হাসানাত কামাল ও আব্দুল ওয়াদুদ।। মৌলভীবাজার এমনই এক জেলা যেখানে ‘দারিদ্র’ থেকে যায় বিত্তের আড়ালে। নীরবে সেইসব অসহায় মানুষগুলো দারিদ্রের কষাঘাত সয়ে যায়। স্বাদ-আহ্লাদ, শখ অধরাই থেকে যায় বেঁচে থাকার সংগ্রামে। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে উৎসবে-পার্বনে। ঈদে নতুন কাপড় তো তাঁদের কাছে এক স্বপ্নের নাম। কিংবা ছেলেমেয়েকে স্কুল-কলেজে ভর্তি করবে, কেউ অসুস্থ হলে ভালো চিকিৎসা করাবে সে সুযোগ খুবই কম। এমন গ্রামও আছে, যেখানে বিত্তবান খুব বেশি একটা নেই, ফলে হাত পাতার জায়গাও রুদ্ধ বলা চলে। আর হাতেগোনা যারা শহরে কিংবা প্রবাসে আছেন তাঁরা, এসবের খুব বেশি একটা খোঁজও নেননা। যে কারণে গ্রামের এসব দরিদ্র মানুষ আর তাঁদের সন্তানেরা বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকেন ঈদের নতুন জামার জন্য। বছরে একটু ভালো খাবারের জন্য। সেটা কখনও হয়, আবার অধিকাংশ সময় হয়না।এসব অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছেন কিছু তরুণ। কোনো বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানি নয়। কিংবা ধনাঢ্য ব্যক্তিও নয়। নেই রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অভিলাস। স্রেফ মানুষের জন্য ভালোবাসা আর মানবিকবোধ থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায় দরিদ্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তরুণ রুমন মজুমদার। পেশায় ক্রিকেট কোচ ও ক্রীড়া সংগঠক। গত ৯ বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও রুমন ও তাঁর দল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দরিদ্র মানুষদের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন ঈদের নতুন কাপড়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও চা-বাগানে প্রায় শতাধিক চা-শ্রমিকের জন্য ঈদের নতুন কাপড় নিয়ে যায় দলটি। এছাড়া কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি এবং আমতৈল ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকার ৫০০ দরিদ্র মানুষদের জন্য ঈদের লুঙ্গি ও শাড়ী বিতরণ করা হয়। ঈদের আগে থেকে শুরু করে ঈদের পর টানা তিনদিন কাপড় ও খাদ্য সামগী বিতরণ করা হয়।
কথা বলে জানা যায়, নিজের খুব বেশি একটা টাকা-পয়সা নেই রুমন মজুমদারের। ঈদের জন্য নিজের জমানো টাকা আর বন্ধু, বড় ভাই, কাছের ঘনিষ্ঠ ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে সহয়তা নিয়ে নেমে পড়েন মাঠে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের কাছে পৌছে দেন ঈদের নতুন জামা-কাপড়, রোজার জন্য খাদ্য সামগ্রী কিংবা গৃহ নির্মাণের জন্য ঢেউটিন। চিকিৎসা কিংবা স্কুল কলেজে ভর্তি, বা বই কেনার জন্য টাকা সংগ্রহ করে দেয়ার চেষ্টা করেন। গত বন্যায় দেয়া হয় ত্রাণ সামগ্রী।
রুমন বলেন, ‘আমরা ছোট্ট পরিসরে অনেকটা নীরবে কাজটা শুরু করি। মাঝে আমরা মৌলভীবাজার কারাগারে দরিদ্র বন্দিদের মধ্যে ঈদের পোষাক বিতরণ করি। আর আমার এই উদ্যোগে অনেক তরুণ বড় ভাইদের সাথে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন সাংবাদিক হাসানাত কামাল। আমাদের উদ্যোগ দেখে অনেকেই স্বতঃস্ফুর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন আর্থিক সহায়তা দিয়ে। প্রতিবছরই তাঁরা সহেযাগিতা করেন। এ বছরও বাংলাদেশ ছাড়া ব্রিটেন, আমেরিকাসহ প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু, বড় ভাই ও ছোট ভাইয়েরা অর্থ পাঠিয়েছেন। অর্থসহ সার্বিকভাবে যারা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের মধ্যে আমেরিকা প্রবাসি ফয়ছল রনি, ফরহাদ সানী, বকশী মামুন, এনামুল ইসলাম, এনাম, রাফী, সোহান, ফারহান, রেজা, কামরুল ও মুহিত রনি। ইংল্যান্ড থেকে নাজমুল, দেওয়ান শরীফ, জাবেদ কোরেশী, আহাদ, রাসেল, মান্না, রাফী, মাহাবুবুর রহমান শিবলু ও নুরজাহান রহমান। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফজাল সোহেল, কাইয়ূম জাবেদ ও পলি সৈয়দ। দেশ থেকে ইফতেখার আহমদ, আলিমুজ্জামান তাসনিম, রহমান রাহেদ, আলী হোসেন, সারওয়ার মজুমদার, সেলিনা আলাউদ্দিন, মেহবুব মোর্শেদ, দেলওয়ার মজুমদার চমন, কয়ছর আহমদ, মশিউর জসীম, রাসেল আহমদ, জাহেদ চৌধুরী, সামির শিপু, রেদোয়ান রাজু, হাসান রাহাত, খোকন, হাসিব হোসেন খান বাবু, শাহরিয়ার তানিম, বাবু শিকদার, ডা. রোখসানা রাহিসহ অনান্যরা।
রুমন বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। চেষ্টা থাকবে আগামীতে আরো বড় পরিসরে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। সেক্ষেত্রে আমাদের বন্ধুদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে আশা করছি।’