শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল চায়ের জেলাকে পরিণত করবে শিল্পকেন্দ্রে
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে থাকা জলমহালকে দৃষ্টিনন্দন লেকে পরিণত করা হবে।
বিশ্বস্তভাবে জানা গেছে ২০২৪ সালের মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠানই উৎপাদনে যেতে পারবে।
প্রায় ৪৪ হাজার লোকের কর্ম সংস্থান হবে।
শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল ও প্রাচীন আমলের নদীঘাট শেরপুর। সে প্রায় পয়ষস্টি কিংবা ছয়ষস্টি বছর আগের কথা। আমি তখন অনেক অনেক ছোট। বড়মামা আব্দুর রহিম(জিলামিয়া)এর সাথে তার শ্বশুর বাড়ী রেঙ্গা গ্রামে যাবো। আগের দিন থেকে মামাবাড়ীতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তার যাত্রা পথের কিছু খাবার তৈরী করেতো দিতেই হবে। কারণ সে প্রায় পুরো একদিনের রাস্তা। সকালে যাত্রা শুরু না হলে অনেক রাত হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। আগের দিনই শহর থেকে আসার সময় মামা নিজেই সিলেটের টিকিট নিয়ে এসেছেন। পরের দিন ভোরে যথারীতি নিয়মানুযায়ী গাড়ি বাড়ীর সামনে এসে থামলো। একবার তার শিঙ্গা বাজালো। বাড়ীর সকলেই জানতেন গাড়ী এসে আওয়াজ দেবে। কিছুটা সময় থামবে যাত্রীর পুটলা-পুটলি যদি থাকে তবে গাড়ীতে তোলে নেয়ার জন্য। গাড়ীর সাথে চালক ছাড়াও একজন সহযোগী কাজ করেন। তার কাজই হলো যাত্রী উঠানো নামানোর তদারকি করা। বাড়ীর ছেলেবুড়ো সকলে মিলে বাড়ীর পুকুরের কাছে এসে আমাদের ঘটা করে বিদায় দিলেন। আজকের দিনে যেভাবে বিদেশ যাত্রা হয়।
আমরা রওয়ানা দিলাম। দীর্ঘ পাথর বিছানো পথ ধরে থানার বাজার, আখাইলকুড়া, সাধুহাটি, কাজীর বাজার, জোগনিয়া, বেকামুড়া, সরকার বাজার পাড়ি দিয়ে অবশেষে আমরা শেরপুরে গিয়ে পৌঁছালাম। আমার জীবনে এই প্রথম শেরপুর নদীঘাট দেখা। মনের সকল আবেদন মিশিয়ে অবাক বিস্ময়ভরা মনে তন্ময় হয়ে দেখছিলাম জুড়িন্দা নায়ের গাড়ী নিয়ে পারাপার। যে নায়ে গাড়ী পারাপার করে সে নায়ের স্থানীয় নাম ‘জুড়িন্দা নাও’। সেকি অবাক কাণ্ড! নায়ের উপর উঠে গেছে গাড়ী? গাড়ীও নায়ে চড়তে পারে? মনে মনে অবাক জিজ্ঞাসা! যা আমার কল্পনায়ও কোনদিন ছিল না।
মৌলভীবাজার জেলার সরাসরি উত্তরে কিছুটা পশ্চিমে হেলে কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত বহু প্রাচীন নদীঘাট সেই শেরপুরের ভাগ্যের চাকা এবার ঘুরতে শুরু করেছে।
এখানেই গড়ে উঠছে সারা সিলেট বিভাগের প্রানভ্রমরা মৌলভীবাজারের গৌরব ‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’। এই শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে উঠার নির্মাণকাজ সেই কবে ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে, এখনও চলছে। বেশ আগেই কারখানার জন্য বরাদ্দকৃত সব জমি মোট ৬টি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ৩৫২ একর জমিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে।
৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ২২৮.৬০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যেখানে ১৭টি শিল্প কলকারখানা নির্মাণ করা হবে। বাকি জমিতে দৃষ্টিনন্দন জলাধার তৈরি হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে সরকারি উদ্যোগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদ্বোধনী কথায় নিজেই বলেছেন যে, “শ্রীহট্ট আর্থনৈতিক অঞ্চল” এ নামটি তারই পছন্দের মনোনীত নাম।
৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৮১৮.১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে ১১ হাজার ৮৩ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে জানা গেছে।
এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জমি পেয়েছে ডিবিএল গ্রুপ। তারা পেয়েছে ১৬৭.৬ একর জমি, যেখানে এই গ্রুপ ১০টি কারখানা করবে। এ ছাড়া জমি পেয়েছে আবদুল মোনেম গ্রুপ, আয়েশা ক্লথিং কোম্পানি লিমিটেড(পলমল গ্রুপ), আসওয়াদ কম্পোজিট মিলস লিমিটেড(পলমল গ্রুপ), গ্রেট ওয়াল সিরামিকস লিমিটেড ও ডাবল গ্লেজিং লিমিটেড।
এসব প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল, সিরামিক, নীট ফেব্রিক্স, ডাবল গ্লেজিং কাচ, ফসেট পণ্য উৎপাদিত হবে । পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে ৪৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের আশা করছে বেজা।
ডিবিএল অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকছে টেক্সটাইল ও সিরামিক শিল্পের ১০টি ইউনিট। ইউনিটগুলো হলো জিন্নাত টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, স্পিনিং ইউনিট, রিসাইকেল পলিস্টার ইউনিট, সিরামিক টাইলস ইউনিট, স্যানিটারি ওয়ার ইউনিট, সিরামিক ফ্রিট ইউনিট, ফ্লোরাল গ্লাস ইউনিট, গ্লাস প্রসেসিং ইউনিট, ড্রাই মর্টার ইউনিট, ফসেট ইউনিট। এখানে প্রাথমিকভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ৫ হাজার ৬৩০ জনের।
বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়ে গেছে। তারা কাজও শুরু করে দিয়েছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে জলমহল রয়েছে, যেটাকে আমরা উন্নত লেকে তৈরি করব। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক জোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেজা চায় সবার সহযোগিতা নিয়ে পরিকল্পিত উন্নয়ন হোক।’
ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. এ. জব্বার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্বমানের অবকাঠামোর পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্যমাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এই-
ডিবিএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।
আগামী বছর তারা এখানে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারবেন এবং সব কারখানাই ৫ বছরের মধ্যে তৈরি করে ফেলা হবে বলে তিনি জোর দিয়েই বলেন।
|