আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ এমপিওভুক্তির দাবিতে মানব বন্ধনের একাংশ। ছবি: মুক্তকথা
মহিলা কলেজ এমপিওভুক্তির দাবিতে
কমলগঞ্জে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর অংশগ্রহনে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ
প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান
উন্নত শিক্ষার মান, ভাল ফলাফলসহ এমপিওভুক্তির সকল শর্ত পূরণ করেই সম্প্রতি সরকারি এমপিওভুক্তি হতে পারেনি কমলগঞ্জ উপজেলার নারী শিক্ষার একমাত্র উচ্চ বিদ্যাপীঠ আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ। গত ১৯ বছর ধরে কমলগঞ্জে নারী শিক্ষা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এমপিও ভুক্তির বাহিরে রয়েছে এ কলেজটি। পূণ:বিবেচনায় কলেজটিকে এমপিওভূক্তিকরণের দাবিতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কলেজের সামনের রাস্তার দুইধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিচালনা পরিষদ, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। শুধুমাত্র মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করলেও বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটি টানা এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এসময় রাস্তার দুই দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।
খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসি একদল পুলিশসহ ঘটনাস্থলে এসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পূন: বিবেচনার জন্য কথা বলার আশ্বাসের পর বেলা সাড়ে ১২টায় সড়ক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। পরে কলেজের পক্ষ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নির্বাচিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের (উচ্চ মাধ্যমিক স্তর) এমপিওভূক্তির আওতায় আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজকে এমপিওভূক্তি করণের জন্য কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের সভাপতিত্বে ও প্রভাষক শর্মিলা সিনহার সঞ্চালনায় মানবন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলেজ অধ্যক্ষ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন।
মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করছেন আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ। ছবি: মুক্তকথা
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমিন তরফদার, ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, আদমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভূঁইয়া, উপজেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপিকা মঞ্জুশ্রী রায়, সম্পাদক শাব্বির এলাহী, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব, মণিপুরী থিয়েটারের নির্বাহী প্রধান সুভাশীস সিনহা, কমলগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এম, এ, ওয়াহিদ রুলু, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ, যুবলীগ নেতা মোশাহিদ আলী, ইউপি সদস্য রুপেন্দ্র কুমার সিংহ, সমাজসেবক রাসেল হাসান বক্ত, শিক্ষার্থী তিশা মামুন প্রমুখ।
মাবনবন্ধন কর্মসূচি চলাকালে কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসেন। এক পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মানববন্ধনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক।
দীর্ঘ ১৯বছরেও এমপিও ভুক্ত হয়নি আব্দুল গফুর চৌধুরী মহাবিদ্যালয়। ছবি: মুক্তকথা
পূণ:বিবেচনায় কলেজটিকে এমপ্রিওভুক্তিকরণে হস্তক্ষেপ কামনা করে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারক লিপি পেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক স্মারকলিপি গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি যথাযথ কর্র্র্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্মারকলিপিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন। তিনি আরও বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজ এটি। এটির শিক্ষার মাণ ও ফলাফল খুবই ভাল। কি কারণে এটি এমপিওভুক্ত হয়নি তা তিনি বুঝতেও পারছেন না। তিনি আশাবাদী যে আগামীতে আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজটি এমপিওভুক্ত হবে।
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল ও অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিনসহ বক্তারা বলেন, ২০০০ সালে আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। এখানে মণিপুরী, খাসিয়া, চা শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও গ্রামা লের মেয়েরা পড়াশুনা করছে। ২০০২ সালে কলেজটি একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ২০০৪ সালে মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। ২০০৪ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ভেন্যু হয়েছে। এ কলেজে ১৬ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী টানা ১৯ বছর ধরে অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান করছেন। এমপিওভুক্তির নীতিমালা মেনে আবেদন করলেও গত ২৩ অক্টোবর সরকার ঘোষিত এমপিওভুক্তির তালিকায় কলেজটি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় বিনাপারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করে আসা শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ চরম হতাশায় ভেঙে পড়েন।
এ অবস্থায় কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা নিতান্তই দুরূহ হয়ে পড়ছে। যা কলেজের ভবিষ্যৎকে এক গভীর সংকটে নিপতিত করবে। বক্তারা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। বিশেষ করে নারীশিক্ষার উন্নয়নে এই সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করা হলে প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষার অগ্রগতি যেমন বাড়বে, তেমনি বাংলাদেশে নৃতাত্ত্বিক জনগগোষ্ঠীর নারীশিক্ষার ধারাও বেগবান হবে। তাই ২০১৯ – ২০২০ অর্থবছরে নির্বাচিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের (উচ্চ মাধ্যমিক স্তর) এমপিওভূক্তির আওতায় আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজকে অন্তভূক্তিকরণের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশুদৃষ্টি কামনা করেন।
|