শহীদুজ্জামান জোয়ারদার।। ৭১-এর যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে জিহাদ হিসেবে প্রচার করতে থাকে। পত্র-পত্রিকায় জিহাদের জন্যে অর্থ দানের আহবানও করা হয়। ইসলামের নিয়ম অনুসারে যুদ্ধ বন্ধীদের গনিমতের মাল হিসেবে ভোগ করা যেহেতু জায়েজ, সেহেতু তারা বাংলার নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানীদের ভাষায় বাংলার নারীদের গর্ভে তারা সাচ্চা মুসলমানের বাচ্চা জন্ম দিতে আগ্রহী। একাত্তরের নয় মাস হিন্দুদের উপরও চলে অমানবিক নির্যাতন। হিন্দু নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই ক্ষেত্রে শুধু পাকিস্তানীরা নয়, বাংলার অনেক আলেমও হিন্দু মেয়ে ধর্ষণ করা ইসলামে জায়েজ এমন ফতোয়া দেয়। গবেষণা করে অনেকে দুই লাখ নারী ধর্ষণের ঘটনার কথা বললেও বাস্তবতা হল ধর্ষণের সংখ্যা ছিল প্রায় চার লাখ। কারণ বেশির ভাগ পরিবার সম্মানহানির ভয়ে নির্যাতনের ঘটনাগুলো চেপে গেছেন।
৭১-এ বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগের চেয়ে সামান্য বেশি ছিল হিন্দু জনসংখ্যা। কিন্তু ধর্ষিতাদের মধ্যে ৪২ ভাগ ছিল হিন্দু রমণীরা। যাদের মধ্যে ৪৪ ভাগ ছিলেন অবিবাহিত নারী। অর্থাৎ; কুমারী হিন্দু নারীরাই ছিলেন ধর্ষকদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। পাকিস্তানীদের এসব কাজে সাহায্য সহযোগিতা করেছে স্থানীয় দালাল, রাজাকার ও ধর্মীয় নেতারা। তাদের মধ্যে একজন হলেন-শর্ষিণার পীর আবু সালেহ মোহাম্মদ জাফর। এছাড়া হিন্দুদের ধর্মান্তর করে মুসলমান করা হয়েছিল বহু জায়গায়। স্বরোচিষ সরকারের জরিপ থেকে দেখা যায়, বাগেরহাট জেলায় এ রকমের প্রচুর ধর্মান্তর হয়েছিল। এই ধর্মান্তরিত হিন্দুদের গরু খাইয়ে তাদের মুসলমানত্বকে পাকা করা হতো। মরে গেলে পোড়ানোর বদলে তাদের কবর দেওয়া হতো। এছাড়া হিন্দুদের মন্দিরকে মসজিদ তৈরির ঘটনা তো ছিলই। যাই হোক, আমরা শর্ষিণার পীরের বিষয়ে ফিরে যাই।
১৯৭২ সালে ৫ জানুয়ারি ‘পূর্বদেশ’ পত্রিকার রিপোর্ট;
“শর্ষিণার পীর আবু সালেহ মোহাম্মদ জাফর ধরা পড়েছেন। গত শনিবার পয়লা জানুয়ারি শর্ষিণা থেকে তাকে গ্রেফতার করে বরিশাল সদরে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ১২ই নবেম্বর ৫ শতাধিক রাজাকার, দালাল ও সাঙ্গপাঙ্গসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে তখন থেকে পীর সাহেবকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।