গঠন হতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার!
“আমার পরিবার এবং আমি – আমাদের যথেষ্ট হয়েছে।” বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. সজীব ওয়াজেদ জয় এমন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন তাঁর মা শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। তিনি বলেছেন, “আমার মনে হয় এখানেই শেষ।”
তার আবারও রাজনীতিতে আসার বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, “আমার সন্দেহ আছে এ বিষয়ে। সত্তরের উপরে বয়স তার। তিনি এতোটাই অসন্তুষ্ট যে দেশের উন্নয়নের জন্য এতো কঠোর পরিশ্রম করেছেন যেটাকে সবাই মিরাকল বলে। এরপরও একটা ছোট্ট অংশ তার বিরুদ্ধে গিয়ে, এমন বিক্ষোভ করলো…। আমি মনে করি তিনি আর এসবে নেই। আমার পরিবার ও আমিও নেই, যথেষ্ট হয়েছে।”
উল্লেখ্য, সজীব ওয়াজেদ জয় সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছিলেন এমন জানিয়ে ওয়াজেদ জয় বলেন, “পরিবারের অনুরোধে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি দেশত্যাগ করেছেন।”
“তিনি খুব অসন্তুষ্ট, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত ১৫ বছরে তিনি বাংলাদেশের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন।”
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ প্রয়োজন যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে গত সোমবার ৫ আগষ্ট কারফিউর মধ্যেও ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামে। এরই এক পর্যায়ে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দিল্লি চলে যান।
ওই সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন-“এটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হতো। দরিদ্র দেশ ছিল, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো। এখন এ দেশকে এশিয়ার উদীয়মান টাইগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি খুবই অসন্তুষ্ট”।
সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বিরোধীদল ও বিক্ষোভকারীদের কঠোরভাবে দমন করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন-“শুধুমাত্র গতকালকেই ১৩ জন পুলিশকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে মারা হচ্ছিলো। যখন উচ্ছৃঙ্খল জনতা মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলে? পুলিশ এমন পরিস্থিতিতে কী করতে পারে বলে আপনি আশা করেন?”
ঢাকায় কারফিউ থাকলেও আন্দোলনকারীদের সাথে বিক্ষোভে যোগ দিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে, বিবিসির এরকম একটি প্রশ্নে ওয়াজেদ জয় বলেন, “বাংলাদেশ আঠার কোটি মানুষের দেশ। রাস্তায় নামা মানুষের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে বড় কোনো সংখ্যা নয়। এটা ছোট্ট একটা গ্রুপের কণ্ঠ। পরবর্তী কয়েক দিন, কয়েক বছরে আপনি এর ফলাফল দেখবেন। সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে গেছে। বাংলাদেশ আরেকটা পাকিস্তান হিসেবে গড়ে উঠবে।”
রাজনৈতিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা কখনো ছিল না জানিয়ে মি. ওয়াজেদ বলেন, “আমাদের কখনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না, আমাদের কখনো ক্ষমতার লোভ ছিল না। আমরা দেশের জন্য কাজ করেছি। তাই দেশের জনগণ যদি মনে করে তারা ভালো করতে পারবে তাহলে ‘গুডলাক’।”
আশির দশকে গণতন্ত্রের জন্য শেখ হাসিনা রাস্তায় ছিলেন অথচ এখন তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক বছরে। কেন তিনি এতো অজনপ্রিয় হলেন? এমন প্রশ্ন করা হয় সজীব ওয়াজেদ জয়কে।
তিনি বলেন, “পশ্চিমে এটা নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। বাংলাদেশের গত নির্বাচন খুব শান্তিপূর্ণ ছিল। অথচ এর আগের নির্বাচনগুলোতে বিরোধীদল ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছিল।”
“গণপরিবহনে আগুন দিয়েছিল, শত শত মানুষ নিহত হয়েছিল। নির্বাচনের সময় আবারো সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল যাতে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হতে না পারা একটা ছোট্ট গ্রুপ রাস্তায় নেমেছে।”
সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা দখল করা নিষিদ্ধ জানিয়ে মি. ওয়াজেদ বলেন, “ক্ষমতা দখল করা এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও আন্দোলনকারীরা এটা মানবে কি না কে জানে? পরে কি হবে এটা এখনো কেউ জানে না।”
আরো অনেক কথাই আলাপ হয়েছে বিবিসি’র সাথে মি. সজীব ওয়াজেদের। সেগুলো স্থানাভাবে এখানে আর দেয়া গেলো না। তবে উল্লেখযোগ্য যা তিনি বলেন তার একটি হলো, তিনি বলেন- “আমার মায়ের উপর ‘ম্যাসিভ এসাসিনেশন অ্যাটেম্পট’ হয়েছিল। ২৩ জন মানুষ নিহত হয়েছিল, ২০০ এর বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের অ্যাম্বাসেডরের উপর হামলা হয়েছিল, আমার ধারণা গত ১৭ বছরে মানুষ তা ভুলে গেছে।”
এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে আলোচনা করেছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সর্বশেষ খবরে জানাগেছে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্ত্ততি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।