আগামী থেকে সপ্তাহে একদিন “দেখি দর্পণে নিজ কায়া” শিরোনামে লিখবেন-হারুনূর রশীদ।।
এইতো সেদিনের কথা। ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাস। ভোর হতে না হতেই সরকারী বিদ্যালয়ের মাঠে দলে দলে মানুষ। মানুষ আর মানুষ। অনেকটা বলতে গেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হঠাৎ কি এমন হলো? সামনে বিশাল মাঠে বিশালাকৃতির রঙ্গিন তাবু। লোকে লোকারণ্য! অন্যকিছু নয়, মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলন মেলা! শতবর্ষপূর্তি মেলা। অর্থাৎ কি-না বিদ্যালয়টির স্থাপনার একশত বছর হয়েছে। শতবর্ষ পূর্বে এমনি এক দিনে স্থাপিত হয়েছিল বিদ্যালয়টি।
সকল ছবি তুলেছেন: হারুনূর রশীদ |
বিগত ১০০ বছরে সারা বিশ্বের কতই না পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনের সে হাওয়া এ বিদ্যালয়টির গায়েও মৃদু মৃদু দোলা লাগিয়েছে। সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনি দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পর ঘটে যাওয়া অজ্ঞাত ভয়ঙ্কর বোমা দূর্ঘটনা। কেনো, কিভাবে, কাদের দ্বারা এমন অপকর্মটি সংগঠিত হয়েছিল তার কোন সুরাহা আজো হয়নি। মৌলভীবাজারের মানুষ তথা সারা দেশের মানুষ জানতে পারেনি কেমন করে কোন অবহেলায় কিংবা কোন দূরাত্মাদের অপরাধের কারণে দেশমায়ের ২৪জন বীরমুক্তিযোদ্ধা অকালে ঝড়ে গেলো। স্কুল গৃহ নির্মাণের অতীতের সকল স্মৃতি দুমড়ে-মোচড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে ভয়ঙ্কর সেই বোমা বিস্ফোরণ! প্রাচীন নির্মাণের স্মৃতি ধরে রাখা যে একটিমাত্র গৃহ ছিল তাও দালান আধুনিকরণের নামে ভেঙ্গে দিয়ে সেই সাবেকি নমুনার ঠিকাদারীর নামে অর্থ আত্মসাৎই শেষমেষ জয়দর্পে বিজয়ী হয়েছে।
হোক সে কাঁচা মাটির ঘর কিংবা টিনের চালার ঘর, তবুও সেটি পুরোনো একটি স্থাপত্য! হারিয়ে যাওয়া অতীতের বিস্মৃতপ্রায় স্মৃতি সে ঘর দেখার প্রথম নজরেই টগবগিয়ে ফুটে উঠতো দর্শক পথিকজনের চোখে। বিদ্যালয়টির অতীতের সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য বুড়ো হয়ে যাওয়া মানুষজনসহ নতুন প্রজন্মের কার না মনে আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দিতো। অতীত স্মৃতির অতুলনীয় সে দেখা থেকে নতুনদের বঞ্চিত করা হয়েছে শুধুমাত্র অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার তথাকথিত মহান উদ্দেশ্যে। হাজারো স্বার্থক শিক্ষক-ছাত্রসহ অসংখ্য মানুষের বাল্যের স্মৃতি বিজড়িত সেই একখানা ঘরকে ভেঙ্গে দিয়ে কি এমন দেশোদ্ধার করা হয়েছে নতুন প্রজন্ম এমন প্রশ্ন করলে কেউ কি তার জবাব দিতে পারবেন? পারবেন না!
সবকিছুতেই অর্থ কামানোর চিন্তা একমাত্র মূর্খেরাই করতে পারে। টিনের চালা দেয়া সে গৃহটিকে হুবহু রেখে তারই উপরেও দালান তোলা যেতো। সে নমুনার কাজ করতে প্রথমতঃ দেশপ্রেমের প্রয়োজন, প্রয়োজন শিক্ষা, সততা ও নিষ্ঠার। সেরকমটি যে অনুপস্থিত ছিল আমাদের ছোট্ট এই শহরের সমাজে আজ তা জলের মত পরিষ্কার। শুধু কি তাই, কথা প্রসঙ্গে বলতে হয় আমাদের ৬/৭শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য ‘খোজার মসজিদ’কে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ টাকা কামানোর লক্ষ্যে! আমাদের এ দেশেরই বহু যায়গায় এমন ধরনের বহু ঘর-দালানকে নিজেদের ঐতিহ্য মনে করে রক্ষা করে রাখা হয়েছে। অথচ কি অদ্ভুত এক মানসিকতায় ভোগেন আমাদের এখানকার গুণীজন! কেউ কোন নমুনায়ই টু-শব্দটিও করেননি। যার কোন জবাব নেই।
বর্তমানে প্রাচীন এই সরকারী স্কুলটির সবেধন নিলমনি প্রশাসনিক ভবন যা আছে তাও হঠাৎ কোনদিন দেখা যাবে পুরোনো হয়ে গেছে খেতাব লাগিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হবে ওই আগের চিন্তা থেকেই। কেউ চিন্তাই হয়তো করবে না যে এ দালানটি অটুট রেখেও এর উপরেই বহুতল ভবন নির্মাণ আধুনিক জগতে কোন জঠিল বিষয়ই নয়।
পতাকা উত্তোলন। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এ স্কুল থেকে ১৯৬৩-৬৫-৬৭সনের প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের কয়েকজন। |
পতাকা উত্তোলন। |