আমিনুররশীদ বাবর।।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এ মাসে বাঙ্গালি জাতি চুড়ান্ত বিজয় লাভ করেছিল। বিজয় দিবস বাঙ্গালির অহঙ্কার। বাঙ্গালির ধারাবাহিক আন্দোলন- সংগ্রামের চুড়ান্ত রূপ হচ্ছে বিজয় দিবস। মূলত ‘৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে। এক পর্যায়ে জনযুদ্ধে রূপ লাভ করে। নয় মাস যুদ্ধ চলে। রণনীতির ধারাবাহিকতায় নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধ তীব্র রূপ ধারন করে। যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমনে হানাদার পাকিঃ বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পালাতে থাকে। একি ভাবে পাকিবাহিনী মৌলবীবাজার থেকেও পলিয়ে গিয়েছিল। মরণপণ তীব্র লড়াই করতে হয়নি।
মৌলবীবাজার মুক্ত করার ইতিহাস মৌলবীবাজারের ব্যাপক জনগোষ্ঠী আজো পুরোপুরি জানেনা। সেই নাজানা কাহিনী জানানোর জন্যই আমার এই প্রয়াস। মৌলবীবাজার মুক্ত করার যুদ্ধ শুরু হয় ২ ডিসেম্বর থেকে। মৌলবীবাজারের পূর্ব সীমান্তে শমসেরনগর বিমানবন্দর ও চাতলাপুর বিওপি ছিল পাকিবাহিনীর ক্যাম্প। মৌলবীবাজার মুক্ত করতে হলে এই দুটি শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস করতে হবে। যৌথবাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় এই দুই শত্রু ঘাটি ধ্বংস করার। ২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে আক্রমন করে হানাদার বাহিনীর উপর। আক্রমনে হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে মৌলবীবাজারের দিকে যায়। যৌথবাহিনী পিচু ধাওয়া করে মৌলবীবাজারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৪ ডিসেম্বর বিকালে যৌথবাহিনী মৌলবীবাজার শহর থেকে ৪ কি:মি: দূরে কালেঙ্গা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। অপর দিকে পিটিআই হেডকোয়াটারের হানাদারবাহিনী বড়টিলা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। এখানে উভয় পক্ষে ক্ষুদ্র আকারে যুদ্ধ হয়। রাতভর এ যুদ্ধ চলে। এখানের লড়াইয়ে মিত্র বাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে যৌথবাহিনীর মনোবল কিছুটা ভেঙ্গে পরে। এ অবস্হায় যৌথবাহিনী কেন্দ্রীয়ভাবে সকল সেক্টরে যুদ্ধ কৌশল পরিবর্তন করে বিমান হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন লিখিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ থেকে যতদূর জানা যায়, ৫ ডিসেম্বর পাকিবাহিনীর উপর বিমান হামলা শুরু হয়। এ হামলায় পাকিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়। যুদ্ধের এ অবস্থায় পরাজয় নিশ্চিত জেনে মৌলভীবাজার থেকেও হানাদারেরা সিলেটের দিকে পালিয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী তথা যৌথবাহিনী হানাদার মুক্ত মৌলবীবাজার শহরে প্রবেশ করে এবং শেরপুরে গিয়ে অবস্থান নেয়।
বিজয়ের আনন্দে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসে। চারিদিক থেকে রব উত্থিত হতে থাকে জ— য় বাংলা, তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ। মৌলবীবাজারের মানুষ মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নি:শ্বাস নেয়। মৌলবীবাজারের ঘরে-ঘরে লাল সবুজের বিজয় নিশান পৎপৎ করে উড়তে থাকে। যে নিশান আজ উড়ছে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে।
এ যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার মেজর দায়ান এবং তার সহযোগী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর্জা আজিজ আহমদ বেগ। বিজয়ের এই মাসে মৌলবীবাজারের মানুষ এই দুই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তথ্যসূত্র: প্রয়াত মির্জা আজিজ আহমদ বেগের লিখা “আমি মৌলভীবাজারের বিজয় দেখেছি”