মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজারে জামাতার হাতে শাশুড়ী রুকেয়া বেগম(৬০) খুনের ঘটনার ৬দিন অতিবাহিত হলেও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই জামাতা মোঃ আলী(৩২)। খুনের ঘটনার পরদিন নিহতের দ্বিতীয় ছেলে হোসেন মিয়া খুনি আলী’র বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলেও এখনো আটক হয়নি খুনি জামাতা।
কি ঘটেছিল সেই ভয়াল রাতে এ খবর খুঁজতে প্রতিবেদক কথা বলেন নিহতের পরিবার ও স্বজনদের সাথে।
তারা বলেন, স্বামী রেজাক মিয়া থেকে নিহত রুকেয়া বেগম দীর্ঘদিন ধরে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পৃথক বসবাস করে আসছেন। রুকেয়াদের আদী বাড়ি চাঁদপুর জেলার হালুররাস্থা এলাকায়। ৪০ বছর যাবৎ তারা মৌলভীবাজারে বসবাস করে আসছেন। রুকেয়ার স্বামীর সাথে সুসম্পর্ক না থাকায় নিজে বাসা বাড়া নিয়ে শহরের শ্যামলী সড়কস্থ(মিজানের কলনীতে) ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। ওই বাসায় নিহত রোকেয়া বেগমের সাথে থাকতেন তার বৃদ্ধা মা, মেয়ে নারগিছ বেগম, আলীর এক ছেলে ও নাতনি(পুত্রের মেয়ে)। নাতনি হাসনা বেগম(১৫) মৌলভীবাজার শহরের হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী। রাজনগর উপজেলার কদমহাটা গ্রামের মৃত মুতলিব মিয়ার পুত্র ও মেয়ে নারগিছের জামাই মোঃ আলী মাঝে মধ্যে ওই বাসায় আসা-যাওয়া করতো। তার চারিত্রিক অবস্থা কলুষিত থাকায় স্ত্রী-শাশুড়ীর সাথে তার সুসম্পর্ক একেবারেই ছিলনা। নিহতের পরিবার আরো জানিয়েছে সে চুরি-ডাকাতি, মাদক জাতীয় নেশার সাথে জড়িত ছিল। এই কারণে স্ত্রী-শাশুড়ীর সাথে তার কলহ লেগেই থাকতো প্রতিনিয়ত।
এরই মাঝে হঠাৎ কুনজর পড়ে সমন্দির মেয়ে হাসনার উপর। শহরের পূর্ব গীর্জা পাড়া এলাকার রুকেয়া বেগমের বড় ছেলে ও মেয়ের বাবা হাসন বাবুর্চি জানান, তার এই হীন ইচ্ছা সফল করতে ঘটনার কদিন আগে তার মেয়ের সাথে শ্লীলতা হানীর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সে। এই ঘটনার কারণে পরবর্তীতে ক্ষমা চাইলে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে গড়ায়। কিন্তু প্রতিনিয়ত তার মধ্যে যে জৈবিক বাসনা ঘুরপাক খাচেছ তা কাউকে বুঝতে দেয়নি সে।
১৯মে(শনিবার) রাত ১১টা। হঠাৎ আলী সবার অজান্তে মিষ্টি জাতীয় রসমালাইয়ে নেশার দ্রব্য মিশিয়ে ঘরে হাজির হয়ে সবাইকে খেতে বলেল স্ত্রী নারিগছ বেগম এসে পরিবেশন করেন। রসমালাই খাওয়া শেষে একে একে সবাই অচেতন হয়ে ঢলে পড়েন। এর সুযোগেই আলী তার জৈবিক চাহিদা মেঠানোর জন্য তার মেয়েতুল্য সমন্দির মেয়ে হাসনা বেগম এর উপর চড়াও হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হাসনার নেশার ঘোর কেটে যায়। হাসনা চোখ মেলে দেখতে পায় ফুফা তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে সে দৌড়ে দাদীর কাছে আশ্রয় নেয়। দাদীও অচেতন অবস্থায় চোখ মেলে দেখেন নাতনী হাসনাকে তারই মেয়ের জামাই পাশবিক ইচ্ছা মেঠানোর জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। রুকেয়ার নেশার তন্দ্রা কেটে গেলে নাতনীকে আগলে রাখেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নারীদেহ লুলুপ জামাই শাবল(খন্তি) দিয়ে শাশুরীর হাত, বুক ও পেটে উপর্যুপরী কুপ দিলে তাৎক্ষনিক তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এতে সে তার পাশবিক ইচ্ছা মেঠাতে পারেনি। গভীর রাত্রে রক্তে লাল হয়ে যায় এই গৃহ। অবস্থা বেগতিক দেখে খুনি আলী পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পাশের ঘরের দীন ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আহত রুকেয়াকে আধামরা অবস্থায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় পথেই তিনি মারা যান।
হাসনার বাবা হাসান বাবুর্চি কাদোঁ কাঁদো কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, “সে আমার মেয়ের উপর লিপ্সা করলো কেনে? মেয়ে তারে আব্বা ডাকে”। “দুইদিন আগেও আমার মেয়েকে ধর্ষন করতে চাইছে”। “ক্ষমা চাওয়ায় আমরা তারে ক্ষমা করে দিছি”। মেয়ের চাচা ও মামলার বাদী হোসেন মিয়া বলেন, আলী দীর্ঘদিন যাবৎ চুরি-ডাকাতি ও নেশা সেবনে মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছে। ওই রাতে সে তার ভাতিজির মুখে ধরে ধস্তাধস্তি করে। এক পর্যায়ে আমার মাকে শাপল দিয়ে হাত, বুক ও পেটে কুপ দিয়ে মেরে ফেলে। নিহতের স্বজনরা কান্নাবিজরিত কন্ঠে বলেছেন, ছয় দিন হয়ে গেল খুনিকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। এখনো মোবাইল ফোনে তাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে খুনি আলী।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি সোহেল আহম্মদ এর সাথে বুধবার(২৩মে) রাতে আলাপচারিতা হয় এ প্রতিবেদকের। খুনের ঘটনার সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, খুনি আলীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে তবে ডাকাতির কোন ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ওই মেয়ের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কোন কিছু আমরা শুনিনি। এছাড়াও মামলা তদন্তনাধীন আছে। আসামীকে আটক করলে সব জানা যাবে।