাগুলো বলছিলো ১৭ বছরের যুবতী হৃদিতা। সে আরো বলছিলো-“বড় হয়ে দেশের কাজ করবো। কোন ধরণের অনিয়মকে সায় দেবো না। অনিয়ম-দূরাত্মাদের মোকাবেলা করতে না পারলে আর কিছু না পারি অক্ষম দায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি নেবো নিজ উদ্যোগে। তবুও কোন ছাড় দেবো না!” তার কথায় ছিল হিমালয়সম দৃঢ়তা।
আসল নাম তাসকিয়া ইসলাম হৃদিতা। এবার সতেরো বছরে পা দিয়েছে। টেলিফোনে আলাপ হচ্ছিলো তার সাথে। দু’হাজার বিশ’এর গত ফেব্রুয়ারীর এসএসসি পরীক্ষায় ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ পেয়ে পাশ করেছে এবং ‘টেলেন্ট পুল’-এ বৃত্তি পেয়েছে। শিক্ষিকা মায়ের আদরের দুই সন্তানের একমাত্র মেয়ে হৃদিতা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে-ই বড়। মনে সাহস রাখে দূর্বার! বাবা নজরুল ইসলাম কয়েক বছর হলো প্রয়াত হয়েছেন। বাবা ছিলেন বড়লেখা সরকারী মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যার জ্যেষ্ঠ প্রভাষক। মা রাহাত আরা(লিমা) বড়লেখার ‘নারী শিক্ষা একাডেমী অনার্স কলেজ’এর পদার্থ বিদ্যার জ্যেষ্ঠ প্রভাষক।
হৃদিতা আরো বলছিল যে তার বাবার লালিত স্বপ্নই তার মাঝে অঙ্কুরিত হয়ে তার স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বাবার সে স্বপ্ন তার মনের অজানা গহীনে গোপনে প্রতিটি ধমনীতে রক্ত প্রবাহে ঢেউ তুলে প্রতি মূহুর্তে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মনের অজানা অলিন্দ থেকে বাবার সে কথার সুর ভেসে আসে-‘আমার হৃদিতা বড় হয়ে ডাক্তার হবে’! তাইতো হৃদিতার স্বদর্প ঘোষণা আমি ডাক্তার হবো। বড় ডাক্তার হবো। অনেক অনেক বড়! বাবার স্বপ্ন পূরণের ভেতর দিয়ে মা-ভাইয়ের এক নিরাপদ সুনিশ্চিত সুদিন গড়ে তোলার আশায় দিন গুনে যায় হৃদিতা।
তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে বড় হয়ে দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছে আছে? উত্তরে সে বললো-“আমাদের দেশের চলমান রাজনীতি আমি পছন্দ করি না। রাজনীতির এমন ধরণ আমার মনে কোন সাড়া জাগায় না।” তবে দেশের জন্য কাজ করার প্রবল ইচ্ছা মনে কাজ করে তার। আরেক দফা তার কাছে জানতে চাইলাম, দেশের উচ্চ-শিক্ষিত মানুষের মাঝে এতো অনিয়ম-দূর্ণীতির মাঝে তুমি দেশের জন্য কাজ করতে গেলে পদে পদে সমস্যায় পড়বে। এসব মোকাবেলা করবে কিভাবে? জবাবে সে যা বললো তা এক মজবুত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। উত্তরে সে বললো, “যে কোন ধরণের অনিয়মই হোক না কেনো, প্রথমে বুঝাবো নিষেধ করবো। তাতেও যদি কাজ না হয়, তা’হলে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে চেষ্টা করবো অনিয়মের পথ থেকে কাঁটা সরাতে। এর পরও যদি না পারি, তা’হলে এমন অনিয়ম-দূর্ণীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ কাজে স্ব উদ্যোগে ইস্তাফা দিতে তো পারবো। তাই করবো। তবুও কোন অনিয়মের সাথে আপোষ করবো না।”
এতো তেজোদ্দীপ্ত ছিল গলার স্বর, কথায় এতো দৃঢ়তা, এ যেনো নতুন এক বাংলাদেশের হাতচানি।
|
তাসফিয়া ইসলাম হৃদিতা
হৃদিতা সিলেটের ‘জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এণ্ড কলেজ’এ ভর্তি হতে যাচ্ছে আগামীতে। হৃদিতাদের সামনে সকল অনিয়ম দণ্ডবৎ হয়ে চিরতরে বিদেয় হোক, গড়ে উঠুক নতুন এক বাংলাদেশ। আমরা হৃদিতার মত দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিটি যুবক-যুবতীর জীবন আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে দেশকেও জঞ্জালমুক্ত করে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলুক এ কামনাই করি। -হারুনূর রশীদ
|