মুক্তকথা সংবাদ কক্ষ।। মাস খানেক আগের খবর, ইংল্যাণ্ডের “হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্ণ” এলাকার বাংগালী এমপি টিউলিপ সিদ্দীক আবারো মা হচ্ছেন। এটি হবে তার দ্বিতীয় সন্তান। টিউলিপ ১৬বছর বয়সেই ইংল্যাণ্ডের শ্রমিক দলে যোগ দেন। এড মিলিবেন্ডকে দলনেতা নির্বাচনের সময় টিউলিপ তার পক্ষে কাজ করেছেন। ২০০৮সালে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী কাজেও টিউলিপ শরিক ছিলেন। ২০০৬সালে টিউলিপ সর্বপ্রথম কাউন্সিলার হবার জন্য কেমডেনের একটি কাউন্সিলার আসনে দাড়িয়েছিলেন কিন্তু জয় আনতে পারেননি। পরে ২০১০সালের নির্বাচনে টিউলিপ কেমডেনের কাউন্সিলার নির্বাচিত হন। তখন তিনি ছিলেন কেমডেনের প্রথম বাংলাদেশী মহিলা কাউন্সিলার। এ সময় তিনি কেমডেন কেবিনেটের “কালচার এন্ড কম্যুনিটিজ”এর সদস্য হয়ে কাজ করেছেন। এর পর ২০১৩ সালে তিনি প্রথম বাঙ্গালী মহিলা, বৃটিশ সংসদের এমপি পদে ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দলীয় মনোনয়ন পান এবং ২৩ হাজারেরও অধিক ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বছর ২০১৬ সালে তার প্রথম কন্যাসন্তান আজালেয়ার জন্ম হয় লণ্ডনের রয়েলফ্রি হাসপাতালে। এ সময় দু’দুটি জাতীয় নির্বাচনে তার সংসদীয় এলাকা বিজয়ী হয়েছিল।
পারিবারিক জীবনে এমপি টিউলিপ সিদ্দীক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোনের বড়মেয়ে। তিনি তার রাজনীতির সূচনা থেকেই সংসদীয় সংস্কারের পক্ষে কাজ করে আসছেন। সংসদীয় সংস্কারের পক্ষে তার কাজে রয়েছে বহুদূরবর্তী এলাকা থেকে মানুষ যেনো সহজেই ভোট দিতে পারে এমন ব্যবস্থা করা।
গত ১৩ই সেপ্টেম্বরের স্থানীয় পত্রিকা “কেমডেন নিউ জার্ণাল” এমপি টিউলিপকে নিয়ে তাদের সংবাদপত্রে ভেতরের পাতায় সংক্ষিপ্ত হলেও বেশ গুরুত্ব দিয়ে লিখেছে। স্থানীয় ওই সংবাদপত্রকে টিউলিপ বলেছেন, দ্বিতীয় সন্তান পেয়ে তিনি অবশ্যই খুশী হবেন এবং ফুলের নামে নাম রাখার তাদের পারিবারিক নিয়ম ঠিকই থাকবে। অবশ্য নাম রাখার এ প্রথা ভেঙ্গে গেলেও তিনি অখুশী হবেননা। তিনি তার দ্বিতীয় সন্তানটি যেনো তার প্রথম সন্তান “আজালেয়া”র মত সুখী ও স্বাস্থ্যবান হয় সেই কামনাই করেছেন। তার প্রথম সন্তান কন্যা আজালেয়া বর্তমানে নার্সারীতে যাওয়া আসা করছে এবং ইংলিশ, বাংলা, চায়নীজ এবং হিব্রু শিখছে।
দ্বিতীয় দফা মা হবার লগ্নে এমপি টিউলিপ আবারো আহ্বান জানিয়েছেন সংসদীয় সংস্কারের। সেই সাথে তিনি, সন্তান সম্ভবা মা এমপি’দের জন্য হাউস অব পার্লামেন্টকে সহজতর করারও আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে সাংবাদিক রিচার্ড ওসলি লিখেছেন স্থানীয় সংবাদপত্র “কেমডেন নিউ জার্নাল”এ।
সাংবাদিক ওসলি শুরু করেছেন বেশ একটু মজা করেই। তিনি লিখেছেন, দ্বিতীয় সন্তানের মা হবার সম্ভাবনার কথা টের পেয়ে টিউলিপ সিদ্দীক, মা এমপি’দের সংসদ জীবনকে আরো সহজতর করার আহ্বান জানিয়েছেন। টিউলিপ বলেছেন, আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে যদি সরকার প্রতিনিধিত্বমূলক ভোট(Proxy voting) দানের ব্যবস্থা করতে না পারেন তা’হলে তার বিশ্বাস তার শিশুকন্যাকে নিয়ে ওয়েষ্টমিনস্টারে যাওয়ার অর্থই হবে “ব্রেক্সিট”এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়া।”
একজন নতুন মা সাংসদ হিসেবে, সংসদে কাজ করতে গিয়ে মায়েদের বিভিন্নমূখী সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে যথেষ্ট চাপ আছে। তবে যতশীঘ্র সম্ভব আমি যোগ দেবো। হাসপাতালে ৪০ঘন্টা পরিশ্রমের পর অবশেষে ডাক্তারগন “সিজারিয়ান” করেন। সিজারিয়ানের এ ধাক্কা সামলাতে সময় লাগে। ঘরে ফিরে যাওয়ার আগে মা ও নবজাতক উভয়ই ঘা জাতীয় সংক্রমনে আক্রান্ত হয়ে ৯দিন তাদেরকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে।
কিছুটা অভিযোগের সুরে টিউলিপ বলেছেন, এই হাসপাতালে থাকাকালীন অবস্থায়ও আমাকে কাজ করতে হয়েছে। প্রতিদিন আমাকে বিভিন্ন ইমেইলের জবাব দেয়া থেকে শুরু করে বহু কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়েছে। এসব কাজ করতে হয়েছে কারণ আমার অবর্তমানে অন্যকেউ নেই এ কাজ করার। আর ক্রুশতূল্য কঠিন এসব কাজ অন্যের উপর ছেড়ে দেয়াও যায় না।
এমপি টিউলিপ সিদ্দীক মাস দু’য়েক আগে একবার সংসদীয় নিয়ম ভঙ্গের দায়ে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিলেন। ওই সময় সংসদের সহকারী স্পীকার এলিনর লিয়াং তাকে মৃদুভর্তসনা করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
সংসার জীবনে এমপি টিউলিপ খুবই সুখী একজন স্ত্রী ও মা। তার স্বামী মিঃ ক্রীস্টিয়ান পার্সি লণ্ডনের কিংস কলেজের “শিক্ষনীয় কাজকর্মের” পরিচালক। ২০১৩সালে দলকর্তৃক এমপি হিসেবে গ্লেণ্ডা জেকসনের কাছ থেকে রুল নিজের হাতে তুলে নেয়ার মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই তাদের বিয়ে হয়েছিল। তার স্বামীর বিষয়ে তার নিজের কথা, “তিনি একজন নারীবাদী বাবা। তিনি তার স্ত্রীর কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য কোন বাধা ধরা চাকরীতে আর থাকবেন না।” বরং তিনি যখন সংসদে নিয়োজিত থাকবেন, তখন তার স্বামী পরিবারের কাজ তদারকি করার জন্য নিজের নির্ধারিত কাজের পরিকল্পনা বদলে নেবেন।
তার দ্বিতীয় সন্তান নতুন বছরে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় তিনি হাসপাতালে যান। তখন তার সন্তানদের রয়েলফ্রি হাসপাতালের মিডওয়াইফেরা দেখাশুনা করেছেন। এ অবস্থায় এ মাসের শেষে লিভারপুলে অনুষ্ঠিতব্য শ্রমিক দলের সম্মেলনে সম্ভবতঃ তার উপস্থিত থাকা সম্ভব হবে না বলে তিনি তার মনের দুঃখ প্রকাশ করেন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সী এই সাংসদের বুকজ্বালা ব্যারামও আছে বলে কেমডেন নিউ জার্ণাল সাংবাদিককে বলেছেন।
টিউলিপ সিদ্দীক গত ভোটে ১৫হাজার ভোট পেয়ে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাত্রাকে একটু এগিয়ে নিয়েছিলেন অথচ গত সোমবার হঠাৎ করেই তিনি জানতে পারলেন যে আগামী নির্বাচনে তার এমপিপদ রাখতে গিয়ে তাকে খুব শক্তিশালী লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হবে। কারণ “বাওয়াণ্ডারী কমিশন”এর প্রস্তাব অনুসারে তার সাংসদীয় এলাকায় ছুরি চালানো হচ্ছে। কিলবার্ণ এলাকার বেশ কয়েকটি “ওয়ার্ড” তার সংসদীয় এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। এ এলাকাগুলোয় শ্রমিক দলের ভোট সংখ্যা খুবই উল্লেখযোগ্য। তথ্য সূত্র: কেমডেন নিউ জার্ণাল ও উইকিপিডিয়া