মৌলভীবাজার অফিস।। গত বছর আগষ্টের বন্যায় কৃষকদের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। চলতি বছরে এসে ধারাবাহিক ৭ মাস লেগে থাকা বন্যায়, ঘরে তুলা দূরে থাক চোখ দিয়ে ফসল দেখারও সুযোগ হয়নি। সারা বছরের কষ্টের ফসল চোখের সামনে ক্ষেতেই বিনষ্ট হয়ে গেল বন্যায়। করার কিছুই ছিলনা। কৃষিজীবী আর কর্মজীবী সাধারণ মানুষ এমন দীর্ঘম্যাদী বন্যা অতীতের কখনও দেখতে পাননি। এমন ফসলহানি মধ্যআয় থেকে নিম্নআয়ের মানুষকে নির্বাক করে দিয়েছে। মনমরা হয়ে পড়েছে জেলার বন্যাক্রান্ত কৃষককূল।
ফসলহানির এ অবস্থা জেলার সাধারণ মানুষসহ কৃষকজনগোষ্ঠীকে যখন হতাশ করে তুলেছে! কৃষক যখন দিশেহারা হয়ে ভাবছে কিভাবে এ অবস্থা কাটিয়ে উঠবে! এমনি অবস্থায় ধান-চাল, পিয়াজ ও সবজির লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি গোটা জেলার জনজীবনের দূর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে তুলে তিনগুন। দূর্ভোগের এহেন অবস্থার মাঝে চলমান শীত মৌসুমে হঠাৎ করে নিম্নচাপের কারণে লেগেথাকা তিন দিনের গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে কৃষকের আলুক্ষেতসহ অনেক সবজিবাগান পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এ দুশ্চিন্তায় ক্ষেতকৃষির মানুষ যখন অনেকটা দিশেহারা হয়ে কুলকিনারা পাচ্ছিল না, এমনি কঠিন সময়ে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ অর্থসহ কৃষিউপকরণ দিয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসায় সার্বিক জনগোষ্ঠীর মনে একটু করে হলেও আশার আলো দেখা দিয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আলু চাষীরা আবার নতুন করে আলু রূপণ করেছেন।
আজ থেকে প্রায় মাসখানেক আগে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের একটু সচ্ছলতার পথ দেখাতে কৃষি উপকরণসহ নগদ টাকার এই সহায়তা দেয়। এই নগদের সাথে কৃষি বীজ ও যাবতীয় উপকরণও দেয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে ৬টি হাওর আছে। এসব হাওরগুলোর মধ্যে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, হাইল হাওর, কাউয়াদিঘী হাওর, বড় হাওর, কেওলার হাওর ও করাইয়া হাওর রয়েছে। এ জেলায় মোট এলাকা ৪৮ হাজার ২৮ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদী এলাকা ২৪ হাজার ৭শ ৮৫ হেক্টর। জেলায় মোট খাদ্য শস্যের চাহিদা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮শ ৬৩ মেট্রিক টন। জেলায় খাদ্যের পরিমান ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪শ ৪৩ মেট্রিক টন উৎপন্ন হয়ে খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫শ ৮০ মেট্রিক টন।
এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ৯৮ হাজার ৪শ ৬০ হেক্টর আমন ধান আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯ হাজার হেক্টর। তবে এবছরের বিগত আগষ্টের বন্যায় ২৬০ হেক্টর জমির আমনধান নষ্ট হয়েছে। বেশীরভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলায়। জেলায় ২৫ হাজার বোরো কৃষক রয়েছেন। মৌলভীবাজার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ শাহজাহান বলেন, সম্প্রতি ৫ হাজার কৃষককে সরিষা, ২শ জনকে ভুট্টা, ১২জনকে বিটি বেগুন বীচ দেয়া হয়েছে। সরিষা ও ভুট্টার জন্য কৃষকদের নগদ ৪১ লাখ টাকা ও ৩৭ হাজার টাকার কৃষি উপকরণ দেয়া হয়।
আসন্ন জানুয়ারীতে আরো ২শ জনকে মুগডাল দেয়া হবে। বোরো কৃষকদের ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকার উপকরণসহ সার, বীজ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ২৫ হাজার বোরো কৃষকদের জন প্রতি ১হাজার টাকা করে দেয়া হচেছ। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৮শ ২০ জন, রাজনগরে ২ হাজার ৫শ ৭০ জন, শ্রীমঙ্গলে ২ হাজার ২০ জন, কমলগঞ্জে ১ হাজার ৩শ জন, কুলাউড়ায় ৬ হাজার ৮শ জন, বড়লেখায় ৫ হাজার ১০ জন ও জুড়ী উপজেলায় ৫ হাজার ৪শ ৮০ জনসহ মোট ২৫ হাজার কৃষককে জন প্রতি ১ হাজার টাকা ও কৃষি উপকরণ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের বোরো ফসলে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এতে এ জেলায় ৫০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হন। এছাড়াও শীতের ফসল আবাদের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কৃষি ও কৃষকদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তোফায়েল ইসলাম এর সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, এবার আমাদের টার্গেটের তুলনায় রূপা আমন ধান বেশী পেয়েছি। “পাইনাই বোরো ধান”। এছাড়াও কৃষকদের কৃষি উপকরণ ও নগদ টাকা বিতরনের জন্য ৫ কোটি টাকারমত বরাদ্ধ এসেছে।