মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। আমরা বলি কাঠ পোকা বা ঘুনে পোকা। ইংলিশ ভাষা বলে ‘মেনি লেগড মিলিপেডে’। অর্থাৎ বহু পা বিশিষ্ট ঘুনে পোকা বা কীট। তেমনি এক ঘুনে পোকা পাওয়া গেছে ব্রহ্মদেশে। একটি গাছের আঠালো মোমজাতীয় পীতাভ তৈলস্ফটিকের মাঝে আটকা পড়ে আছে। অবশ্য প্রানে বেঁচে নয়, মৃত। কিন্তু মৃত হলে কি হবে, সব মৃতই মৃত নয়। এরা জীবন্তের চেয়েও আরো বেশী করে কথা বলে।
গবেষকদের কাছে এসব প্রানহীন জীব-জন্তু বা কীট-পতঙ্গ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এরা বলে দেয় লক্ষ লক্ষ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা কেমন ছিল, কোন অবস্থায় বসবাস করতো! আরো কত কি! তাই গবেষকদের কাছে এদের কদর জীবন্ত মানুষের চেয়েও বেশী। এমন খবরই প্রকাশ করেছে ২০১৯সালের ‘Zookeys’ নামের দিনলিপিকার গতকাল বৃহস্পতিবার, ২রা মে। আর এই আবিষ্কারের ঘটনাকে খুবই বৈজ্ঞানিক রস দিয়ে ‘এটলাস অব্সকোরা’য় লিখেছেন একজন সাব্রিনা ইমব্লের।
ঘুনে পোকাটি ইংরেজী এস অক্ষরের রূপে গাছের আটালো পীত রংয়ের স্ফটিক স্বচ্ছ মোমরসের আবরণের ভেতরে আদিপদ্বতিতে সংরক্ষিত। পোকাটির শরীরের কিছু কিছু অংশ একটু বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলেও সাদা-মাটা চোখে তা দেখার নয়। ফসিল হয়ে যাওয়া এই ঘুনে পোকার শরীর আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীদের চোখ তো একেবারে চড়কগাছেরও উপরে উঠে গেছে বিস্মিত হয়ে। দেখা গেছে, এই ঘুণেপোকাটির শরীর গঠন পদ্বতি আগের পাওয়া ঘুণে পোকার শরীর গঠন পদ্বতির থেকে বিস্ময়করভাবে ভিন্ন। গবেষক বিজ্ঞানীগন আগে এসব কীট-পতঙ্গের পরিবর্তিত হয়ে যাবার যে যে লক্ষণ গুলো আবিষ্কার করেছিলেন, নতুন করে আবিষ্কৃত এই ঘুনেপোকার শরীর গঠন পদ্বতি অতীতের সকল ধারনাকে বদলে দেয়ার মত।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো এর বয়স! গবেষকদের মতে আজ অবদি ধরে নিলে এ পোকাটির বয়স দাড়ায় প্রায় ৯৯ মিলিয়ন বছর অর্থাৎ ৯কোটি ৯০হাজার বছর আগের এ ফসিল। এ ফসিল পাওয়ায় বিজ্ঞানী-গবেষকগনের চিন্তা জগতে নতুন এক মাত্রার ভাবের সঞ্চার করেছে। ঘুনে পোকার বর্তমান শ্রেণীবিন্যাসে নতুন এক শাখা যুক্ত করার প্রয়োজন হয়ে উঠেছে বলে বুলগারিয়া প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাতীয় যাদুঘরের গবেষক লেখক পাভেল স্তয়েভ এমন মন্তব্য করেছেন।
ঘুনে পোকা জাতীয় কীট-প্রানীর গবেষনার জমি বা এলাকা সীমিত কিন্তু খুবই শক্তিশালী। বিগত ৫০ বছরের গবেষনার ইতিহাসে এ কীট প্রানীর বিবর্তনে বেশ একমুঠভরা শাখা-প্রশাখা পাওয়া গেছে যা বৈজ্ঞানিক যুক্তিসিদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই বিজ্ঞানী ও গবেষকগনও যথাবিহীত নিয়মানুযায়ী লেটিন ভাষায় এর নাম দিয়েছেন ‘Burmanopetalum inexpectatum’। ইংরেজীতে বলতে গেলে বলতে হবে- ‘আনএক্সপেক্টেড’। আর বাংলায় বলতে হবে অভাবনীয় বা অবিশ্বাস্য!
জেনে রাখা ভাল যে, ব্রহ্মদেশে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ঘুনে পোকার ৫২৯টি নমুনার মধ্যে নতুন পাওয়া এই নমুনাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিজ্ঞানীদের ভাষায় এ নমুনাকে বলা হয় ‘Callipodida’ নমুনা। এই ‘কাল্লিপদিদা’ নমুনার ঘুনেপোকার কোন ফসিল আগে কখনও পাওয়া যায়নি। ফলে এ ফসিল একটি প্রমাণ দেয় যে একই নমুনার কীট বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মত এই দক্ষিনপূর্ব এশিয়া অঞ্চলেও জন্মায় বা জন্মেছিল।