ব্রেক্সিটের এই তাল-গোল পাকানো অবস্থার কারণ কি? এ নিয়ে সৌখীন কম্পিউটার প্রোগ্রামার জন স্মল লিখেছেন তার মনের কথা। লিখেছেন কৌড়া ডাইজেস্টে। তিনি শুরু করেছেন একটি ষঢ়যন্ত্রের আভাস দিয়ে। লিখেছেন- “কেউ যদি নিরীহ সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর উদ্দেশ্যে কোন পরিকল্পনা করে থাকে তা’হলে অনিবার্য্যভাবে সেই কৌশল তাল-গোল পাকিয়ে ব্যর্থ একটি বোকাকৌশল হয়ে ফিরে আসবে কারিগরের কাছে।
জনস্মল’এর কথার সাথে আমি সহমত পোষণ করি। আমিও মনে করি, একটি ‘বোবা কুশপুত্তল কৌশল’ কোন ভাবেই সফলকাম হতে পারে না। এ ধরনের কৌশল সবসময়ই বন্ধ্যা বা বাঁজা গাভীর মত। বাচ্চা দেয় না, দুধ আসবে কোত্থেকে! আর ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার কুচিন্তা প্রসূত কৌশলই তার জ্বলন্ত উদাহরণ গণতান্ত্রিক দুনিয়ার কাছে।
এখানে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসাই মূল বিষয় নয় বলেই আমি মনে করি। মুল বিষয় কতিপয় মানুষের ক্ষমতায় থাকার লড়াই। ‘ইটন ভবন’এর ক্ষমতাসীনরা চান না, তাদের ক্লাবের বাহিরের লোকজন ক্ষমতায় আসুক। সে জেরেমী করবিন হোক কিংবা নাইজেল ফেরেজদের মত রাজনীতিকই হোক। তাদের বাসনা যেভাবেই পারা যায় ক্ষমতার আসন চেপে থাকা। ‘ইটন ভবন’এর এসব কুশিলব ধনবানপুত্রদের মনের ভাবনা এই যে শুধু তারাই এবং কেবল তারাই ক্ষমতার মালিক। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ফেলেদিয়ে ভিনদেশী অন্যদের সাথে তারা সার্বভৌম কর্তৃত্বে ভাগ দিতে যাবেন কেনো? তারাই শ্রেষ্ঠ!
ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার এই “ব্রেক্সিট” মূলতঃ সুবিধাপ্রাপ্ত, চটপটে, নাদুসনুদুস আর বাপের টাকায় পড়ুয়া ধনবান পরিবারের সন্তানদের সাথে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিদের একটি গণতান্ত্রিক লড়াই। ধনিকগোষ্ঠীর এসব সন্তানেরা জীবনে কখনও দেখেনি বাস্তবতা কি! কঠিন সময়কে মোকাবেলার তাদের কোন অভ্যেসই নেই। রাজনীতির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বিষয়ে তারা হাওয়াই চিন্তায় বিশ্বাসী। ভিনদেশী সে যতই জ্ঞানী হোক না কেনো, তাদের ক্ষমতার অংশীদার বানাতে রাজী নয় ওই ইটন পড়ুয়ারা। টাই-স্যুট পড়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রীত ভবনে হুকুমদার হয়ে বসে সুরা-মাংস-নারী নিয়ে সময় কাটতে উস্তাদ এসব ইটনবাদীরা। “ব্রেক্সিট” তাদের সৌখিন রাজনীতি চর্চ্চা ও এর ভেতর দিয়ে ক্ষমতায় ফিরে যাবার এক সোপান মাত্র। নিরীহ সাধারণ মানুষের ভোট আদায় করে নেয়ায় এই “ব্রেক্সিট” তাদের হাতিয়ার ছাড়া আর কিছুই নয়। ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কি গতি হবে এ নিয়ে ভাবনার সময় তাদের নেই। ক্ষমতায় কিভাবে টিকে থাকা যায় তাদের কাছে সেটিই মূখ্য বা প্রধান।