মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কালারবাজার এলাকায় কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী নলু নদে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর টাকা যেন জলে গেছে। বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে নৌকা নিয়ে যেতে না পারায় স্থানীয় বাসিন্দা, বালু ব্যবসায়ী, কৃষক ও জেলেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মৌলভীবাজার এলজিইডি’র অধিনে ‘গ্রামীন প্রবেশাধিকার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় ৪৬ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, সংযোগ সড়ক ও ছোট সাঁকো নির্মাণ করতে ২০২০ সালের ৩ মার্চ পাওয়া প্রকল্পের ‘ভেরিয়েশন কন্ট্রাক্ট’ মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার ৩শ ৬৫ টাকা। যার ‘মূল চুক্তি’ মূল্য ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭শ ৩৩ টাকা। কাজটি ২০২১ সালের ৮ মার্চ শেষ হবার কথা থাকলেও পূণঃ সংশোধন করে মেয়াদ বাড়িয়ে সমাপ্তির তারিখ দেওয়া হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। অতিরিক্ত প্রায় আড়াই বছর চলে গিয়ে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও নতুন কালভার্ট ও সংযোগ সড়কের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
শেরপুর জেলার ধ্রুব মোশারফ(জেবি) নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বন্যা কবলিত এলাকায় নির্মিত মূল সেতুটি তুলনামূলক ভাবে পিলার বসিয়ে অনেক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচা সংযোগ সড়কে নিচু করে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। চলছে কালভার্ট নির্মাণের কাজও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াটিলা গ্রামের একজন শিক্ষক বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি এ সেতুটি নির্মাণ করার সময় স্থানীয় আ’লীগ নেতারা মিলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সেতুর টাকা লুটে ভাগ করে নিয়েছেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উজানের পাহাড়ি বালুমহাল থেকে বালু ভর্তি নৌকা নিয়ে মাঝিরা এই নদী দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে বের হয়ে সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় বালু বিক্রি করতেন। বর্ষায় কৃষকরা বোরো ধান বোঝাইসহ ও জেলেরা নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতেন। নিচু করে সেতু নির্মাণ করায় ৩ বছর ধরে এ পথে নৌকা আসা যাওয়া করতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছি। কে শুনে কার কথা। প্রতিবাদে কোনো কাজ হয়নি। চান্দভাগ হাফিজিয়া ইবতেদায়ী মাদ্রসার সহকারি শিক্ষক মাওঃ তাহেদ আহমদ বলেন, এই এলাকায় বেশিরভাগ দরিদ্র মৎসজীবি পরিবার রয়েছে। তারা বর্ষা মৌসুমে ওই নদী দিয়ে মাছ ধরে থাকেন। সেতু নিচু করে নির্মাণ করায় তাদের যাওয়া আসা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল।
স্থানীয় বকশিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ঔষধ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা ডাঃ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান(এমবিবিএস) বলেন, এই সেতুটি মানুষের যাতায়াতের সুবিধা ও নিচ দিয়ে যাতে নৌকা যায় এর আলোকে নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি অনেক নিচু করে সেতু নির্মিত হয়েছে। বর্ষাকালে সেতুর নিচ দিয়ে ছোট ট্রলার চলাচল করলে দূর্ঘটনার শিকার হবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মোশারফ(জেবি) এর মুঠোফোনে আলাপচারিতায় প্রতিষ্ঠানের এক সহযোগী জানান, প্রকৌশলী যেভাবে ডিজাইন ব্যবস্থা করেছেন, আমরা সেভাবেই কাজ করেছি।
জানতে চাইলে রাজনগর এলজিইডি প্রকৌশলী রাজু সেন বলেন, সেতুর কাজ শুরুর সময়ে আকরাম হোসেন তালুকদার নামের প্রকৌশলী ছিলেন। আমি শুধু ছোট খাল ও সংযোগ সড়কের কাজ করছি।
নলু সেতুটি কেন নিচু করে নির্মাণ করা হলো এমনটি জানতে চাইলে মৌলভীবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, “এখন তো নৌকা চলে না, নৌকার ব্যবহার কমে গেছে। তবে, আমি এসে “ফিনিসিং’ এর কাজ করছি”। আমার আগের প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছেন। |