লন্ডন:‘বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যুদ্ধের কারণে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২৩ কোটি শিশুর জীবন বিপন্ন।’ বলেছেন ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী। রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গভর্নিং কাউন্সিল সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি একথা বলেন।
এসময় শিশুদের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন লক্ষ্য ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘রিড্রেসিং ইনইকোয়ালিটিজ : ডেলিভারিং অন ডিগনিটি অ্যান্ড ওয়েল বিং ফর অল’।
কৈলাস সত্যার্থী বলেন, ‘আমরা যখন এই সম্মেলন করছি তখন ২৭০ মিলিয়ন শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। ২১ মিলিয়ন মানুষ বিক্রি হয়ে শ্রমদাসে পরিণত হয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না, সহ্য করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে ১০০ মিলিয়ন শিশু দাসত্ব, পাচার ও শিক্ষাবঞ্চনাসহ বিভিন্ন সহিসংতার শিকার হচ্ছে অন্যদিকে ১০০ মিলিয়ন তরুণ রয়েছেন যারা চাচ্ছেন পৃথিবীকে বদলে দিতে। তাদের পৃথিবী বদলে দেয়ার শক্তি, ক্ষমতা ও আদর্শ আছে। আমরা কি এই তরুণদের পাশে দাঁড়াতে পারি না?’
কৈলাশ সত্যার্থী আরও বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার শিশু ক্ষুধা ও দারিদ্যের কারণে মারা যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে তারা মারা যাচ্ছে না, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। ২৭ লাখ শিশু এই মুহূর্তে স্কুলে যাচ্ছে না। আড়াই লাখ শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে।’
কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, ‘আমাদের সমাজে এমন একটি ধারণা আছে- অসমতা আমাদের জীবন সঙ্গী। অথচ আমাদের হাতে রয়েছে ডিজিটাল অভ্যুত্থান। একইসঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১০ কোটি মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়েছে।’
এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন,প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস করে সরকারকে চাপে রাখতে হবে। এমপিরাই কাজটি করতে পারেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে ২৩০ মিলিয়ন শিশু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে জেগে উঠেছে। এই শিশুরাই শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে। নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করছে। অথচ এই বিষয়টি এমডিজিতে ছিল না। এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি আমাদের বাজেট ও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরে কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, কয়েক দশক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন সিইও ২০ জন শ্রমিকের সমান আয় করতেন। আর এখন এই বৈষম্য বেড়ে ১:২০০ তে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ মাত্র ৮ জন ধনীর কাছে আছে। দিনে দিনে এই বৈষম্য বাড়ছে।’
আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে কৈলাশ বলেন, ‘কর্পোরেট নেতৃত্বের ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এই ক্ষমতা মেলালে চলবে না। আপনারা কেবল জনগণ, ভোটার ও এলাকার জনপ্রতিনিধি নন আপনারা লাখো মানুষের প্রত্যাশা ও স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনরা তাদের বিবেক এবং বিশ্বাসের রক্ষক।’ -এইবেলাডটকম থেকে