বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি কে? এই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। কাজের প্রমাণ সাপেক্ষে চন্দ্রাবতীকেই ধরা যেতে পারে প্রথম নারী কবি। তাঁর অনেক কাজ রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আমরা জানি।
তবে, এর বাইরে আরেকজনের কথা এসে যায়। ইনি চন্দ্রাবতীরও আগে জন্ম নিয়েছেন। যদিও তাঁর বিষয়ে সব পণ্ডিত একমত না, তবুও তাঁকে অস্বীকার করা যায় না। কারণ, তাঁরও কিছু কবিতা, ভণিতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এই কবির নাম রামী।রামীর আগেও দুই একজন মহিলা কবির ভণিতা পাওয়া যায়, তবে সেগুলো তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য নয়।
এই রামীকে আমরা জানি। আসলেই তাঁর বিষয়ে অবগত আমরা। তবে, ভিন্নভাবে। রামীর সঙ্গে চণ্ডীদাসের স্মৃতি জড়িত রয়েছে। চণ্ডীদাস–রজকিনীর প্রেমের কাহিনি জানেন না, এমন লোক পাওয়াটা বিরলই বটে। প্রেমের মড়া জলে ডোবে না, এই গান শোনেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। এই গানেই দুচরণ হচ্ছে, চণ্ডীদাস আর রজকিনী, তাঁরাই প্রেমের শিরোমণিগো। হ্যাঁ, এই রজকিনীই হচ্ছেন কবি রামী।
দ্বিজ চণ্ডীদাসের সাথেই রজকিনী রামীর প্রেম ছিলো। তরুণীরমণ নামের এক কবি ছিলেন আঠারো শতকের গোড়ার দিকে। তাঁর ‘সহজ সাধনাতত্ত্ব‘ নামে একটি ছোট গ্রন্থে চণ্ডীদাস ও রামীর প্রেম কাহিনির কথাও রয়েছে।
চণ্ডীদাসের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিলো, সে সম্বন্ধে রামীর রচিত একটি গীতিকা আবিষ্কৃত হয়। এ সম্বন্ধে দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন, চণ্ডীদাসের মৃত্যু সম্বন্ধে প্রায় দুইশত বৎসরের প্রাচীন হস্তলিপি সম্বলিত একটি প্রমাণ বসন্ত বাবু আবিষ্কার করিয়াছেন। যা রামীর রচিত একটি গীতিকা।
কোঁথা যাও ওহে, প্রাণ বঁধূ মোর, দাসীরে উপেক্ষা করি। না দেখিয়া মুখ, ফাটে মোর বুক ধৈর্য ধরিতে নারি।।
তার পিতা মনসা মঙ্গল কাব্যের অন্যতম রচয়িতা দ্বিজ বংশী দাস এবং মাতার নাম সুলোচনা৷ নিবাস অধুনা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার পাটোয়ারী গ্রাম৷ তার রচনাগুলোর মধ্যে মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা ও রামায়ণ কথা (অসমাপ্ত) অন্যতম৷ মৈমনসিংহ গীতিকায় তার কথা পাওয়া যায়৷ তাঁর নিজের জীবনের ট্র্যাজেডি নিয়ে রচিত লোকগাঁথা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার মানুষের মুখে মুখে ফিরে এসেছে৷
(এইবেলাডটকম থেকে)