মুক্তকথা: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা আজ বুধবার। বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের শুভ জন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ- এই তিন স্মৃতিবিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত।
বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বোধি বা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। এই দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীগণ স্নান করেন, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন। ভক্তগণ প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হন। এছাড়া বুদ্ধগণ এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেদ প্রার্থণাও করে থাকেন।
বৌদ্ধধর্মমতে, মহামতি গৌতম বুদ্ধ ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্বে নেপালের শাক্যরাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শুদ্ধোধন ও রানি মহামায়ার ঘরে জন্ম নেওয়া এই মহামানবের শৈশবে নাম ছিল সিদ্ধার্থ। সংসারজীবন ত্যাগ করে তিনি মানুষের মুক্তির জন্য সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। বোধিলাভের পর দীর্ঘ ৪৫ বছর তিনি বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। প্রতিষ্ঠা করেন অহিংস বৌদ্ধধর্ম।
সামপ্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসাবে বাংলাদেশে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতির ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।’
এ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভয়, ক্রোধ ও লোভ-লালসাকে পরিহার করে গৌতম বুদ্ধ সারা জীবন মানুষের কল্যাণে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংস, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করেছেন। বর্তমান বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গৌতম বুদ্ধের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন।’
এই দিনটি যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের জন্য বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বুড্ডিস্ট ইয়ুথ ফোরাম, বুড্ডিস্ট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রভাতফেরি, বুদ্ধপূজা, শোভাযাত্রা, সেমিনার, প্রদীপ প্রজ্বালন ও সমবেত প্রার্থনা।