একজন মুসলমান কয়েদির পিঠে ওঁম চিহ্ন এঁকে ছেঁকা দেওয়া হয়েছে ভারতের তিহার জেলে। অমানবিক ঘটনাটি সাধারণ মানুষের জানার সুযোগ হয় যখন ওই কয়েদীর মাতা-পিতা তাদের সন্তানের জীবন তিহার কারাগারে খুবই হুমকির সন্মুখীন বলে কর্করদোমা আদালতে নালিশ দাখিল করেন। ইন্ডিয়াটুডে.ইন আজ ১৯শে এপ্রিল এ খবর প্রকাশ করেছে।
৩৪ বছর বয়সী সাব্বির ওরপে নাব্বিরকে যখন মেজিস্ট্রেট রিকা পারিহারের কাছে জবানবন্দীর জন্য আনা হয় তখন মেজিস্ট্রেটও দেখতে পান যে সাব্বিরের পিঠে ওঁম চিহ্নের ছেঁকা দিয়ে পিঠকে ঝলসিয়ে দেয়া হয়েছে। সাব্বির গত ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে তিহার জেলে রয়েছেন।
উক্ত সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে, গত ১২ই এপ্রিল শুক্রবার সাব্বির তাদের বেরেকের পাকঘরের ‘স্টোভ’ ঠিকমত কাজ করছে না বলে তিহার ৪নং জেলের তত্ত্বাবধায়ক রাজেশ চৌহানের কাছে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগে জেল কর্মকর্তা ও কর্মচারী ক্রোধান্বিত হয়ে সাব্বিরকে মারধর করে। অমানবিক ঘটনার এখানেই শেষ নয়। এর পর জেল অধিপতি রাজেশ চৌহান সাব্বিরকে তার অফিসে ডেকে নেন এবং তিরস্কার করে বলেন-“নেতা হবার জন্য অভিযোগ করছিস?” বলেই সাব্বিরকে চৌহান ও অন্যান্য কিছু জেল কর্মচারী আবারও মারধোর করে। মারধোরে সন্তুষ্ট না হয়ে চৌহান হাতের কাছে থাকা একটি ওঁম চিহ্নের ধাতব বস্তু আগুনে গরম করে সাব্বিরের পিঠে দাগ দিয়ে দেন।
এ ঘটনায় শারীরিক যন্ত্রনা ও মনের দুঃখে সাব্বির ২দিন কিছু খেতে পারেননি। এতোকিছুর পরও রাজেশ চৌহানের মানবতাবোধ জাগেনি উপরন্তু গত ১৪ই এপ্রিল চৌহান সাব্বিরকে ডেকে বলেন-“তুমি এমনিতেই হিন্দুত্বে বদলে গেছো কারণ ‘নভোরাত্রি’তে তুমি উপোস করেছো। জেলের অন্যান্য কর্মচারীরাও সাব্বিরকে তার ধর্মের জন্য দোষারূপ করে বলে- “তোমরা মুসলমানেরা আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছো।”
জেলের ভেতরে সংগঠিত অমানবিক ঘটনার পুরো বিবরণ সাব্বির তার পরিবারের কাছে বলেন। এমন অমানুষিক নির্যাতনের কথা শুনে সাব্বিরের পরিবারের লোকজন উকিলের সাথে যোগাযোগ করেন। ফলে উকিল জগমোহন গত ১৬ই এপ্রিল জেলে গিয়ে সাব্বিরের সাথে দেখা করেন। সাব্বিরের পিঠে ওঁম চিহ্নটি তখনও শুকায়নি। উকিল নিজেও তা দেখেন।
গত ১৭ই এপ্রিল সাব্বিরের বিরুদ্ধে চলমান মামলার তারিখ ছিল। তাকে শুনানীর জন্য আদালতে হাজির করা হয়। আদালত কক্ষে বিচারক সাব্বিরকে তার ঘটনা বলার আদেশ করেন। তখন বিচারক নিজেই সাব্বিরের পিঠের ছেঁকা দাগ দেখতে পান।
অবস্থা বিবেচনায় বিচারক সাব্বিরকে ডাক্তারী পরীক্ষার নির্দেশ দেন এবং অবিলম্বে জেল তত্ত্ববধায়ক রাজেশ চৌহানের দেখবাল থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তী ২৪ঘন্টার মধ্যে জেলের ‘সিসিটিভি ফুটেজ’ আদালতে দাখিলসহ অন্যান্য কয়েদিদের বিস্তারিত বক্তব্য গ্রহন ও দাখিলেরও নির্দেশ দেন আদালত।
জেল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে কেনো সাব্বিরের প্রতি এমন আচরণ করা হয়েছে এবং লিখিতভাবে আদালতে তাদের উত্তর দাখিল করতে হবে এবং আদালত ব্যবস্থা নেবে। বলেছেন সাব্বিরের উকিল জগমোহন। উল্লেখ যোগ্য যে, সাব্বিরের কাছে দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল এবং সে মামলায় সাব্বিরকে আটক করে মামলা চলছে।
গোটা বাংলাদেশ যখন ভারতের সাথে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে আন্তরিকভাবে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে ঠিক এমন অবস্থায় ভারতীয় কোন একটি জেল কর্তৃপক্ষের এমন অপরিনামদর্শী কর্মকাণ্ড ৯৫% ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে কিছু না কিছু প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অনেক বিবেকমান মানুষ। সূত্র: ইণ্ডিয়াটুডে.ইন