আজ অধ্যাপক আফসান চৌধুরীর টিভি আলাপচারিতা দেখে-শুনে যখন কিছু লিখতে বসেছি ‘লেপটপ’ নিয়ে, তখনই চোখে পড়লো একজন সাকিব আলি মোহাম্মদ আসলামের কিছু লেখা। অনেকটাই অধ্যাপক আফসানের সাথে একটু যেনো মিল খুঁজে পেলাম। আফসানও তার আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বললেন, এভাবে হলেতো আমরা দেশ রক্ষা করতে পারবোনা!
পাকিস্তানের জন্ম এবং এর দীর্ঘ সময়ের রাজনীতি থেকে সারা বিশ্ব কি শিখতে পেরেছে? নিজের কাছে নিজের এমন এক জিজ্ঞাসার উত্তরে ওই সাকিব আলী মোহাম্মদ আসলাম কৌড়া ডাইজেস্টে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর লিখেছেন। তার গবেষণায়, তিনি মোট ১১টি বিষয়ে মনে মনে প্রশ্ন এনে তার নিজের জবাব দিয়েছেন। তার প্রশ্নগুলো এসেছে, আমার ধারণা, তার জীবন দর্শন ও পাকিস্তানের রাজনীতি পর্যবেক্ষন থেকে। যে এগারোটি জিজ্ঞাসাকে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন এগুলো আহামরি কোন নতুন আবিষ্কার নয়, খুবই সহজবোধ্য এবং মানুষ কিংবা দেশের ক্ষেত্রে সচরাচরই এমন কর্ম বা বিচ্যুতি ঘটে থাকে। কিন্তু সচরাচর আমরা সাধারণ মানুষের উপলব্দিতে এসব বিষয় আসেনা। আমরা সাধারণ মানুষ এগুলো বিবেচনায় আনার প্রয়োজন কেউই মনে করিনা। কেউ বলে দিলেই মনে হবে, হ্যাঁ ঠিকতো! এমনইতো হওয়া উচিৎ। আর বলতে হবে, কাকতালীয়ভাবেই তার উপলব্দিগুলো আমাদের দেশের চলমান অবস্থার সাথে কেমন একটু মিল মিল মনে হয়েছে।
অবশ্যই সাধারণ মানুষতো আর সকলেই গবেষক নয়। এগুলো গবেষকদেরই দায়ীত্ব। তাঁরা মানুষের সামনে তথা জাতীর সামনে তাদের গবেষণালব্দ এসব দিকগুলো তুলে নিয়ে আসবেন। ক্ষেত্রবিশেষে সমাধানও বলে দেবেন। আর আমার দৃষ্টিতে, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে মোহাম্মদ আসলাম সে কাজটিই করার চেষ্টা করেছেন।
কৌড়াতে তার নামের শেষে I.C.S. লিখা রয়েছে। আমি ‘ইন্টারনেট তথ্যকোষ’এ অনেক খোঁজ করে বিশ্বস্ত তথ্য হিসেবে এই মোহাম্মদ আসলাম বিষয়ে কিছুই পাইনি। ফলে তাঁর বিষয়ে কিছু লিখার সুযোগ নাই। তবে তার আলোচিত সেই এগারোটি বিষয়ের মধ্যে যে কয়টিকে বর্তমান বাংলাদেশ প্রসঙ্গে খুবই প্রয়োজনীয় বলে আমার মনে হয়েছে সে কয়টিকে এখানে উল্লেখ করা ভাল মনে করি।
পাকিস্তান রাজনীতির ৭০ বছরের অনুশীলনের ইতিহাস থেকে ও তার নিজের পর্যবেক্ষন থেকে তিনি মনে করেন বেশী বেশী করে শ্মরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে পাকিস্তান ভুল করেছে। আর এর খেসারত পাকিস্তান দিয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি বলেছেন-
বেশী বেশী করে শ্মরণার্থীকে গ্রহন করো না। এরা অবশেষে দেশের অর্থনীতিকে বিকলাঙ্গ করে দেবে এবং দেশের ভেতরে মাদক, গন্ডগোল, সন্ত্রাস একটু একটু করে বিস্তার ঘটাবে।
শিক্ষা প্রশ্নে তিনি খুব সংক্ষেপেই বলেছেন যে, শিক্ষাকে অবজ্ঞা করা একেবারেই ঠিক নয়, এতে সমৃদ্ধি বিনষ্ট হতে পারে।
তিনি প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের দিকটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এনে বলেছেন-
প্রতিবেশীর সাথে খারাপ সম্পর্ক ঠিক নয়, কারণ বসবাসতো এমন নয় যে প্রতিবেশী খারাপ হলে অন্য কোথায়ও গিয়ে নতুন করে বসবাস শুরু করা হবে, প্রতিবেশীতো অনন্ত অসীম সময়ের বসবাসকারী একেবারে কাছের বন্ধু। তাকে জেনে নিয়ে নিজের আচরণ দিয়ে আপন করে নেয়াই সর্বোত্তম।
যেকোন বিষয়েই কাজ-কর্ম হলো নিয়ামক শক্তি। কর্মফলতো এমনি এমনিতে হয় না। যেকোন ব্যক্তি বা রাষ্ট্র যে কাজ করে যাবেন, ঠিক সেই সেই নমুনার ফল অনিবার্য্য। সেই উপলব্দি থেকে কাজ-কর্মের বিষয়ে তিনি লিখেছেন-
কর্ম বা কাজ, যা আমরা করে থাকি বহু বড় একটি বিষয়, সাপকে কখনও খাওয়ানোর আশা করো না এবং সাপের কাছ থেকে কিছু পাবে এমন মনে করা ঠিক নয়।
তিনি মনে করেন একটি পরিবারের মত একটি দেশেরও ভবিষ্যৎ কতিপয় মানুষের হাতে থাকে। কতিপয় মানুষ যারা কোন পরিবার বা দেশের সামনের কাতারে থাকেন তাদের চিন্তা-চেতনা ও ইচ্ছার উপরই পরিবার, সমাজ বা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। এ কথাটি বলতে গিয়ে তিনি মহাত্মা গান্ধীর একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
গান্ধী বলেছিলেন- একটি দেশের ভবিষ্যৎ কতিপয় মানুষের হাতেই থাকে “তুমি যা হতে চাও সেই পরিবর্তনকেই হতে দাও”।
জনাব সাকিব আলী মোহাম্মদ আসলাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এনেছেন তার লিখায়, যা আমরা অনেকেই জানি ও বুঝি। কিন্তু নিজেদের স্বার্থেই প্রয়োজনে বলিনা। তিনি লিখেছেন, একটি দেশের
রাজনীতিবিদগন সেই দেশেরই সাধারণ নাগরীক, নিজে যদি ভাল না হও তা’হলে তারা ভাল হবে এমন আশা করা যায় কি করে!
খুবই অবোধ্য এবং গ্রহন করতে মন চায়না এমন একটি বিষয় তিনি বলেছেন গণমাধ্যম নিয়ে। কথাটি খুবই ছোট্ট কিন্তু তার তাৎপর্য সুদূর প্রসারী। কখনও মনে হয়েছে কথাটি সত্য। পরমূহুর্তেই আবার মনে হয়েছে এমন যদি হয় তা’হলে সত্যকে জানবো কিভাবে? তিনি লিখেছেন-
গণমাধ্যমে বিশ্বাস করোনা, এরা মিথ্যাচার করে।
দূর্ণীতি প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন তা খুবই খাঁটী কথা। অন্ততঃ প্রেক্ষাপট যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভারত হয়। তার লিখার প্রেক্ষাপটতো বুঝতেই পারি, যা ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিভিন্নমূখী দূর্ণীতির অবলোকন তার মনোজগতে এই প্রতিক্রিয়া বা মতামতের জন্ম দিয়েছে যে,
দূর্ণীতি এক ধরনের ঘুণপোকা, দূর্ণীতি খুব ধীরে ধীরে সবকিছুকে খেয়ে ফেলে।
কল্পিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের স্রষ্টা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন-
ধর্ম রাজনীতিতে আসতে পারে না, ধর্ম মানুষ এবং স্রষ্টার মধ্যেকার একটি বিষয়। এ উক্তিটি করেছিলেন প্রয়াত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
তিনি তার পর্যবেক্ষনলব্দ জ্ঞানের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে আমাদের সকলেরই জানা সেই কথাটি বলেছেন যে,
পৃথিবীটা নিয়ত পরিবর্নশীল একটি জায়গা। এখানে এক পল সময়ের মধ্যে বন্ধু শত্রুতে পরিণত হয় আর শত্রু বন্ধু হয়ে যায়। অতএব কর হে সুজন তার আগে করো সন্ধান।
আর তার পর্যবেক্ষনের সব শেষ কথা তিনি বলেছেন যে, মানুষ না চাওয়া পর্যন্ত কোন পরিবর্তন আসে না। মন থেকে মানুষকে চাইতে হয় কাঙ্ক্ষিত সেই পরিবর্তন।
পরিবর্তন তখনই আসে যখন মানুষ নিজে পরিবর্তনের সহযোগী হয়।
মোহাম্মদ আসলাম শেষে লিখেছেন- অনেক তিক্ততা আছে কিন্তু ৭০ বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম থেকে পাকিস্তানকে শিখতে হবে। তিনি খুবই আবেগের সুরে মনোবাসনা জানিয়েছেন যে আগামী ৫ বছরে তিনি পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত দেশ হিসেবে দেখতে চান। দেখতে চান একটি সুশিক্ষিত, সুসংজ্ঞাবদ্ধ, সুন্দরভাবে চালিত জাতি হিসেবে যা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে একটি স্থিতিশীল দেশ।