জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও মৌলভীবাজারে বিল সেচ করে আবাদ, মৎস নিধন যেন থামছেই না!আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার।। দেশের বৃহত্তম হাওর অধ্যুষিত ও পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার। মৌলভীবাজারের ৬টি হাওরে ১২ হাজার ৩শ ৭৪ হেক্টর জমি জুড়ে ছোট বড় ২৯২টি বিল রয়েছে। এর মধ্যে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, হাইল হাওর, কাউয়াদিঘী হাওর অন্যতম। দেশের সিংহভাগ মানুষের মাছের চাহিদা মেটাতে মৌলভীবাজারের এসব হাওর থেকে মৎস আহরন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো-সেই মৎস আর আগের মত উৎপাদন হচ্ছেনা জলমহালের আওতায় থাকা এসব হাওরের বিলগুলো থেকে। মৎস প্রজনন বাঁচিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের তরফত থেকে বিল সেচ করে জল কমাতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু ইজারাদারা আইনের তোয়াক্কা না করে পুরো বিল সেচ করে দেশীয় প্রজাতীর মাছ ধ্বংশ করছে
ইজারাদাররা মোঠা অংকের টাকা গুনতে পুরো বিলে ইচ্ছে মাফিক জাল ঠেনে মাছ মারার পরও থেমে নেই। তারা মেশিন দিয়ে পানি সেচ করে বিলের তলার কাঁদা পর্যন্ত বের করে বড় মাছ থেকে শুরু করে ছোট চিংড়ি পর্যন্ত ধরে গাড়ি বোঝাই করে বাজারজাত করে। তারা পাচ্ছে বাড়তি অর্থ আর এতে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতীর নানা মাছ।
অথচ জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ইজারাদারদেও পরিস্কার বলা হয়েছে বিল সেচ করে পানি না কমাতে। ১৯৮৫ সালের মৎস অধিদপ্তরের এক জরীপে হাকালুকি হাওরের ২৩৮টি বিলের মধ্যে ১২০ প্রজাতির মাছের অস্থিত্ব পাওয়া গেলেও এ পর্যন্ত ৩২ প্রজাতীর মাছ আর খুজেই পাওয়া যাচ্ছে না। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার অন্তর্গত দেশের অন্যতম বৃহৎ হাওর কাউয়াদিঘীর
গুলাইয়া, মাজরবান্দ, হালখাটুয়া, আওয়া বিল, ফারেঙ্গা, উলাউলি,উপরগুয়ালী ও পুকরি বিলে উল্যেখযোগ্য হারে মাছ পাওয়া যায়। ৫টি উপজেলার জুড়ে অবস্থিত হাকালুকি হাওরের উল্যেখযোগ্য বিলগুলো হলো-চাতলা বিল, চৌকিয়া বিল, ডুলা বিল, পিংলারকোণা বিল, ফুটি বিল, তুরাল বিল, তেকুনি বিল, পাওল বিল, জুয়ালা বিল, কাইয়ারকোণা বিল, বালিজুড়ি বিল, কুকুরডুবি বিল, কাটুয়া বিল, বিরাই বিল, রাহিয়া বিল, চিনাউরা বিল, দুধাল বিল, মায়াজুরি বিল, বারজালা বিল, পারজালাবিল, মুছনা বিল, লাম্বা বিল, দিয়া বিল।
ফাল্গন ও চৈত্র মাসে উল্যেখযোগ্য এসব বিল সেচ করে ছোট পোনা মাছ পর্যন্ত নিধন করা হয়। তাছাড়া “জাল যার জলা তার” সরকারি এসম নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে বেশী লাভের আশায়
মৎসজীবী ছাড়াও অন্যান্য শ্রেনী পেশার মানুষেরা এখন বিল ইজারা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেক মৎসজীবীরা তাদের এ আদী ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ,স,ম সালেহ সোহেল বলেন, হাওর থেকে আগের সব মাছ হারিয়ে গেছে। হাওরগুলোতে মাছের অভয়ারন্যের ব্যবস্থা করতে হবে। যত্র-তত্র ফিশারী বন্ধ করে হাওরের বিশালতা বৃদ্ধিসহ মৎস সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে পারলে মাছ আবার বৃদ্ধি পাবে।
মৌলভীবাজার জেলা মৎস অফিসের খামার ব্যবস্থাপক মোঃ জহিরুন্নবী বলেন, ইজারাদারা জাল দিয়ে অথবা মাছ ধরার সুবিধার্তে কিছু পানি কমিয়ে মৎস ধরতে পারে। পুরো বিল সেচ করে মৎস আহরণ করার চেষ্ঠা করলে তাদের বিরোদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আলম খান বলেন, কোন ইজারাদার এসব হাওরে বিল সেচ করে পানি শুকিয়ে কমাতে পারবেনা। যদি এরকম কোন ঘটনা কোথাও ঘটে তবে এসব ইজারাদারদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।