মৃতদেহসহ রাস্তার পাশে গাড়ী দাড় করিয়ে গাড়ী ফেলে চালক ও এম্বুলেন্স কর্মী পালিয়ে যায়। ভয় কোভিডের! যদি ধরে ফেলে। মায়া, মমতা, আত্মীয়তা, সবকিছু ভুলে যায় মানুষ। চোখ মুজে নিলে এমন সুন্দর পৃথিবীর এতো ভালোবাসার মানুষগুলোও যে কতো নিষ্ঠুর হয়ে যায় আজিবুন্নেছা টুনু কি জীবন দিয়ে তা বুঝতে পেরেছেন? আমরা জানিনা। আর এমন প্রশ্ন সবসময়ই উত্তরহীন। তবে কোভিড-১৯ সে বোধ আমাদের মধ্যে তৈরী করে দিয়ে গেছে। আজিবুন্নেছাকে শেষ যাত্রায় গোসল করিয়ে দেয়ার কেউই ছিল না। যদিও শেষে প্রানের ধন ওই মেয়েরাই ধোয়া ধুয়ির কাজটা করেছিল। তাও তাদের অনেক বুঝিয়ে বলার পর রাজী হয়। অথচ এরাই আজিবুন্নেছার সবচেয়ে কাছের মানুষ। নিজের নাড়িছেড়া প্রানের ধন! মনে হয় একেই বলে নিয়তি।
কোভিড-১৯। ভয়াবহ মহামারী। দুনিয়ার বুকে এ পর্যন্ত মহামারী আকারে যেসব রোগব্যাধির আবির্ভাব হয়েছে তার মধ্যে এই কোভিড-১৯ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ ও জীবন সংহারি। সিলেট জেলার উসমানী নগর থানার সাদীপুর গ্রামের মৃত শোয়া মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ আজিবুন নেছা টুনু কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা ইউনিটে মৃত্যু বরন করেন। শেখ বোরহান উদ্দিন(রহ) ইসলামী সোসাইটি(বিআইএস) মৌলভীবাজার দল গত ৩০ জুন ২০২১ বুধবার রাত ১০ ঘটিকা থেকে শুরু করে ভোর ৪ ঘটিকা পর্যন্ত সময় নিয়ে তার দাফন-কাপনের কাজ সম্পন্ন করে।
মারা যাবার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ বোরহান উদ্দিন(রহ) ইসলামী সোসাইটি(বিআইএস) মৌলভীবাজার দলের দপ্তর সচিব সিরাজুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করেন। সাথে সাথে তিনি সংগঠনের দাফন কাপন ও সৎকার টিমকে প্রস্তুত করে রাত ১০টায় সাদীপুর গ্রামে গিয়ে পৌঁছেন। ওখানে গিয়ে যে দৃশ্য দেখেন তা তার ভাষায়- রাস্তার পাশে এ্যাম্বুলেন্সের ভিতর লাশ পরে আছে। কেউ নেই পাশে ড্রাইভারও উধাও।
তার জানানো বিবরণের পরের দিক ছিল এরকম- সেখান থেকে কাদা পানিয়ে একাকার কাঁচা রাস্তা দিয়ে লাশ নিয়ে দাফন কাপনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজে সংগঠনের কর্মীরা কাজ করেন। লাশ বাড়িতে নিয়ে দেখা যায় গোসল করানোর মত কোনো মহিলা পাওয়া যাচ্ছে না। তখন উনার মেয়েদেরকে বুঝিয়ে গোসল করাতে রাজি করে বাহির থেকে সহযোগিতা করেন সংগঠনের সদস্যরা। তারপর আরো কঠিন পরিস্থিতি! কবর খনন করার মতো কেউ নেই। সহযোগীতা আমরা করবো শুধু কবর খনন করার অভিজ্ঞ দুজন ব্যবস্থা করার কথা জানালে অনেক খুঁজাখুঁজি’র পর দুজনকে পাওয়া যায়।
ফলে সংগঠনের সদস্যদের সহযোগিতায় কবর খনন করা হয়, কিন্তু কবরের নিচ থেকে উঠতে থাকে পানি। রাত ২:৩০ মিনিটে ঢাকা সিলেট মহা সড়কে জানাজার নামাজ পড়ে কোনো রকম বালতি দিয়ে পানি সরিয়ে আজিবুন নেছা টুনু-কে তার জীবনের প্রিয় আদর এবং ভালোবাসার মানুষগুলোর অনুপস্থিতিতেই শুধু তাঁর ছেলে বিহীন তিন মেয়ে’র ঘরের ছোট ছোট নাতীদের উপস্থিতিতে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।
আজিবুন নেছা টুনু’র এই বিদায় যাত্রা’য় অংশগ্রহণ করেন “শেখ বোরহান উদ্দিন(রহ) ইসলামী সোসাইটি(বিআইএস) মৌলভীবাজার দল”এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব, টিম লিডার -আশরাফুল খান রুহেল, সাংগঠনিক সচিব- সোহান হোসাইন হেলাল, টিম সদস্য- মাহবুবুর রহমান খান অপু, ইয়াসিন তালুকদার, সিরাজুল ইসলাম, আমির হোসেন, নাঈম তালুকদার, কামরান আহমেদ চৌধুরী, তিতুমীর আহমেদ, রাফি খান।
|