লিখছেন শ্রীমঙ্গল থেকে সৈয়দ ছায়েদ আহমদ।। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দীর্ঘ ৫০ বছর পর রেলের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করেছে রেল বিভাগ। বুধবার সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযানে রেল ও জেলা পুলিশের শতাধিক আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় ২টি বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এতে শহরের প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ভানুগাছ সড়কের মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারী প্রকল্প, অভিজাত রেস্টুরেন্ট ‘পাঁচ ভাই’, গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম, ফার্নিচারের শোরূম, সেলুন, চা পাতার দোকান, বাসা বাড়ি, ভ্যারাইটি ষ্টোর, ফার্মেসী, হার্ডওয়্যারের দোকান, ওয়ার্কসপ, ট্রান্সপোর্ট অফিসসহ শতাধিক পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার-ঢাকা নজরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (রেল) মইনুদ্দিন আহমেদ, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা, জিআরপি শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আলমগীর হোসেন, রেলওয়ের কানুনগো ইকবাল মাহমুদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শ্রীপদ এসময় উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করেন।
শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ের জমি উদ্ধারে অভিযান। ছবি: মুক্তকথা |
এর আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এক জরুরী নোটিশের মাধ্যমে ২৭ নভেম্বরের বুধবারের মধ্যে অবৈধ্য স্থাপনা দোকান পাঠ ঘর বাড়ী নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। ওই নোটিশে যাহারা হাল নাগাদ খাজনা পরিশোধ করেন নাই, তাদের হাল নাগাদ লাইন্সেস ফ্রি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পরিশোধ করে রশিদ সংগ্রহ করার অনুরোধ করেছিল।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযানে রেলের ২৮৭ শতক জমির উপর বিভিন্ন স্থাপনা সম্পূর্ণ গুড়িয়ে রেলের এসব সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়। এসময় ভানুগাছ সড়কের উত্তর-পূর্ব দিক এক প্রকার ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়। এর আগে সকালে শহরের এই অংশের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা উচ্ছেদকালে দ্রুত মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। দোকানের যে যেভাবে পারে ভ্যান রিক্সা ট্রাকযোগে মালামাল সড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় উচ্ছেদ অভিযান দেখতে ভানুগাছ সড়কে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা ভীর করেন। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, গত ৫০ বছর ধরে অবৈধ দখলে ছিল রেলের শতকোটি টাকার ভুমি। এর আগে কয়েকদফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও উদ্ধার করা যায়নি এক ছটাক ভূমিও। বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন শ্রীমঙ্গল স্টেশন এলাকার ভানুগাছ রোডের পূর্বপাশ সংলগ্ন রূপশপুর মৌজায় জেএল নং ৬৭, খতিয়ান নং-৩, এসএ দাগ-১৭৬১’এ ২৮৭ শতক ভূমি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাংশের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর দখলদার শহরের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক এলাকায় ‘কৃষি নার্সারী প্রকল্প’র নামে ১৩৫ শতক ভূমি দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এছাড়া শহরের শতাধিক প্রভাবশালী একই দাগের ১৫২ শতক ভূমি দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন শতাধিক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সূত্র মতে, এই ১৫২ শতক ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। এতে সরকার এখাত থেকে বছরে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বি ত হচ্ছিল।
শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ের জমি উদ্ধার অভিযান। ছবি: মুক্তকথা |
একটি সুত্র জানায়, সরকারী রাজস্ব বাড়াতে ১৯৮১ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব জমিতে ১৮২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সে সময় হানিফ ও অপরাপর দখলদারদের করা একটি স্বত্ব মামলার জটিলতায় রেল বিভাগ সেসব প্লটের দখল বুঝিয়ে দিতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, দখলদাররা রেলের আইন ও সংশ্লিষ্ট শাখার এক শ্রেনীর অসৎ কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে ভূঁয়া ও জাল দলিল সৃষ্টি করে ভূমি দখলে নিতে একের পর এক স্বত্ব মামলা করে। এরই মধ্যে এসব মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক খারিজ হয়। ফলে উচ্চ আদালতের রেলের পক্ষে রায় থাকা সত্বেও দখল ধরে রাখতে সামর্থ হয়েছিল প্রভাবশালীরা।
জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারী প্রকল্পসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল বিভাগ এক অভিযান চালায়। এসময় দখলদাররা মুক্তিযোদ্ধা ব্যানার ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সামনে নিয়ে সেই অভিযানে বাঁধা দেয়। বাঁধার মূখে পড়ে রেল বিভাগ অভিযান স্থগিত করে চলে যায়।
উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে রেলের এই ভূমি উদ্ধার করে রাস্তা প্রসস্থ করা ও বাকি ভূমি লিজের আওতায় আনা হবে। ২০১৬ সালের ব্যর্থ উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে অতিতের অনেক ঘটনা আছে, আজকের এই উচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে পারবো। আর শ্রীমঙ্গল বৃট্টিশ আমল থেকেই ঐতিহ্যবাহী একটি শহর, এই উন্নয়ন রেলের জায়গাকেই ঘিরে। বৃট্টিশ আমল থেকে রেল লাইন থেকে ৫’শ ফুট পর্যন্ত জমি অধিগ্রহন করা আছে। গত প াশ বছর ধরে প্রভাবশালীরা রেলের অনেক ভূমি দখলে নিয়ে রাখে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, তারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমি কখনও ম্যানেজ হইনি। এটা আমার ধর্মে নেই।
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগান ও হাওর পাড়ের শিশুদের শিক্ষা ও সম্মানজনক জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে ‘আলোয় আলো’ প্রকল্প। আর এই কাজে অর্থায়ন করবে চাইল্ড ফান্ড কোরিয়া। স্থানীয় চার পার্টনার হিসেবে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট এ্যাফেয়ার্স- আইডিয়া, মাল্টিপারপাস সোসিও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (এম.সি.ই.ডি.এ) ও প্রচেষ্টা এর সহযোগিতায় এডুকো পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
সোমবার সকাল ১০টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ‘ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার’এ আলোয় আলো প্রকল্প অবহিতকরণ সভায় বিষয়টি জানানো হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিকা দে।
এডুকোর কান্ট্রি ডিরেক্টর জনি এম সরকারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন। এসময় বক্তব্য রাখেন এডুকো বাংলাদেশ এর হেড অফ অপারেসন্স রঞ্জন জেপি রোজারিও, আলোয় আলো প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা শরিফুল আলম, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর প্রোগ্রাম এন্ড প্ল্যানিং ডিরেক্টর জাহিদুল ইসলাম, এমসিডার প্রধান নিবার্হী তহিরুল ইসলাম মিলন, আইডিয়ার সহকারী পরিচালক নাজিম আহমেদ প্রমুখ।
আলোয় আলো প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা শরিফুল আলম বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় চা বাগান ও হাওর এলাকার শিশুদের শিক্ষা ও সম্মানজনক জীবিকা নিশ্চিত করা “আলোয় আলো” প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এখানকার ৩০টি চা বাগান ও দুইটি হাওর এলাকার প্রায় ১৯,৭৬৪ পরিবার এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এই অ লগুলোতে প্রকল্পটি মানসম্মত শিক্ষা প্রদান, অপুষ্টি দূরীকরণ, পানিবাহিত রোগ নির্গমন, শিশুর সুরক্ষা এবং সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ অন্যান্য স্থানীয় সমস্যার মোকাবেলায় কাজ করে যাবে। স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সরকার এবং চা বাগান কর্তৃপক্ষদের সাথে সহযোগ জোরদার করার মাধ্যমে প্রকল্পটি এই অংশে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা নিশ্চিত করবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে আলোয় আলো প্রকল্প অবহিতকরণ সভা। ছবি: মুক্তকথা[ |
শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ স্কাউটস এর তিনবছর (২০১৯-২০২২) মেয়াদের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে উপজেলাপরিষদ মিলনাতনে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মাহমুদুর রহমান মামুন এর সভাপতিত্বে দশম ত্রৈবার্ষিক সাধারণ সভায় এ কমিটি গঠিত হয়।
উক্ত নির্বাহী কমিটিতে পদাধিকারবলে কমিটির সভাপতি হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নজরুল ইসলাম। সহ-সভাপতি পাঁচজন হলেন- সাবেক স্কাউটস সম্পাদক সুশান্ত কুমার দে, ভুনবীর দশরথ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ঝলক কান্তি চক্রবর্তী, কাকিয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়র প্রধান শিক্ষক নোমান আহমেদ সিদ্দিকী, রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপেন্দ্র চন্দ্র দেব নাথ, সুইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পারভীন নাজ, কমিশনার(সুপারিশকৃত) ভাড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ দেব, কেষাধ্যক্ষ চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক প্রণবেশ চৌধুরী অন্তু, নির্বাচিত সম্পাদক হলেন বেগম রাছুলজান আব্দুল বারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমান বর্ধন, পদাধিকার বলে অন্যতম সদস্য হলেন-উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দীলিপ কুমার বর্ধন, অন্যতম সদস্য হলেন-উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসএম জাকিরুল হাসান, মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রুপ কমিটির সভাপতি দুইজন হলেন-ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী, বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সায়েক আহমেদ।
প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রুপ কমিটির সভাপতি দুইজন হলেন- চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহর তরফদার, নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অনিমা রানী দেবী, প্রস্তাবিত উপজেলা স্কাউটলিডার শাহ মোস্তফা জে আই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো.আবদুল মোমিন, উপজেলা কাবস্কাউটলিডার(প্রস্তাবিত) জিলাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জয়ন্ত কুমার দেব নাথ।
এর আগে দশম বার্ষিক কাউন্সিলের ত্রৈবাষিক সধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, বাংলাদেশ স্কাউস্টস এর মৌলভীবাজার জেলার কমিশনার মো.খয়রুজ্জামান শ্যামল,সম্পাদক ফয়জুর রহমান,সহকারী কমিশনার আব্দুল ওয়াহিদ,সহকারি পরিচালক আতাউর রহমান।সভায় মোট ১৬০জন কাউন্সিলর অংশ নেন।