লন্ডন: বুধবার, ১৮ই মাঘ ১৪২৩।। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগন দুনিয়ার সেরা শান্তিপ্রিয় মানুষ বলেই আমরা আগে জানতাম। বৌদ্ধগন মাছ-মাংস খান না। তারা মূলত নিরামিশভুজি। কিন্তু ব্রহ্মদেশের রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনা বিশেষ করে নারী ধর্ষণের মত হিংস্র জংলী আর পাশবিক আচরণ বৌদ্ধদের বিষয়ে বিশ্বমনন পাল্টে গেছে। এবং এটাই স্বাভাবিক। রাখাইনে তারা রীতিমত ১৯৭১ সালের পাক সামরিক-জংলী বাহিনীর মত নারী ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ সফররত কফি আনান কমিশনের সদস্যদের জবানে তাই উঠে এসেছে। তারা জানিয়েছেন যে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা নারী মায়ানমারেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাতের পরই এই তথ্য দিয়েছেন তাঁরা। এমন সংবাদটি অনেকটা বিস্তারিত প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার।
সাক্ষাৎ শেষে সংবাদমাধ্যমকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের অভিযোগের সঙ্গে কফি আনান কমিশনের সদস্যরা একমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিজেদের চোখে দেখে এসেছেন। কমিশন সদস্যরা জানিয়েছেন, মায়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আসা ৮০ শতাংশ নারীই মায়ানমারে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। রোহিঙ্গার সংখ্যা আনুমানিক ৫ লক্ষ।’’
এ দিন আলোচনা শেষে কফি আনান কমিশনের সদস্য ঘাসাম সালামে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘ধর্মীয় কারণ একটি মায়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা। তবে একমাত্র নয়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।’’
মায়ানমারের কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়াও এ দিন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অভিবাসন-বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি এ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) অধ্যাপক সি আর আবরার।
উল্লেখ্য, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছান কফি আনান কমিশনের তিন সদস্য। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মায়ানমার নাগরিক উইন ম্রা ও আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাসাম সালামে। এর পর ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে তাঁরা কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণ করে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন। সেখান থেকে ফিরে ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিস) কার্যালয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা। (আনন্দবাজার থেকে)