লণ্ডন।। আসল নাম ছিল হাবিবুর রহমান। ডাক নাম ছিল আব্দুল বারী। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন সকলেই ডাক নামে ডাকতে ভালবাসতেন। ধীরে ধীরে আসল নামটিই ঢাকা পড়ে যায়। আব্দুল বারী নামেই তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন সকল মহলে। এতে কোন সময়ই তার কোন আপসোস শুনা যায়নি। বরং এ নামে তিনি আরো প্রানবন্ত হয়ে উঠেন ধীরে ধীর।
এমন শান্ত ও নিশ্চুপ স্বভাবের মানুষ শতে একজন পাওয়াও দুষ্কর। এসএসসি পাশ করে স্কুলের বারান্দা পেরিয়ে মৌলভীবাজার মহাবিদ্যালয়ে পা দিয়েই চলে আসেন বিলেতে। বাবার ব্যবসার হাল ধরতে।
বাবা ছিলেন সিদ্ধপ্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। লণ্ডনের ওয়েষ্ট এণ্ডেই ছিল তার তিন তিনটে রেস্তোরাঁ। সে ১৯৬২সাল। আব্দুল বারী লণ্ডনে এসে বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় যোগ দেন। ভদ্র শান্ত মনের আব্দুল বারী বাবার ব্যবসায় প্রবেশ করে যেনো নিজেকেই খুঁজে পান। তার পরিচালনায় ব্যবসা নতুন মাত্রা পায়। ওয়েষ্ট এণ্ডের বাঙ্গালী সম্প্রদায় ছাড়াও ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে বারী অতি অল্পদিনের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে নেন কেবলমাত্র তার ভদ্র-শান্ত স্বভাব দিয়ে। ওয়েষ্ট এণ্ডের বাঙ্গালীদের সুপ্রিয় বারীভাই অন্যদের কাছে মিঃ বারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
জন্মগতভাবেই তিনি ছিলেন মনভুলানো বিনোদ হাসির এক প্রানখোলা মানুষ। সে সময় মৌলভীবাজারে “২৭বন্ধু” বলে বারীভাইদের একটি আড্ডা ছিল। সে আড্ডার সদস্য ছিলেন সমসাময়িক ২৭জন স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র। আব্দুল বারী ছিলেন তাদেরই একজন। প্রথম বিলেত থেকে দেশে এসে বারীভাই টকটকে লাল রংয়ের একখানা মরিস মাইনর গাড়ী কেনেন। সে সময়ের মৌলভীবাজারের মত ছোট্ট শহরে এ গাড়ী ছিল সকলের নজরকাড়া।
সকলের প্রিয় সেই বারীভাই আর নেই। গত ২০শে জুলাই শুক্রবার রাত ১০টায় তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।(ইন্না…রাজেউন)। তার পরিবার থেকে জানা যায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০দিন আগে সাটনের সেন্ট হেলিয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে আব্দুল বারী ২ছেলে একমেয়ে, ভাই, ভাইপো, ৬ নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।
প্রয়াত বারী ছিলেন, উনিশ’শ সত্তুরের নির্বাচনে আয়ূবের কাউন্সিল মুসলীগ থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত রাজনগরের এমপি জনাব তোয়াবুর রহিমের ছোট ভাই। মৌলভীবাজারে ১৯৭০সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে মরহুম বারীর ভুমিকা এমপি তোয়াবুর রহিমের বিজয়কে অনেক পথ এগিয়ে দিয়েছিল।
মৌলভীবাজারের বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান আওয়ামীলীগ নেতা জনাব আজিজুর রহমান প্রয়াত বারীর কলেজ সহপাঠী ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। টেলিফোনে আজিজভাইয়ের সাথে তার প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে আলাপ হয়।
আজিজভাইয়ের ভাষায়-“তিনি ছিলেন ‘আমরা ২৭বন্ধু’র অত্যন্ত ঘনিষ্ট একজন। বারীর মত ভদ্র-নম্র অমায়িক সাদা দিলের মানুষ দ্বিতীয়টি পাওয়া ভার। বারী উনার বিলেতের জীবনে থেকেও আমাদের জানাশুনা অগণিত মানুষকে আকতরে সহায়তা করেছেন। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।”
তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লণ্ডনেও মরহুম বারী সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। সে সময় অন্যান্যদের সাথে তাদের রেস্তোরাঁও ছিল মু্ক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সভা-সমাবেশের ঠিকানা।
“নিরব নিশ্চুপ আপনার মনে জ্বলিব একাকী গন্ধ বিধুর ধূপ” বিদ্রোহী কবির এ অমর বাণীর বরপুত্রের মত অতি শান্তিময় নিরব নিশ্চুপ এক জীবন কাটিয়ে অজানা অসীম অনন্তের পথে পাড়ি জমানো মৌলভীবাজারের এ কৃতি সন্তানের প্রতি আমরা আমাদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
জানাজা শেষে Merton and Sutton joint cemetery, Garth Rd, Morden SM4 4NW এ ঠিকানায় তাকে সমাহিত করা হবে। তার জানাজার নামাজের সময় ও তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে আগামীকাল জানানো হবে।
পারিবারিক সূত্রে আজই জানা গেছে যে, প্রয়াত আব্দুল বারীর(বারীভাই) জানাজার নামাজ হবে আগামীকাল মঙ্গলবার ২৪শে জুলাই সকাল ১০টায়। জানাজার স্থান:- Morden Islamic Community Centre, 116 London Road, Morden SM4 5AX.। নামাজ শেষে সকাল ১১টায় দাফনের কাজ শুরু হবে।