হারুনূর রশীদ।।
চীনা কমুনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হি জিনপিং একই সাথে তিনি জনগণতান্ত্রিক চীনের প্রেসিডেন্ট এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনেরও চেয়ারম্যান। গেল সপ্তাহে চীনা এনপিসি(নেশনেল পিপলস কংগ্রেস)-এর সকল সদস্য, মোট সদস্য সংখ্যা ২৯৭০জন, তাকে আবারও দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনঃনির্বাচনকে অনুমোদন করেছে। একই সাথে তিনি দলকর্তৃক পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন সে দেশের সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রনকারী সরকারী কমিশনের প্রধান হিসেবে। চীনা কমুনিস্ট পার্টির প্রয়াত নেতা মাও সে তুং এর পর তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এতো ক্ষমতাবান ও দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় দিলেন।
গেল সপ্তাহে চীনের জাতীয় গণকংগ্রেস তাকে আমৃত্যু প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দিয়ে দেশের সংবিধান সংশোধন করে। তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে আগে দুই পর্বের বেশী কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলে বিধান ছিল। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য এ নিয়ম বদলে দিয়ে অনির্ধারিত সময় পর্যন্ত তারা প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন বলে বিধানে নতুন ধারার সংযোজন করা হয়েছে।
আমেরিকার মেসাচুয়েটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও জিওপলিটিক্স এর অধ্যাপক গডফ্রি রবার্টস, একজন ব্যক্তির এতো ক্ষমতার বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তার মতে, ৫ বছর আগে যে ক্ষমতা নিয়ে হি জিনপিং চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন সে ধরনের কোন মৌলিক ক্ষমতা বর্তমানের হি জিনপিং-এর নাই। মূলতঃ তেমন কোন ক্ষমতাই তার নেই।
পশ্চিমারা এভাবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে চীনের প্রেসিডেন্টও আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মত সমান ক্ষমতাশালী। কিন্তু আসলে সে ভাবে নয়। দু’টি দেশের প্রেসিডেন্টদ্বয়ের ক্ষমতা ও ভূমিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই মেরুর।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রতিদিনই কেবিনেট ও প্রশাসনিক কর্মচারী নিয়োগ করেন এবং চাকুরীচ্যুতও করেন। প্রতিদিনই কোন না কোন মানুষকে অপহরণ, নির্যাতন এমনকি গুপ্তহত্যার নির্দেশ দেন। প্রতিদিনই কোন না কোন দেশের সাথে আমেরিকার যুদ্ধের ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্ট এমনতরো কোন কাজই করতে পারেন না। তিনি কেবল “বোর্ড অব ডাইরেক্টরস”(স্টিয়ারিং কমিটি) অর্থাৎ পরিচালকদের চেয়ারমেন যা হি জিনপিং ২০১২ সালেও ছিলেন। এবং ঠিক এ কারণেই চীনের প্রেসিডেন্টের আরো ৬জন মানুষের প্রয়োজন। এরা সেই ৬জন মানুষ যাদের তিনি পছন্দ করে নিয়োগ করতে পারেন না বা বের করে দিতেও পারেন না। যদি তার নিজের মনের কোনে এ ধরনের কোন বাসনা কাজ করেও থাকে তবুও তিনি তা করতে পারবেন না। এমনই সে শক্ত নিয়ম।
তিনি, ওই ৬জনের সমর্থন ছাড়া কিংবা কোন উপাত্ত ছাড়া এখনও আইনকে আগাইয়া নিতে পারেননা!
তিনি তার প্রধানমন্ত্রীর পদে পছন্দসই কাউকে আনতেই পারেন না যিনি তার নির্বাচনে প্রধান বিরুধী হিসেবে কাজ করেছেন। যা পারেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
তিনি কোন সরকারী কর্মিকে নিয়োগ দিতে যেমন পারেন না তেমনি পারেন না বরখাস্ত করতে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এতো ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হি জিনপিং তার পিতৃবন্ধু সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট লি কোয়ান ইউ-এর পরামর্শ গ্রহন করে চলেন। এই লি কোয়ান সেই নেতা যিনি বলেন, একজন নেতা তিনিই, যিনি তার ভবিষ্যৎ দর্শনকে তার সমর্থকদের মাঝে আমূল এঁকে দিতে পারেন। দর্শনকে কৌশলে রূপ দিতে পারেন। একাজে তাকে অবশ্যই কাজের মূল সমর্থকদের বুঝিয়ে বশে আনতে হবে। এবং এভাবেই নেতা শেষ পর্যন্ত গোটা জনগোষ্ঠীকে আঠা লাগানোর মত জড়ো করতে পারেন তার উদ্দেশ্য সফলে কাজ করে যেতে ও সাহায্য করতে।
নেতা হি জিনপিং সেই কাজটিই করেছেন। তিনি ২০৪৯সাল পর্যন্ত তার সুদূর প্রসারি চিন্তাকে সফলভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তার মানুষের কাছে। এবং এ কাজই তাকে কর্তৃত্ব এনে দিয়েছে।
এ কর্তৃত্ব তিনি অর্জন করেছেন অন্যদের সেবা দিয়ে এবং তাদের জীবন যাত্রার মানকে উন্নত করে। চীনের ইতিহাসে একমাত্র তিনিই, প্রত্যেক কর্মি মানুষের মজুরী শতকরা ৪০ভাগ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তার প্রথম ক্ষমতায় আসার পরই। ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র দূর করেছেন তিনিই।
দলীয় সাঙ্গাৎদের দ্বারা ক্ষমতাবান আর দুর্ণীতিবাজ কর্মচারীদের আক্রমণ করার মত সন্ত্রাসী ঘৃণ্য কাজকে তিনিই মোকাবেলা করে গোটা দেশের সমাজে শান্ত ও স্থিরতা এনে দিয়েছেন।
এ সমূহ কাজই তিনি করতে সক্ষম হয়েছেন তার “বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ”এর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা দেখিয়ে দিয়ে, যে শান্তি সমৃদ্ধির বিশ্ব ঘুরে বেড়ায় তার মনোজগতে।
শুধু স্বপ্ন আর পরিকল্পনা বলে দিয়েই তিনি কান্ত হননি, নিজে দায়ীত্ব নিয়ে সামনে থেকে কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মাও সে তুং তাই করেছিলেন আর এজন্যই মাওয়ের এতো ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল। কিন্তু এর পরেও বলতে হয় মাও আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান ছিলেন না। সে কারণে হি জিনপিং ও তত ক্ষমতাবান হতে পারেননি। তথ্যসূত্র: কৌড়া ডাইজেস্ট ও অধ্যাপক গডফ্রি রবার্টস
লণ্ডন, শনিবার ২৪শে মার্চ ২০১৮সাল