সৈয়দ ছায়েদ আহমদ।। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আলোচিত সেই স্টেপ সাগর ও তার এক সহযোগীসহ দীর্ঘদিন পলাতক থাকা অবস্থায় পুলিশে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া নোহাটি এলাকায় তার এক আত্মিয়ের বাড়ি থেকে আটক করে বলে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান সার্কেল (শ্রীমঙ্গল- কমলগঞ্জ) এর নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সঙ্গীয় ফোর্সসহ সাগরের সাথে দ্বীপ সাগর নামে তার অপর এক সহযোগীকেও আটক করেছে পুলিশ। এর পর তাদের রাত ৯ টার দিকে শ্রীমঙ্গলে নিয়ে আসা হয়। সাগর ও তার সহযোগী দ্বীপের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাতেই সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান সার্কেলসহ শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুছ ছালেক ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্যদের নিয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে শহরের গুহ রোডস্থ বনশ্রী নার্সারী থেকে দেশীয় অন্ত্র ৩টি ধারালো দা ও ৩টি চাকু উদ্ধার করে পুলিশ।
উল্লেখ, গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় পৌর শহরের কলেজ সড়কের তৃষান হেয়ার ফ্যাশন সেলুনের সামনে চাপাতি দিয়ে কোপায় নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া মেধাবী ছাত্র অন্তরকে। তাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসীন মিয়া মধুর ভাতিজা নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ইমানী হোসেন অন্তর(১৮) কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার পর থেকে কিশোর সাগর আলোচনায় আসে। এর আগেও সাগর শ্রীমঙ্গলের ছাত্র নাবিলসহ আরও বেশ কয়েকজনকে চাকুমেরে আহত করে করে বলে তার বিরোদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তার মারধোরের শিকার অনেকে পঙ্গুত্ব জীবন কাটাচ্ছেন। এর পর থেকে সাগর শ্রীমঙ্গলে ‘স্টেপ সাগর’ নামেই পরিচিত লাভ করে। শুধু তাই নয় তার ভয়ে স্টেপ সাগর তার দল নিয়ে স্কুল কলেজগামী মেয়েদের পথ গতিরোধ করে ইভটিজিং করে
আসছিলো। তার ভয়ে শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোড দিয়ে যাতায়াতকারী বিভিন্ন বয়েসী মেয়েরা সর্বদায় আতঙ্খিত হয়ে থাকতেন।
সাগর শাসকদলের সাথে জড়িত শ্রীমঙ্গল শহরের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার বিরোদ্ধে কেউ প্রতিবাদ বা রুখে দাড়ানো সাহস পায়নি। অন্যান্য ঘটনায় মামলা হলেও জড়ালো কোন এ্যাকশন না হওয়া সে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাকে গ্রেফতারের ফলে জনমনে স্বস্থি ফিরে এসেছে। তবে অনেকেই সিন্ডেকেটের অন্যান্য সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানান।
আশিকুর রহমান ওরফে স্টেপ সাগর শহরের শ্যামলী আবাসিক এলাকার মৃত মিনাই এর পুত্র এবং শ্রীমঙ্গল পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিম এর ভাতিজার ঘরের নাতি। আহত ইমানী হোসেন অন্তরকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন রাজ সাগরসহ, শহরতলির বিরাইমপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদের ছেলে ইমন মিয়া এবং অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনকে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা করেন। এর পর সাগর ও তার সহযোগীরা পলাতক ছিল ।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান সার্কেল জানান, সাগর ২৭ জুনের পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে ছিল। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় অবশেষে সোমবার হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার
তেলিয়াপাড়া নোহাটি এলাকায় সাগরের এক আত্মিয়ের বাড়িতে অবস্থান করছে। এমন খবর পেয়ে মাধবপুর থানা পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে আমরা তাদের আটক করতে সক্ষম হয়েছি।