লন্ডন: লন্ডনের নর্থ কেন্সিংটনের গ্রেনফেল টাওয়ার। উঁচু ২৪ তলা ভবন। গত কাল মধ্যরাত সময় অনুমান ১২.৫৪ মিনিটে ওই দালানে এক ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ওই সময়ই ফায়ার সার্ভিসকে ডাকা হয়। এখনও কেউ বলতে পারছেন না কোথা থেকে এ আগুনের উৎপত্তি। এ পর্যন্ত ১২ জন প্রান হারিয়েছেন। এম্বুলেন্স সার্ভিস এ পর্যন্ত ৬৮জনকে লন্ডনের ৬টি বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে চিকিৎসার জন্য। এর মাঝে ১০জন তাদের নিজের উদ্যোগেই হাসপাতালে যেতে পেরেছেন বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮জন খুব জটিল চিকিৎসায় আছেন।
‘লাঙ্কাস্টার ওয়েস্ট এস্টেট’ নামের একটি ‘সোস্যাল হাউজিং’এর একটি ব্যবসায়িক অংশ হচ্ছে এ দালানটি। লন্ডনের কেনসিংটন এন্ড চেলসি কাউন্সিল ১৯৭৪ সালে এ সুউঁচু দালানটি নির্মান করে। তারাই মূলতঃ মালিক। কাউন্সিলের প্রায় হাজার খানেক মানুষ এ সুউচ্চ দালানে থাকেন। ২৪ তলা দালানে ১২০টি ফ্লাট বাড়ী। নিচ থেকে ৪ তলা পর্যন্ত অফিস, আবাসিকদের হাটা-চলাফেরার খালি জায়গা। ৫ম তলা থেকে ২৪ তলা পর্যন্ত আবাসিকদের ফ্লাটবাড়ী। কেনসিংটন এন্ড চেলসি কাউন্সিল ১৯৭৪ সালে এ টাওয়ার দালানটি নির্মান করে। কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এ দালানের আবাসিকদের সার্বিক দেখাশুনা করেন ‘কেনসিংটন এন্ড চেলসি ট্যানেন্ট ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন’।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন যে তিনি শুনেছেন ভেতরে আটকে পড়া থেকে মানুষ তাদের বাচ্চাদের বাঁচাবার জন্য চিৎকার করছে। আরেক পক্ষ প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা, তারা রাতে উপরতলায় আগুনের মত দেখে মনে করেছেন মোবাইলের বাতি কিংবা টর্চবাতি। আবাসিকরা আগুনে আটকা পড়েন। মধ্যরাতে আগুন যখন প্রথম দেখা যায় তখন অনেক মানুষই ঘুমে, শত শত মানুষ ঘরের ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় ধুয়ায় আক্রান্ত হয়ে মরণাপন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
লন্ডনের মেয়র সাদেক খান সকল আবাসিকগনকে নিজেদের ফ্লাটে থাকার আহ্বান জানিয়ে অগ্নিকান্ডের নিন্দা করেছেন।
জানা যায় ২০১৬ সালে আবাসিকগন একটি দূর্যোগের অশনি সংকেতের কিছুটা আভাস পেয়েছিলেন। কিন্তু কি সে দূর্যোগ হতে পারে তা কেউই আন্দাজ করতে পারেননি। গত ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২ বছরে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে টাওয়ারটির সংস্কার সাধন করা হয়েছিল। সংস্কার কাজটি করেছিল ‘রিয়াদ কন্স্ট্রাকসন্স’ নামের একটি ঠিকাদারী সংস্থা। ওই সংস্কারে বহিরাবরন সুন্দর রঙ্গিন করা হয়েছিল এবং একটি ‘কমুনিটি হিটিং সিস্টেম’ সংযোজন করা হয়েছিল। রঙ্গিন করার ওই সামগ্রীগুলোই জ্বলে অতিদ্রুত আগুন ছড়িয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী এবং আমরা যারা টিভিতে দেখেছি আমাদের এমনি ধারনা।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে অলৌকিকভাবে ৯ কিংবা ১০তলা থেকে ফেলে দেয়া একটি শিশুর কিছুই হয়নি। পুলিশ লুফে নিয়েছিল। সর্বশেষ ভেতরের অবস্থা দেখতে ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। এতে পরবর্তী উদ্ধার কিভাবে করতে হবে তা ঠিক করা যাবে।
৪র্থ তলা থেকে আগুনের শুরু বলে অনুমান করা হচ্ছে এবং খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে।
লন্ডনের মত শহরের একটি টাওয়ার বাড়ীতে এ নমুনার অগ্নিকান্ড শহরবাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। উপর থেকেই নিচে হোক আর নিচ থেকেই উপরে উঠুক, আগুন এতো দ্রুত সারা টাওয়ারে ছড়িয়ে পড়েছিল যে তার রূপ ছিল ভয়াবহ আর ভীতির কারণও বটে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখে মনে হয়েছে কোন ধায্যবস্তু যেনো দালানে লেপ্টানো আছে।
মেয়রের এই আহ্বানের খবর যদি সত্য হয় তা’হলে আবাসিকদের এখানে থেকে উৎখাতের কোন একটা ছলা-কলা এ অগ্নিকান্ডের পেছনে ইন্দন যুগিয়েছে অনুমান করা অন্যায় হবে না নিশ্চয়।