মুক্তকথা প্রতিবেদন।। সাংবাদিক সেজে চাঁদাবাজী বা প্রতারণা এ দেশে নতুন কিছু নয়। পাকিস্তানী আমলের হাজারো অপকাজের প্রেতাত্মাদের একটি হলো এই কাজ। আমাদের খেয়াল আছে পাকিস্তানী বর্বর সামরিক আমলে বহুবার পত্র-পত্রিকায় পড়েছি অনুরূপ ঘটনার খবর। আবার ব্যক্তিগত রেষারেষি থেকেও এ নমুনার ঘটনা সাজিয়ে কোন নিরীহ মানুষকে পুলিশে দেয়া হয় এমন সব ঘটনাও শুনা আছে। “ভাগ করে শাসন করো” নামক দুষ্টবুদ্ধীর ফসল “দ্বিজাতী তত্ত্ব”এর ধারক-বাহকদের প্রেতাত্মারা স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পরও আমাদের সমাজে অসংখ্য মানুষের মাঝে ডুব দিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে; যে সমাজে স্বাধীনতার পরও রাজাকার আলবদর ক্ষমতায় যেতে পারে, যুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া বিজয়কে পরাজিতদের ঘরে তুলে নিতে পারে সে সমাজে সাংবাদিক সেজে চাঁদাবাজী খুব দুরূহ কিছু বলে আমরা মনে করি না। তার অর্থ এই বলতে চাইছি না যে এমনতরো কাজ অপরাধ নয় বা অপকর্ম নয়। অপরাধ অপকর্মতো অবশ্যই। এসকল অপরাধীদের জীবন ধারার গভীরে গিয়ে খুঁজ নিয়ে দেখতে হবে, তবেই না আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। সঠিক অপরাধী বেরিয়ে আসবে। প্রশ্ন হচ্ছে একটিই সেই আসল তথ্য বের করে নিয়ে আসার সত্যনিষ্ঠ ইচ্ছা কি আমাদের আছে?
শ্রীমঙ্গলে যারা চাঁদাবাজী করেছে তাদের পকেটে পাওয়া গেছে “মহানগর বার্তা, বর্তমান দেশবাংলা, নিউজ টোয়েন্টিফোর, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস, এন্টিকরাপশন ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সোসাইটি ও প্রাইভেট ইনভেস্টিগেট” নামে পত্রিকা ও সংস্থার পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড। এই অত্যাধুনিক ডিজিটেলের যুগে খুবই অভিযাত বনেদি-বিনোদী রংরূপ দিয়ে এ ধরনের পরিচয়পত্র বানিয়ে নেয়া বিশাল কোন কাজ নয়। খুবই তুচ্ছ কিছু কাজ। সাংবাদিক সেজে চাঁদাবাজীতো মামুলী বিষয়, আমাদের মনে আছে স্বাধীনতার পর খোদ সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর লোক সেজে অনুরূপ অপরাধ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল এমন মানুষ আজও দেশের রাজনীতির উপর তলায় বিরাজমান আছে! মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সেজে উচ্চতর কর্মকর্তার চাকুরী করে গেছে। অতীতের সে ঘটনাগুলোর বিচারে শ্রীমঙ্গলের ঘটনাটিতো নস্যি। সেই যে বিচার হয়নি, অপরাধীর সাথে নিছক কোন স্বার্থে হাত মিলানো সেসব ঘটনা থেকেইতো অপরাধীর অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। এ গুলোইতো বিচারহীনতা।
শ্রীমঙ্গলের অঘটনটি সেই ২০১৯সালের ১৯ অক্টোবরের এক শনিবারের ঘটনা বলেই আমরা জেনেছি। সে ঘটনায় ৪জন ভূঁয়াসাংবাদিক সেজে শ্রীমঙ্গল শহরের একটি আসবাবপত্রের দোকান থেকে ১৬হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের প্রচেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে মানুষের সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেয় এবং স্থানীয় পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকেই তাদের ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করে। নিশ্চয়ই তারা এখন হয় হাজতবাস করছে অথবা জামিন নিয়ে মামলার মোকাবেলা করছে। আমাদের দেশের সাংবাদিকতায় সংগঠিত সংবাদ নিয়ে আমরা এতো ব্যস্ত সময় কাটাই যে কোন একটি বিশেষ সংবাদকে অনুসরণ করা সকল ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। আর তাই মামলার পরবর্তিতে অভিযুক্ত এ ৪জন সাংবাদিকের কপালে কি জুটেছে তা আমাদের জানার সৌভাগ্য হয়নি!
এই আটককৃতদের পরিচয় যা পুলিশ উদ্ধার করেছিল তা’হলো- বি.বাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে দিল মোহাম্মদ(৬৬), ঢাকার উত্তরার সাদিকুর রহমানের ছেলে কামরুজ্জামান(৪৫), টঙ্গির মৃত হাফেজ মো. হানিফ চিশতির ছেলে মহিউদ্দিন চিশতি(৩৫) ও একই এলাকার মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে রুকুনুজ্জামান(৪৫)।
শ্রীমঙ্গল থেকে এ খবরটি আমাদের পাঠিয়েছিলেন সাংবাদিক সৈয়দ ছায়েদ আহমদ।