লন্ডন: বৃহস্পতিবার, ১৯শে মাঘ ১৪২৩।। সিলেটের বিশিষ্ট শিল্পপতি রাগিব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মামলায় বৃহস্পতিবার জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় মামলার আসামিদের মধ্যে রাগীব আলী ও আবদুল হাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। জামিনে আছেন সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত ও মোসাক মজিদ। এছাড়া রাগীব আলীর জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা পলাতক। দণ্ডবিধির ৪৬৬/৪৬৮/৪৭১/৪২০ ও ৩৪ ধারায় এ রায় দেয়া হয়। এ মামলার রায় ঘোষণা করেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো।
৭৮ বছর বয়সী রাগীব আলী সিলেটের আলোচিত একজন শিল্প উদ্যোক্তা। ব্যাংক, চা বাগান, শিক্ষা, চিকিত্সা, মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় সরকারি সমপত্তি, দেবোত্তর সমপত্তি দখলেরও অভিযোগ ওঠেছে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথের কামালবাজারে জন্ম নেয়া রাগীব আলী।
সিলেটের পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, দুই আসামিকেই ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইনের ৪৬৬ ধারায় ৬ বছর, ৪৬৮ ধারায় ৬ বছর, ৪২০ ধারায় ১ বছর এবং ৪৭১ ধারায় ১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর সমপত্তি তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয় রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।
১৯৯০ সালে তারাপুর চা বাগান আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করেন। ১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সমপর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারাপুর চা-বাগান নিয়ে বিশেষ আলোচনার পর এই মামলার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আত্মসাতের মামলা হয় কোতোয়ালি থানায়। দীর্ঘদিন এই মামলা দুটির কার্যক্রম স্থগিত ছিলো। গতবছর উচ্চ আদালতের একটি রায়ে গতি পায় মামলার কার্যক্রমে।
গত বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রাগীব আলীর তারাপুর চা বাগান দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে বাগান সেবায়েতকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই ঘটনায় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দুটি পুনরায় চালু ও তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন আদালত। ঐ আদেশের পর ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। (ইত্তেফাক থেকে)
নিউজটি শেয়ার করতে বাটনের উপর ক্লিক করুন