মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। দু’হাজার বিশ সালের সূচনায়ই সারা দুনিয়া ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে চীন দেশের উহান শহরে করোণা ভাইরাসের মহামারী রূপ দেখে। মাস যেতে না যেতেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর বিষাক্ত এ করোণা। কোন জীবাণূ বা বীজাণূর এমন ভয়ঙ্কর মানব বিধ্বংসী চেহারা বিশ্ববাসী এর আগে কখনও অবলোকন করেছে বলে ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। একমাত্র ষোঢ়শ শতাব্দীর শেষের দিকে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া “প্লেগ” রোগের মহামারীর সাথেই এই করোণা জীবাণূর তুলনা করা যায়।
করোণা মহামারীর এ দুঃসময়ে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার বহু কৃতিসন্তানকে। হারানোর এ তালিকা দিন দিনই বেড়েই চলেছে। আমরা জানিনা এর শেষ কোথায় ও কখন! সারা বিশ্বের এ দুঃসময়ে আমরা হারিয়েছি কিংবদন্তির আমাদের সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ; আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ উস্তার আলী ও সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র স্ত্রী শাহানারা আবদুল্লাহ সহ অসংখ্য রাজনীতিক, লেখক-সাংবাদিক ও জ্ঞানী-গুণীজনকে।
করোণায় আক্রান্ত বিশ্ববাসীর এ ভয়াবহ দুঃসময়ে আরো বহু দেশের মত বাংলাদেশও পারেনি তার কৃতিসন্তানদের চিরবিদায়লগ্নকে মনের মাধুরী মিশিয়ে দিলখুলে করজোড়ে প্রার্থনার ডালি সাজিয়ে বিদায় দিতে। যে দুঃখভাব, বেদনা, সন্তাপ বাস্তব আয়োজন দিয়ে প্রকাশ করা প্রয়োজন ছিল তা পারিনি আমরা। শুধু কথার ফুলঝুড়ি ছাড়া গোটা বিশ্বের এ দুঃসময়ে আমাদের আর কি-ই-বা করার আছে।
জাতির সুসন্তানদের চিরবিদায়ে আমাদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী তার শোকবার্তায় প্রয়াত এ সকল কীর্তিমানদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
এন্ড্রু কিশোরের চিরবিদায় নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এন্ড্রু কিশোর বাংলা সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সুদীর্ঘকাল তিনি বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে নিজেকে পরিচিত করেছেন। শুধু চলচ্চিত্রের গানেই নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি নজরুলগীতি, রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন। সকল শ্রেণির শ্রোতাদের নিকট এন্ড্রু কিশোরের গান ছিলো সমান জনপ্রিয়। বাংলা গানের অমর শিল্পীর এই মহাপ্রয়ান বাংলাদেশের সংগীত জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হল। বাংলাদেশের সংগীতেপ্রেমী মানুষ এ মহান শিল্পীকে দীর্ঘদিন স্মরণে রাখবে।”
উল্লেখ্য, আটবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এই গুনী শিল্পী দীর্ঘদিন মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে আজ ০৬ জুলাই ২০২০ সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক ও কণ্ঠযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, “সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতির জগতে কামাল লোহানী একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ছায়ানট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সহ বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। আজীবন দেশ ও মানুষের সেবায় নিবেদিত এ মহান ব্যক্তির মৃত্যুতে দেশ এক কৃতি সন্তানকে হারালো। তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে অনেককাল বেঁচে থাকবেন।
উল্লেখ্য, আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী(৮৬) গত ২০ জুন ২০২০ সকাল আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করে মন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ গত শনিবার ১৩জুন রাত ১১.৪৫ সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন(ইন্নালিল্লাহি — রাজিউন)।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এর মৃত্যুতে মন্ত্রী বলেন, “মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী। আজীবন দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এ জনদরদী মহান রাজনীতিবিদ। তাঁর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জনসেবা, দেশ ও সমাজের উন্নয়নে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।”
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম মোঃ মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম(৭২) গত শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ উস্তার আলীর মৃত্যুতে দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে দেশমাতৃকার লড়াইয়ে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে মরহুম উস্তার আলীর অবদান জাতি কৃতজ্ঞতাভরে আজীবন স্মরণে রাখবে, প্রবাসে বসবাস করেও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে তার কর্মকাণ্ড আওয়ামী পরিবার শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
মন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালে লন্ডনে তিনি নিজবাসায় ইন্তেকাল করেন।(ইন্নালিল্লাহি — রাজিউন)।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক, সাবেক চিফ হুইপ ও বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র স্ত্রী এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র মাতা শাহানারা আবদুল্লাহ’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, “শাহানারা আবদুল্লাহ(৭২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতের প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বিগত রবিবার(০৭ জুন) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সূত্র: সংবাদবিজ্ঞপ্তি, দীপংকর বর, সিনিয়র তথ্য অফিসার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
জনদরদী জাতির কৃতিসন্তান মন্ত্রী শাহাব উদ্দীনের সাথে সুর মিলিয়ে আমরাও ক্ষমা চেয়ে বলতে চাই- হে জাতির ভুমি সন্তানগন তোমাদের বিয়োগ ব্যথায় আমরা শুধু যে ব্যথিত তা নয়, তোমাদের শূণ্যস্থান কোনকালেই আর পূরণ করা সম্ভব হবে না। তোমাদের বিদায়লগ্নে মহা পবিত্র শ্রষ্টার উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের আকুল আবেদন মহান শ্রষ্টা নিজ পবিত্রতায় তোমাদের শান্তির শ্রেষ্ট চাদরে ঢাকা ফুলসজ্জ্বায় স্থান দেবেন!