লন্ডন, রোববার
২০শে কার্তিক ১৪২৩
৬ নভেম্বর ২০১৬
মন্ত্রী সায়েদুল হক আজ রোববার দুপুরের দিকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসির নগরে এক সংবাদ সন্মেলনে সরাসরি অস্বীকার করে বলেছেন যে যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে তিনি কাউকে “মালাউন” বলে গালি দিয়েছেন তা’হলে তিনি মন্ত্রীত্বই ছেড়ে দেবেন। মন্ত্রীর এ প্রতিক্রিয়ায় আমার সাথে সারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষই খুশী হয়েছেন নিশ্চয়ই। তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই যে তিনি সঠিক সময়ে সংবাদ সন্মেলনটি করেছেন।
ইতিমধ্যেই ঘটনা ভিন্ন রং নিতে আন্দোলিত হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এ হামলার ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। রবিবার একটি টুইট বার্তায় এই হামলার ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি। স্বাধীনতার বিরুদ্ধবাদীদের জন্য এ খবরটি সোনায় সোহাগার মত কাজ করবে। তারাতো এ ধরনের কিছুই চায়! এই সংবাদ সন্মেলন দুরাচারদের সেই ষঢ়যন্ত্রের মুখে কালি মাখিয়ে দিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।
নিন্দুকেরা অনেকেই বলতে পারেন যে নিজের ভুল বুঝতে পেরে কিংবা মন্ত্রীত্ব রক্ষার জন্য মন্ত্রী এখন ভিন্নসুরে কথা বলছেন। তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম, ঘটনা যদি তা’ই হয়, তবুও বলবো ভুল বুঝতে পারায় তো অন্যায় কিছু হবার নয়। বিশেষ কারণে বিশেষ সময়ে ভুল একজন মানুষ করতেই পারেন। আমরা কথায় বলিনা যে মানুষ ফেরেস্তা নয় বা স্বর্গের দূত নয়। ভুলতো মানুষের হতেই পারে। যোগ্য মানুষতো সে’ই যে নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং সততা ও নিষ্ঠার সাথে তা সংশোধনে এগিয়ে আসে। ভুল সংশোধনে লজ্জার কিছু নেই বরং ভুলকে মিথ্যার আশ্রয়ে লুকিয়ে রাখা কিংবা সঠিক বলে নির্বিকার থাকা লজ্জার। মন্ত্রী সায়েদুল হক এর কোনটাই করেননি। তিনি কোনভাবে কোন ধরনের কপটতা বা মিথ্যার আশ্রয় নেননি। অত্যন্ত সাধু সজ্জনের মত এলাকায় সাংবাদিকদের ডেকে সত্য বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
সংবাদ সন্মেলন ও তার বক্তব্যের ধরন দেখেই বুঝা যায় যে তিনি কোন রূপ লুকোচুরি করেননি। অত্যন্ত সহজ ভাষায় সাহসের সাথে নিশ্চিন্ত মনে বলছেন এগুলো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার। একটি বিশেষ মহল তা’কে ও আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্যে এই অপপ্রচার চালিয়েছে। তিনি আরও স্পস্ট করে বলেছেন, তার সন্দেহ, স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি জামাত জোট এ কাজ করছে বলে তার ধারনা।
আসলে কি তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তুলে গালি দিয়েছিলেন তা আমরা কেউই জানিনা। আমরা তার কাছে ছিলাম না। কিন্তু একজন মানুষের নিজের উক্তির ধরন ধারন দেখে এটিই প্রতীয়মান হয় যে মন্ত্রী যা বলছেন তা ঠিকই বলছেন। একজন মন্ত্রী, যার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের পাশাপাশি রাজনীতি নিয়ে সমাজের সাথে চলার সুদীর্ঘকালের অভিজ্ঞতার সনদও রয়েছে। সেই অতীতের তেয়াত্তর সাল থেকে আজ অবদি পাঁচ দফায় সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ১৯৬৫-৬৬সনে ব্রাহ্মনবাড়িয়া মহাবিদ্যালয়ের ভিপি ছিলেন। এছাড়াও সুদীর্ঘ দিনের সাংসদ হিসেবে বহু সভা সমিতির সভাপতির দায়ীত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সাংসদ হয়ে বহু দেশ ঘুরেছেন। সর্বোপরি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ত্রিপুরার লাম্বুছড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সামরিক প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন বলে তার মন্ত্রণালয়ের বিবরণীতে দেখেছি। এমন একজন প্রতিথযশা সজ্জন মানুষ জীবনের সায়াহ্নে এসে কোন অভিলাশে এমন গালি দিতে পারেন। এমন মানুষের মুখ দিয়ে এধরনের সাম্প্রদায়িক গালি কখনও বের’ই হতে পারেনা।
অপপ্রচারের অবস্থায় অনেকেই তাকে ভুল বুঝতে পারেন যেমন আমি নিজে বুঝেছিলাম। এজন্য আমি স্বীয় উদ্যোগে দুঃখ প্রকাশ করছি।