মৌলভীবাজারের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। গত সোমবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে থেকে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ২২১ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যজন মীর নাহিদ আহসান দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের অন্যতম সদস্য ও সংগঠনের সভাপতি মীর জাহিদ হাসানের অনুজ। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি।
মীর নাহিদ আহসান ২২তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন চৌকস কর্মকর্তা। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০০৩ সালে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার পদে যোগদান করেন।
চাকুরী জীবনে তিনি গাজীপুরে সহকারী কমিশনার(ভুমি) পদে, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমাদ মানকিনের একান্ত সচিব, বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জেকবের ব্যক্তিগত সহকারি পদে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপ-পরিচালক পদে ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার পদে কাজ করেন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের সময় বিশ্বজুড়ে ছিল করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবলীলা। এই ভীতিকর পরিস্থিতির মাঝেও জেলা প্রশাসক মহোদয় উনার সকল সহকর্মীদের নিয়ে অনলাইন ও অফলাইন প্লাটফর্ম আয়োজন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার মানুষকে দিয়েছেন শান্তির ছোঁয়া।
যুগ্ন সচিব মীর নাহিদ হাসান। ছবি: মুক্তকথা |
দেশের নাট্যাঙ্গনে সুপরিচিত নাট্যজন মীর নাহিদ আহসান পারিবারিকভাবেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। সেই কর্মস্পৃহার সুবাদে উর্বরতায় পরিপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী এ জেলায় পদার্পণ করেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজের মেধা-কর্ম উজাড় করে দিতে। অল্প সময়েই জেলার প্রজ্ঞা ও মেধাসম্পন্ন গুণীজনদের কাছে আপন হয়ে ওঠেন।
তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজারের উদ্যোগে সম্পাদনা করেন স্মারকগ্রন্থ ‘খুঁজে পাই চেতনার বাতিঘর’। প্রকাশিত এই গ্রন্থ দেশের প্রথিতযশা লেখকদের পাশাপাশি মৌলভীবাজার জেলার খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে ও নামকরণেও আমরা মীর নাহিদ আহসানের রুচিশীলতা ও মেধা-মননের প্রকাশ পাই। যেমন- বর্ষামঙ্গল, বেদনার পঙক্তিমালা, খুঁজে ফিরি পিতার পদচিহ্ন, সহজ মানুষ ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে। ‘চেতনার বাতিঘর’এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার কাজটিও ছিল অনন্যতায় পরিপূর্ণ। মাসব্যাপী ‘স্বাধীনতা উৎসব’ পালনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গন নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয় বিজয় উৎসব, নাট্য উৎসব, মুক্তির উৎসব, পালা গানের আসর ইত্যাদি।
জেলাব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন-যাপন, বর্ণিল উৎসব ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতি জেলাকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। সুযোগ্য জেলা প্রশাসক গত দুই বছরে চা বাগানের ‘ফাগুয়া উৎসব’, মণিপুরীদের ‘রাস উৎসব’ গারোদের ‘ওয়ানগালা উৎসব’ গুলোতে আগ্রহের সাথে অংশগ্রহণ করে প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি, উৎসব ও ভাষা বুঝতে চেষ্টা করেছেন। আন্তরিকতার সাথে তাদের উদ্বুদ্ধ করে রেখেছিলেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ জেলায় তিনি সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ মানুষকে আপন করে নেন
নিজের কাজের ধরণ দিয়ে।
২৩ মার্চ ২০২৩ তারিখ মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক(ডিসি) মীর নাহিদ আহসানের বদলির আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে বদলি করা হয়। সর্বশেষ যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেলেন।
একজন দক্ষ ও মানবিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার এই পদোন্নতিতে মৌলভীবাজারবাসীর মাঝেও আনন্দ বয়ে গেছে। জানতে পেরে তিনিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সকলের কাছে দোয়া চেয়ে বলেছেন, আগামীর দিনগুলোতেও যেন একইভাবে সততা ও নিষ্টার সাথে দেশের সেবায় নিয়োজিত থেকে কাজ করে যেতে পারেন।