লন্ডন: কেউ কেউ বলছেন, পছন্দ তো করতে হবে প্লেগ আর কলেরার মধ্যে! তা হলে আর ভোট দিয়ে লাভ কী! তিন দিন পরেই ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত লড়াই। তার আগে ভোটারদের কারও কারও মধ্যে এখন এই মেজাজ। গত কাল দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী অর্থাৎ অতি-দক্ষিণ নেত্রী মারিন ল্য পেন এবং মধ্যপন্থী ইমানুয়েল মাক্রঁ-র টিভি বিতর্ক ছিল। তা ভোটারদের মনে কী প্রভাব ফেলেছে, বৃহস্পতিবার তার একটা আভাস মিলেছে।
সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, ইউরোপ— সব কিছু নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মার-মার কাট-কাট বিতর্ক টিভিতে দেখেছেন দেশের ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ। ফরাসি টিভি চ্যানেলের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ৬০ শতাংশ মানুষ বলছেন, দু’জনের মধ্যে মাক্রঁকেই বেশি ভরসা করা যায়। মাক্রঁ-র উদারতা এবং বাজারমুখী সংস্কারের কাছে ল্য পেনের ‘সবার আগে ফ্রান্স, (ফ্রান্স-ফার্স্ট)— এই জাতীয়তাবাদ ফিকে ঠেকেছে, বলছেন সমীক্ষকরা। শেষ বেলায় মাক্রঁ-র হয়ে সরব হয়েছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। তিনি বলেছেন, “ফ্রান্সের সাফল্য গোটা বিশ্বের
কাছেই প্রাসঙ্গিক ।”
বুধবার অবশ্য টানা আড়াই ঘণ্টার বিতর্কে মাক্রঁ বা ল্য পেন—কেউ কাউকে এতটুকু জমি ছাড়েননি। একে অপরের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ বিষোদ্গারও করেছেন। ল্য পেনের চোখে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার মাক্রঁ (৩৯) ‘উচ্চবিত্তের প্রার্থী’ এবং ‘প্রতিষ্ঠানের চোখের মণি।’ তা ছাড়াও, মাক্রঁকে ‘উদ্ধত’, ‘বখে যাওয়া’ বলেছেন ল্য পেন। তরুণ মাক্রঁ জবাবে তাঁর চেয়ে ন’বছরের বড় ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিদ্বন্দ্বীর উদ্দেশে বলেন, “উনি দুর্নীতিগ্রস্ত, ভয়ঙ্কর জাতীয়তাবাদী। ওঁর অন্তরে প্রবল ঘৃণা। ঠিকঠাক কোনও তথ্য পর্যন্ত ওঁর কাছে নেই। ক্ষমতায় এলে ফ্রান্সে গৃহযুদ্ধ নিশ্চিত।”
কারও কারও মনে পড়ছে মারিন ল্য পেনের বাবা জঁ-মারির কথা। অতি দক্ষিণরা ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতাকে জীবনের অঙ্গ করে তুলতে পারেন— এই অভিযোগ তুলে ২০০২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত রাউন্ডে জঁ-মারির প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ প্রার্থী জাক শিরাক ওঁর সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতেই আপত্তি জানিয়েছিলেন।
বুধবার সেই উগ্র জাতীয়তাবাদের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন ল্য পেন। ইউরোপ প্রসঙ্গে বিতর্ক গড়াতেই রে রে করে ওঠেন তিনি। তাঁর মতে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের প্রতি মাক্রঁ একটু বেশিই ‘সহৃদয়।’ ল পেনের সাফ কথা, “ফ্রান্সে নেতৃত্ব দেবেন এক জন মহিলা। হয় আমি, নয় মিসেস মের্কেল।” মাক্রঁ ইসলামি জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেত্রীর।
মাক্রঁও ‘রণং দেহি’ মেজাজে চড়াও হন তাঁর উপরে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে ল্য পেনের প্রস্তাবমতো ইউরো ছেড়ে ফ্রাঁ-তে প্রত্যাবর্তন ফ্রান্সের পক্ষে যে একেবারেই বাস্তবোচিত নয়, তুলে ধরেন সে কথা। ফ্রান্সে মূল্যবৃদ্ধির জন্য ইউরোর প্রতি রোষ রয়েছে অতি-দক্ষিণ নেত্রীর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯টি দেশ ইউরো নিয়ে যা-ই বলুক, ল্য পেনের মতে, “এটি ব্যাঙ্ক-কর্তাদের নোট, জনতার নয়।”
বিতর্ক যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট ‘হিংস্র’ ছিল, তা মানছে ফরাসি সংবাদমাধ্যমও। প্রাক্তন সোশ্যালিস্ট প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স বলেছেন, “বিতর্কে ল্য পেনের আসল চেহারাটা দেখা গেল! খুব উদ্বেগ হচ্ছে।” সমীক্ষা বলছে, এখনই ভোট হলে মাক্রঁ-র ঝুলি ভরে দিতেন ৬০ শতাংশ মানুষ। বার্তা সংস্থার বরাতে আনন্দবাজারের খবর।