হীড বাংলাদেশের হিসাবে জেলার সাত উপজেলায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৪০জন অথচ মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মতে জেলায় কুষ্ঠরোগী রয়েছেন ৬৬০জন। হীড মনে করে জেলায় বর্তমান কুষ্ঠরোগী আছে ১২৬ জন। সবকিছু মিলিয়ে এ জেলাকে কুষ্ঠ রোগের লাল এলাকা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জানা গেছে সচেতনতার অভাবে কুষ্ঠ রোগে বেশি আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা। গীতা মৃধা নামের একজন মহিলা চা-শ্রমিক এ প্রতিনিধিকে বলেন বিগত মে মাসে হাসপাতালে গেলে তার কুষ্ঠ ধরা পড়ে। তিনি কুলাউড়ার হিঙ্গাজিয়া চা-বাগানের নারী শ্রমিক। একই বাগানের অপর একজন নারী শ্রমিকের কুষ্ঠ ধরা পড়ে। বাগানের হাসপাতালেই পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার কুষ্ঠ ধরা পড়েছিল। এই কুষ্ঠ নিয়েও তিনি নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজে করে যাচ্ছেন।
জেলার রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের বানারসি কুর্মির(৮০) বলেন, ‘হাত ও পা বাঁকা হয়ে আছে। কোনো মতে চলাফেরা করি। আগে হীড বাংলাদেশের লোকজন এসে খোঁজ খবর নিত। এখন আর কেউ আসে না।
তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তার শরীরে রোগের ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে ছিল। প্রথম লক্ষণ হলো শরীরের যেকোনো স্থানে সাদা অথবা বাদামী রঙের দাগ দেখা দেয়। আক্রান্ত স্থানের অনুভূতি ছিল না। শরীর ঝিনঝিন করতো। হাত পা টানে গায়ে ও ব্যথা হয়। অনেকেই অসচেতনতার কারণে নিয়মিত ঔষধ খায় না। তার সাথের ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। লোক লজ্জার ভয়ে অনেকে প্রথম দিকে প্রকাশ করে না। পরে বড় ক্ষতিতে পড়তে হয়’।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চা শ্রমিক নেতা দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকরা অজ্ঞ তারা কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। এছাড়া তাদেরকে নিম্নমানের জীবনযাপন করতে হয়। এ কারণেই চা শ্রমিকরা কুষ্ঠ রোগে বেশী সংক্রমিত হচ্ছে।
হীড বাংলাদেশের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানগুলোতে গড় হিসাবে প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের মধ্যে দুই জন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নতুনভাবে লেপ্রসি ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৪০ জন। এর আগে অসংখ্য রোগী পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালে রোগী ছিলেন ১০৫ জন, ২০২১ সালে ২৫৭ জন, ২০২০ সালে ১৯১ জন ও ২০১৯ সালে ৩৫৪ জন। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম সীমিত থাকায় রোগীর তথ্য পরিপূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।’
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ‘কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের পরিসংখ্যাযনে মৌলভীবাজার শীর্ষে। এই জেলায় কুষ্ঠ রোগী আছেন ৬৬০ জন। এদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্করাই বেশি। এই জেলাকে কুষ্ঠ রোগের লাল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আক্রান্তের ৯৮ শতাংশই চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায়। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে।